সাদাতের অর্জনে আনন্দে ভাসছে নড়াইলবাসী

সারাদেশ

স্বদেশবাণী ডেস্ক: শিশুদের নোবেল খ্যাত আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার পেয়েছে নড়াইলের কিশোর সাদাত রহমান। আর এতে করেই আনন্দে ভাসছে  জেলাবাসী। তার সাফল্য কামনায় দোয়া ও শুভকামনা জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।

গত শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) নেদারল্যান্ডসে সাদাত রহমানকে নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই ভারচুয়ালিভাবে ‘আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার’ তুলে দেন। পুরস্কারের সঙ্গে এক লাখ ইউরো পাচ্ছেন সাদাত, যে অর্থ তার এ কাজে ব্যয় করতে পারবে। নেদারল্যান্ডসে সাদাতের সঙ্গে তার বাবা রয়েছেন।

‘সাইবার অপরাধ’ থেকে শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে বিশ্বমঞ্চের তালিকাতে যুক্ত হয়েছেন ১৭ বছর বয়সী এই কিশোর। বন্ধুদের সহযোগিতায় ‘সাইবার টিনস’ মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে ‘সাইবার অপরাধ’ থেকে শিশুদের সুরক্ষায় ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর থেকে কাজ করে যাচ্ছে সাদাত রহমান।

পুরস্কার লাভের পর সাদাত রহমান তার প্রতিক্রিয়া বলেন, ‘এ পুরস্কার বাংলাদেশি হিসেবে আমাকে গর্বিত করেছে।’

‘সাইবার টিনস’ এর হেড অব ক্যাম্পেইন শফিকুল ইসলাম জানান, ‘সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়ে ১৫ বছর বয়সী পিরোজপুরের রুকাইয়া রূপা নামে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বিষয়টি তাদের মনে বেশ নাড়া নেয়। সেই থেকে ‘সাইবার টিনস’ অ্যাপ তৈরির উদ্যোগ নেয় সাদাত রহমানসহ তার বন্ধুরা। বর্তমানে এই টিমের সদস্য সংখ্যা ১০ জন। এই অ্যাপের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীরা জানতে পারে কিভাবে ইন্টারনেট দুনিয়ায় তারা নিরাপদ থাকবে এবং এ সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হলে তার সমাধান পাবে।’

তিনি বলেন, ‘সাদাতের এই অ্যাপ দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়ায় ইতোমধ্যে এক হাজারের বেশি কিশোর-কিশোরী এটি ব্যবহার করেছে। আটজন সাইবার অপরাধী আটক হয়েছে। ২৫০ জনের বেশি কিশোরী এই অ্যাপসের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান পেয়েছে।’

নড়াইল সরকারি মহিলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মৌসুমি লিজা বলেন, ‘সাদাত দীর্ঘদিন ধরে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। তার মাধ্যমে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার অনেক ছাত্রী এবং সাধারণ মেয়েরা ইভটিজিং বিষয়ে উপকার পেয়েছেন। অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে।’

স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মির্জা গালিব সতেজ বলেন, ‘আমরা সাদাত রহমানের সাফল্য কামনা করি। নড়াইলবাসী তার সঙ্গে আছেন।’

নড়াইলের আব্দুল হাই সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মল্লিক বলেন, ‘সাদাত আমাদের কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। তার এই পুরস্কার প্রাপ্তিতে আমরা অনেক আনন্দিত।’

এদিকে ‘সাইবার অপরাধ’ থেকে শিশুদের সুরক্ষার জন্য সাদাত রহমান তার সহযোদ্ধাদের পাশাপাশি সবসময় জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা পেয়েছে।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সাদাতের চিন্তা-ভাবনাগুলো আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছি। এর মাধ্যমে আমরা বেশ কিছু অপরাধীকে ধরেছি, মামলা করেছি। তার কাজের অংশীদার আমরাও। পুলিশ সব সময় সহযোগিতা করে আসছে।’

জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, ‘সাদাত রহমান বাংলাদেশের জন্য যে পুরষ্কার অর্জন করেছে, আমরা শুরু থেকে সব সময় তার পাশে ছিলাম। এই পুরস্কারের জন্য যে ফরমটি পূরণ করতে হয়েছে, সেটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আমরা করে দিয়েছি। এছাড়া ‘সাইবার টিনস’ অ্যাপসটি উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাকে শুরু থেকেই সহযোগিতা করেছি।’

পারিবারিক ও বন্ধুদের সূত্রে জানা যায়, সাদাত রহমানের বাড়ি মাগুরা জেলা সদরের আলোকদিয়া গ্রামে। তার বাবা শাখাওয়াত হোসেন, মা মলিনা বেগম। তার বাবা এক সময় নড়াইল জেলা ডাকঘরের প্রধান কর্মকর্তা ছিলেন। বর্তমানে কুষ্টিয়া ডাকঘরে কর্মরত। সাদাত রহমান নবম শ্রেণি থেকে নড়াইলে পড়ালেখা করছে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সাদাত রহমান বর্তমানে নড়াইলের আব্দুল হাই সিটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী।

আয়োজক সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে রোমে অনুষ্ঠিত নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীদের এক শীর্ষ সম্মেলনে ‘আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার’ পুরস্কার চালু করে ‘কিডস-রাইটস’ নামের এক সংগঠন। শিশুদের অধিকার উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় অসাধারণ অবদানের জন্য প্রতি বছর এই পুরস্কার দেওয়া হয়। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা এ পুরস্কারের জন্য আবেদন করতে পারেন।

আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের জন্য সাদাতের সঙ্গে চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পাওয়া অন্য দুই প্রতিযোগী ছিল-মেক্সিকোর ইভান্না ওরতেজা সেরেট এবং আয়ারল্যান্ডের সিয়েনা ক্যাস্টেলন। এই পুরস্কারের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত আর্চ বিশপ ডেসমন্ড টুটু গত ২৯ অক্টোবর ওই তিন প্রতিযোগীর নাম ঘোষণা করেন।

কিডস রাইটসের বিশেষজ্ঞ কমিটি ৪২টি দেশের ১৪২ জন প্রতিযোগীর মধ্যে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত হয় সাদাত রহমানের নাম।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *