পদ্মায় ফেরিডুবি, যেভাবে রক্ষা পেল ১৯ গাড়ি ও ৪ শতাধিক প্রাণ

সারাদেশ

স্বদেশ বাণী ডেস্ক : “ফেরির তলা ফেটে যাওয়ার পর বুঝলাম হাতে সময় খুবই কম। যে কোনও সময় ডুবে যাইতে পারে। পরে তাড়াতাড়ি করে ঘাটে সব যাত্রীবাহী গাড়ি আনলোড করি। কাউকে কিছু বুঝতে দেই নাই।”

পদ্মা নদীতে একটি দুর্ঘটনা কবলিত ফেরি ঘাটে এসে ডুবে যাবার আগে কীভাবে সাহসিকতার সাথে ফেরিতে থাকা ১৯টি যানবাহন ও বহু যাত্রীকে রক্ষা করেছেন, সেই বর্ণনাই দিচ্ছিলেন চালক (ইনচার্জ মাস্টার) মোঃ ফজলুল করিম।

রাণীগঞ্জ নামের এই ফেরিটি একটি ডাম্ব ফেরি। অর্থাৎ এই ফেরিনৌকার নিজস্ব ইঞ্জিন নেই, যানবাহন ওঠানোর পর অন্য একটি শক্তিশালী জাহাজ ফেরিটিকে ঠেলে নিয়ে যায়। মূলত ব্রিটিশ আমলে এই মডেলের ফেরিগুলোর প্রচলন হয়। যার কিছু এখনও পদ্মা নদীতে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা রুটে চলাচল করে।

রাণীগঞ্জ ফেরিটির বয়স অন্তত ষাট বছর হবে বলে জানান স্থানীয় সংবাদদাতারা। রোববার (৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফেরিটি ৭টি ট্রাক, ৫টি যাত্রীবোঝাই বাস ও ৭টি ছোট গাড়ি নিয়ে মাওয়ার শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যায়। ফেরিটিতে যাত্রী ও কর্মীসহ মানুষ ছিল চার শতাধিক।

পাশেই চলছে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ। জানা যায়, রাত ১১টার দিকে পদ্মা সেতু সংলগ্ন হাজরা চ্যানেলের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর সেতু স্থাপনের কাজে ব্যবহৃত ড্রেজারের পাইপের সঙ্গে প্রবল বেগে ধাক্কা খায় ফেরিটি।

শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে ইনচার্জ মাস্টার ফজলুল করিম দেখতে পান ফেরির তলা ফেটে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করছে। প্রাথমিকভাবে সাব মার্সিবল পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি। বুঝতে পারেন- হাতে সময় কম। যে কোনও সময় ফেরি ডুবে যেতে পারে।

এমন অবস্থায় ফেরির কর্মচারীদেরকে তিনি দায়িত্ব দেন বালি, কম্বল যা কিছু আছে সেগুলো দিয়ে যতোটা সম্ভব পানি প্রবেশ ঠেকাতে। এরপর তিনি দ্রুত গতিতে ঘাট লক্ষ্যে এগিয়ে যান। তখনও ঘন কুয়াশা না পড়ায় ২০ মিনিটের মধ্যে বাংলাবাজার ঘাটে পৌঁছে যায় ফেরিটি। ততোক্ষণে ফেরির ওপরে পানি উঠতে শুরু করেছে বলে জানান ফজলুল করিম।

কিন্তু তিনি কোনও যাত্রীকে এ বিষয়ে কিছু জানাননি। একে একে সব গাড়ি আনলোড করার পর তিনি ঘাটের উল্টো পাশেই ফেরিটি নোঙর করেন। ফেরির কর্মী ও পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে মধ্যরাতে সম্পূর্ণ ফেরিটির নব্বই শতাংশ ডুবে যায়।

ফজলুল করিম বলেন, “আমার জীবনে এমন অভিজ্ঞতা এটাই প্রথম। আমার মাথাতে এটাই ছিল যে- ঘাবড়ানো যাবে না। আমি ধৈর্য হারাই নাই আর জাহাজের কোনও যাত্রীকে বুঝতে দেই নাই যে, এই ঘটনা ঘটেছে। কেউ বুঝেও নাই, কতো বড় বিপদ থেকে আল্লাহ আমাদের বাঁচাইছে।”

ফেরিটি এখনও নদীর কিণারে অর্ধনিমজ্জিত অবস্থায় আছে। ফেরিটি তুলে আনার জন্য ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভীক কাজ করছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় চালক ফজলুল করিম থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন বলেও জনা গেছে। -বিবিসি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *