ইসি গঠনে ‘সর্বদলীয়’ উদ্যোগ বিএনপির

রাজনীতি

স্বদেশবাণী ডেস্ক: কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। এরই মধ্যে নতুন ইসি গঠনের লক্ষ্যে নানা ‘কৌশল’ নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি।

এ ইস্যুতে সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে ‘সর্বদলীয়’ উদ্যোগের কথা ভাবছে দলটি। ইতোমধ্যে কয়েকটি বাম দলের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছে। বর্তমান ইসির পদত্যাগের দাবিতে মাঠে থাকার পাশাপাশি বিরোধী দলগুলো নিয়ে ঐক্য গড়ার চেষ্টা চলছে। তা সফল হলে সব দল মিলে নতুন ইসি গঠনের জন্য একটি নামের তালিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনার হিসাবে যোগ্য ব্যক্তিদের খোঁজও শুরু করেছে।

বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারকের কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, বর্তমান ইসি গঠনের আগে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে এবারও হয়তো তাই হবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ, সার্চ কমিটি গঠন, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নির্বাচন কমিশনার হিসাবে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম আহ্বান- এসব নতুন ইসি গঠনের ক্ষেত্রেও করা হবে। আর এ প্রক্রিয়া ধরে নিয়েই বিএনপি এগোচ্ছে।

তবে বিরোধী সব দল মিলে নির্বাচন কমিশনার হিসাবে যোগ্য ব্যক্তিদের নামের একটি তালিকা দেয়ার বিষয়ে কথাবার্তা চলছে। কয়েকটি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, তারাও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। তবে এ উদ্যোগ প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। বিএনপির মূলত চেষ্টা থাকবে বিরোধী সব দলকে এ ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ করে একসঙ্গে কাজ করা। সে উদ্যোগই দল থেকে নেয়া হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া যখন শুরু হবে তখন এ ব্যাপারে বলার সময় হবে। তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশন যে পুরোপুরি ব্যর্থ তা ক্ষমতাসীন দল ছাড়া অন্য সব রাজনৈতিক দল বলছে। তাদের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও কর্মসূচি পালন শুরু করে। এ ধরনের নির্বাচন কমিশন দেশের জনগণ আর দেখতে চায় না।

তিনি বলেন, অযোগ্যতার কারণে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তাদের সেই অভিজ্ঞতা নেই যে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করবে। জাতীয় নির্বাচন গেছে, এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো একইভাবে তারা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। যদি ন্যূনতম কোনো লজ্জা থাকে, তাদের এখনই পদত্যাগ করা উচিত। অন্যথায় এ দেশের মানুষ তাদের সরে যেতে বাধ্য করবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সংবিধানসম্মত নির্বাচন সর্বদলীয় মতের ভিত্তিতে হওয়া উচিত। নির্বাচন কমিশনের স্টেকহোল্ডার মূলত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করে বিএনপি যদি সম্মিলিত কোনো নাম প্রস্তাব করে বা সে প্রস্তাবের ভিত্তিতে হয় তাহলে এ ধরনের প্রক্রিয়া গণতন্ত্রের জন্য একটা শক্ত পদক্ষেপ হবে। এবং সেখানে সংবিধান সমুন্নত রাখার জন্য তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারবে।

তিনি বলেন, বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার তো রাজনৈতিক নেতার মতো কথা বলেন। এ কমিশন কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু করতে পারেনি। পুরোপুরি ব্যর্থ এ কমিশন। এ রকমের অযোগ্যদের দিয়ে আবারও যাতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা না হয় সেজন্য সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। বিএনপি সে চেষ্টাই করছে।

বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন ইসি গঠনের প্রক্রিয়া অন্তত দেড় থেকে ২ মাস আগে শুরু হবে। দলের কাছে এ ইস্যুটি এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির কয়েকটি সভায়ও আলোচনা হয়েছে, নেয়া হয়েছে কিছু পরিকল্পনা। নির্বাচন কমিশনার হিসাবে যোগ্য ব্যক্তিদের ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ ও নির্বাচনে ইভিএম বাতিলের দাবিতে মাঠে থাকবে বিএনপি। এ ইস্যুতে সরকারকে চাপে রাখতেই মূলত এ সিদ্ধান্ত দলটির। ইতোমধ্যে সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনারদের পদত্যাগের দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছে। এদিন ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা ও মহানগরেও মানববন্ধন করা হয়। আগামী দিনে ইসির পদত্যাগের দাবিতে দলটি ধাপে ধাপে আরও কর্মসূচি দেবে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, এখন ভোটের বিষয়ে জনগণের কোনো আগ্রহই নেই। নির্বাচন ব্যবস্থাটাই এ কমিশন ধ্বংস করে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য আন্দোলনের মাধ্যমে হলেও নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। আমরা চাই এমন একটি কমিশন যারা সাহসিকতার সঙ্গে একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, যাতে ভোটের অধিকার জনগণ ফিরে পায়। এজন্য সব রাজনৈতিক দলকে একত্রিত হয়ে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। আশা করি আমরা সফল হব।

বর্তমান ইসি গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেন। অধিকাংশ দলের সুপারিশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ইসি গঠনের সুপারিশ তৈরির জন্য ওই বছর ২৫ জানুয়ারি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে দেন।

১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য ন্যূনপক্ষে একজন নারীসহ ১০ জনের নাম সুপারিশ করার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয় সার্চ কমিটিকে। এ কমিটি দুই ধাপে ১৬ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের পরামর্শ শোনেন।

পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নির্বাচন কমিশনার হিসাবে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম আহ্বান করেন। দলগুলোও নাম প্রস্তাব করে। সেখান থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি ১০ জনের নাম সুপারিশ করেন। তাদের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি পাঁচজনকে নিয়ে নতুন ইসি গঠন করেন। ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তারা শপথ নেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *