৪৮ বছরেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি গোলাম মোস্তফা

সারাদেশ

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: ‘দেড় বছরের শিশু কন্যা ও স্ত্রীকে রেখে দেশ স্বাধীনের সংগ্রামে অংশ নিই। ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে সুন্দরবন অঞ্চলে মেজর জিয়াউদ্দীনের নেতৃত্বে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাইনি। ভাতা বা সুযোগ সুবিধা নয়, শুধু মুক্তিবোদ্ধার সম্মানটুকু চাই’-কথাগুলো বলছিলেন বাগেরহাট শহরের সরুই এলাকার রাজ মিস্ত্রী গোলাম মোস্তফা মোল্লা। যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্মুখে থেকে লড়েছেন দেশের জন্য।

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়ার কথা স্মৃতিচারণ করতে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন গোলাম মোস্তফা। জীবনের শেষ বয়সে স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে নিয়ে কঠিন সময় পার করছেন তিনি।

আজ পহেলা ডিসেম্বর, বিজয়ের মাস শুরু। এ বিজয় ছিনিয়ে আনতে যুদ্ধে অংশ নিয়েও নিজের প্রাপ্য স্বীকৃতিটুকু আটচল্লিশ বছরেও মিলেনি গোলাম মোস্তফার।

তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই রাজ মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করতাম। তেমন লেখাপড়া করতে পারিনি। ১৯৬৮ সালে পিরোজপুরে কালিকাঠী গ্রামের নাসরিনের সাথে তার বিয়ে হয়। এরপর আমাদের সংসারে জন্মগ্রহণ করে কন্যা সন্তান রেখসোনা। কিন্তু এর মধ্যে ডাক আসে যুদ্ধের। স্ত্রী-শিশু সন্তান ফেলে পালিয়ে চলে যাই ভারতে। ভারতের বিহারে বীরভূম চাকুলিয়র কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে আসি দেশে। ৭১’এর ২০ এপ্রিল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। বাগেরহাটের সুন্দরবন সংলগ্ন রায়েন্দা এলাকায় মেজর জিয়াউদ্দীনের নেতৃত্বে পাক হানাদারদের মুখোমুখী একাধিকবার সম্মুখ সমরে লিপ্ত হয়েছি। তখন আমরা ৩০ জন রাজাকারকে হত্যা করি।’

গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পিরোজপুর টাউন বিদ্যালয়ের মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র জমা দেই। ২০০০ সাল থেকে একাধিকবার মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে ঘুরেও শেষ পর্যন্ত নাম লেখাতে পারলাম না। বর্তমানে অসুখ-বিসুখে জর্জরিত হয়ে আছি। চলাফেরা করতে কষ্ট হয়, অনেক স্মৃতি ভুলে গেছি।’

মেজর অবসরপ্রাপ্ত এইচ এম নুরুল হক বলেন, ‘গোলাম মোস্তফা মোল্লা আমার সহযোদ্ধা। একসঙ্গে যুদ্ধ করেছি। কিন্তু যুদ্ধ করেও গোলাম মোস্তফা আজও যোদ্ধা হতে পারেননি। পিরোজপুরের সাবেক পৌর মেয়র এমডি লিয়াকত আলী বাদশা ও সাবেক এমপি আউয়ালসহ আমরা শতাধিক লোক একসঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম । গোলাম মোস্তফা মোল্লা লেখাপড়া কম জানত, তাই সে কখনো লাল মুক্তিবার্তা সংসদে যায়নি। তাই তার নামও তালিকায় আসেনি। অস্ত্র জমা দেবার তালিকাটি রয়েছে তার।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার এতগুলো বছর পার হলেও আজও স্বীকৃতি মেলেনি তার। স্বাধীনতায় ওই পরিবারের অবদান ছিল। স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য তারা। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অ্যান্টি করে সরকারকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার দাবি জানান নুরুল হক।’

গোলাম মোস্তফার স্ত্রী নাসরীন বেগম বলেন, ‘কোলের শিশু সন্তান রেখে স্বামী যখন যুদ্ধে অংশ নেয় সেই সময়ে ৮/৯ মাস কুড়েঘরে এখানে সেখানে পাক হানাদার বাহিনীর ভয়ে দিন পার করেছি। রাজমিস্ত্রী স্বামীর সামান্য আয়ের অর্থ দিয়ে আমার পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ের কাউকেই ভালো লেখাপড়া করাতে পারিনি। বর্তমানে স্বামী খুব অসুস্থ, হার্ট ও চোখের সমস্যা রয়েছে। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই যাতে আমার স্বামী একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি পান এবং আমি যাতে আমার পরিবারটাকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসেবে পরিচয় দিতে পারি, এতটুকুই আমাদের চাওয়া-পাওয়া।’

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *