আওয়ামী লীগের অর্ধেকের কম ভোট বিএনপির

রাজনীতি

স্বদেশবাণী ডেস্ক: তৃতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের তুলনায় অর্ধেকের কম ভোট পেয়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা। শনিবার অনুষ্ঠিত কিশোরগঞ্জসহ ৬১টি পৌরসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা পেয়েছেন আট লাখ ৩১ হাজার ৩৬৯ ভোট; যা মেয়র পদে পড়া ভোটের ৬১ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

তৃতীয় ধাপের মেয়র পদের ফলাফল বিশ্লেষণে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এতে আরও দেখা গেছে, এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত তিন ধাপের মধ্যে এ ধাপে সবচেয়ে বেশি হারে ভোট পড়েছে। এ ধাপে ভোট পড়ার হার ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। এবার সব পৌরসভায় কাগজের ব্যালটে ভোট নেওয়া হয়। এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ২৪ পৌরসভা নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬৫ দশমিক ২৫ ভাগ। ওই ধাপে সব পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হয়। দ্বিতীয় ধাপে গত ১৬ জানুয়ারি ২৬টিতে ইভিএম ও ৩০টিতে কাগজের ব্যালটে ভোট হয়। ওই ধাপে গড়ে ৬১ দশমিক ৯২ শতাংশ ভোট পড়ে।

বিক্ষিপ্ত সহিংসতা, কেন্দ্র দখল ও ভোট বর্জনের মধ্যে তৃতীয় ধাপে ৬১ পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভায় মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সেখানে ভোট হয়নি। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পৌরসভায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হন। এ দুটি পৌরসভায় শুধু কাউন্সিলর পদে ভোট হয়।

এদিন দ্বিতীয় ধাপে স্থগিত থাকা কিশোরগঞ্জ পৌরসভায়ও ভোট হয়। কিশোরগঞ্জ ও লাকসামসহ মোট ৬৪টি পৌরসভার মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৭টিতে, বিএনপি ৩টিতে ও ১৪টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করেন। গত তিন ধাপের মধ্যে এ ধাপে সর্বোচ্চসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী জয় পেয়েছেন। এর আগে প্রথম ধাপে তিনজন ও দ্বিতীয় ধাপে আটজন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হন।

ফল বিশ্লেষণে আরও দেখা গেছে, তৃতীয় ধাপে মেয়র পদে ভোট হওয়া ৬১টি পৌরসভায় মোট ভোটার ছিলেন ১৯ লাখ আট হাজার ৬১৫ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ১৬টি। ভোট পড়ার হার ৭০ দশমিক ৪২ শতাংশ। এ ধাপে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা আট লাখ ৩১ হাজার ৩৬৯ ভোট পেয়েছেন; যা প্রদত্ত ভোটের ৬১ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

আওয়ামী লীগের দুজন মেয়র প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। পৌরসভা দুটি হচ্ছে জলঢাকা ও জকিগঞ্জ। অপরদিকে ভোট হওয়া ৬১টির মধ্যে খুলনার পাইকগাছা পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী ছিল না। ৬০টি পৌরসভায় দলটির প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এতে তারা তিন লাখ ৯৯ হাজার ৯১১ ভোট পান; যা প্রদত্ত ভোটের ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। দলটির ২৭ জন মেয়র প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন।

এ ধাপে সর্বোচ্চ ৯২ দশমিক ১৪ ভোট পড়ে নওগাঁর ধামইরহাট পৌরসভায়। এ পৌরসভায় ১২ হাজার ৬৪০ ভোটের মধ্যে ১১ হাজার ৬৪৬ ভোট পড়ে। আওয়ামী লীগের মো. আমিনুর রহমান সাত হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মো. মাহবুবুর রহমান তিন হাজার ৪৯ ভোট পান। অপরদিকে মৌলভীবাজার সদর পৌরসভায় সর্বনিম্ন ৪১ দশমিক ৮৭ শতাংশ ভোট পড়ে। এ পৌরসভায় ৪৩ হাজার ৪৪৬ জনের মধ্যে ১৮ হাজার ১৯০টি ভোট পড়ে। এতে আওয়ামী লীগের মো. ফজলুর রহমান ১৩ হাজার ৭০০ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মো. ওলিউর রহমান পেয়েছেন তিন হাজার ৭৩২ ভোট।

বিএনপির প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন যেসব পৌরসভায় : ২৭টি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন। পৌরসভাগুলো হচ্ছে : রাজশাহীর কেশরহাট, নাটোরের সিংড়া, পাবনা সদর, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ডু, যশোরের মনিরামপুর, নড়াইলের কালিয়া, সাতক্ষীরার কলারোয়া, বরগুনা সদর ও পাথরঘাটা।

আরও রয়েছে ভোলার বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান, বরিশালের গৌরনদী, ঝালকাঠির নলছিটি, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি, টাঙ্গাইলের সখীপুর ও মধুপুর, জামালপুরের সরিষাবাড়ী, ময়মনসিংহের গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ সদর, শরীয়তপুরের নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ, জাজিরা, সিলেটের জকিগঞ্জ, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, ফেনী সদর এবং লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *