একক কমিটির পর সভাপতির ডিগবাজি

রাজনীতি

স্বদেশবাণী ডেস্ক: সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দ্বিমত করে গত মাসে অনুমোদনের জন্য এককভাবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দিয়েছিলেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লাহ। ওই কমিটিতে হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে প্রায় ৩৩ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু দুই সপ্তাহ না-যেতেই জেলা কমিটি নিয়ে আবার ডিগবাজি দিয়েছেন সভাপতি। সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারার সঙ্গে মিলে সংশোধিত আকারে ফের আরেকটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছেন গত ২ জানুয়ারি।

তবে নভেম্বরে জমা দেওয়া বিতর্কিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে এক/দুটি পদে পরিবর্তন এনে ওই কমিটি-ই নতুন করে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে ফের অভিযোগ দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৮ ডিসেম্বর কাউন্সিলে মেরাজ উদ্দিনকে সভাপতি ও আব্দুল ওয়াদুদ সাধারণ সম্পাদকসহ চার সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু গত এক বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়নি।

জামায়াত-বিএনপি থেকে আসাদের কমিটিতে পদ দেওয়া-না-দেওয়া নিয়ে এক বছর ধরে বিরোধ চলছিল। অভিযোগ রয়েছে জেলার কয়েকজন এমপি নিজেদের অনুগত হাইব্রিড ও জামায়াত-বিএনপি থেকে আসাদের কমিটিতে পদ পাইয়ে দিতে শুরু থেকেই তৎপর। শেষ পর্যন্ত হাইব্রিডদের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিভিন্ন পদ দেওয়াও হয়েছে।

জানা যায়, গত ১৫ নভেম্বর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে ৭৪ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু কমিটিতে প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীদের প্রায় ৪০টি পদ দেওয়ায় একাধিক অভিযোগ কেন্দ্রে জমা পড়ে।

ফলে গত ৩ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী জেলা কমিটিকে অনুমোদন না দিয়ে ফেরত দেন। কমিটি বিরোধ নিষ্পত্তিতে ৫ সদস্যের একটি ট্রাইব্যুনালও করে দেন দলীয় প্রধান।

এদিকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সভাপতি মেরাজ উদ্দিন প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির ৩৩ পদে প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাদের নাম প্রস্তাব করে একক কমিটি কেন্দ্রে জমা দেন। তবে হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীরা হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। তারা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতাকে ম্যানেজ করে সভাপতির ওপর চাপ তৈরি করে এককভাবে প্রস্তাবিত কমিটি প্রত্যাহারের জন্য।

শেষ পর্যন্ত সভাপতি তার একক কমিটি প্রত্যাহার করে গত ২ জানুয়ারি গত নভেম্বরে জমা দেওয়া প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আবার স্বাক্ষর দেন। ওইদিনই তা কেন্দ্রে জমা দেন। তবে নভেম্বরে জমা দেওয়া কমিটির দু-একটি পদে বদল আনা হলেও অধিকাংশ পদেই হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীরাই থাকছেন বলে জানা গেছে।

রাজশাহীর একজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, কেন্দ্রের একজন নেতা অজানা কারণে হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। ওই নেতা হাইব্রিডদের পক্ষ হয়ে সভাপতিকে ভয় দেখিয়েছেন-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সমঝোতা না করলে কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে। পরে সভাপতি ডিগবাজি দেন।

অভিযোগ রয়েছে, এর আগেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কমিটিতে অনেক বিতর্কিত ও হাইব্রিডকে পদ দিতে এই কেন্দ্রীয় নেতা প্রধান ভূমিকা পালন করেন যা ত্যাগী নেতাকর্মীদের ব্যাপক ক্ষোভের কারণ হয়েছে।

একক কমিটি দাখিলের মাত্র দুই সপ্তাহ পর আবার সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সমঝোতা করে সেই বিতর্কিত কমিটিতে সায় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন বলেন, নবীন-প্রবীণের সম্মিলন ঘটিয়ে পুনরায় সংশোধিত আকারে আরেকটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করি, এবার কেউ আর অভিযোগ করতে পারবেন না।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *