‘টাকা নিমুনা কাকা, আমি ভিক্ষা করি না’

সারাদেশ

স্বদেশবাণী ডেস্ক: “ও দাদা, নিন না একটা নজর কাঠি, মাত্র পঞ্চাশ টেহা, ও কাকা, নিন না একটা কাঠি”! -ঠিক এমন মায়াবী স্বরে লোক সমাগমের মধ্যেই ডেকে চলছিল ছোট্ট এক বালক। ঠিক তখনি তার ডাক শুনে এক ভদ্রলোক ওই হাত বাড়িয়ে ১০ টাকার একটি নোট দিতে চাইলে, সে বলে- “টাকা নিমুনা কাকা, আমি ভিক্ষা করিনা। আমার একটি নজর কাঠি নেন কাকা, আপনের বাড়িতে থাকা ছোট্ট বাবুদের নজর লাগবে নাহ।”

বলছিলাম- ১০/১২ বছরের জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী বালক রাব্বি’র কথা। নওগাঁর ধামইরহাটে মহান বিজয়ের মাসে রাস্তাঘাট কিংবা লোক সমাগমে দেখা মিলে রাব্বি নামে ছোট্ট এই বালকটির সাথে। কিছুক্ষণ কথা হলো ওর সাথে। বাবা নেই, জন্মের আগে মারা গেছে। বাবার নাম কি জানতে চাইলে সেটাও বলতে পারেনি সে। বাবাহীন অভাবের সংসারে মায়ের সঙ্গে সে একাই থাকে। বাবার আদর-যত্ন পায়নি একদিনের জন্যেও! বাড়ি নাটোর জেলার কোনও এক অজোপাড়া গাঁয়ে। মার নাম জানতে চাইলে বলে উঠলো- মার নাম শাকিলা বেওয়া।

সারাদিন কুয়াশা, কনকনে শীতে গায়ে তেমন শীতবস্ত্রও নেই রাব্বির। তার চোখে-মুখে নেই কোনও হাসি। ঠোঁটদুটো শুকিয়ে গেছে, চেহারার বাহ্যিকতায় স্পষ্ট ভেসে ওঠে অনাহারে থাকার ছাপ। এই বয়সে এমন কি হবার কথা ছিল? স্কুলে যাওয়ার সময়টুকুও হারিয়ে ফেলেছে সে। অথচ এই বয়সে যার হাতে খাতা-কলম নিয়ে স্কুলের ক্লাসে থাকার কথা ছিল, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তার হাতে উঠেছে জীবিকা নির্বাহের উপকরণ।

করোনায় অনেকটাই থমকে গেছে জনজীবন, তারপরও থেমে নেই বিজয়ের আনন্দ। ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। এমনই দিনে একদিকে বিজয়ের আনন্দ অন্যদিকে ক্ষুধা নিবারণের উপকরণ নিয়ে ছুটে চলেছে অসহায় ও কর্মহীন মানুষ।

অভাবের তাড়নায় সারাদেশের গ্রামে-গঞ্জে জীবিকার প্রয়োজনে মাকে সাথে করে নিয়ে এভাবেই দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতে হয় রাব্বিকে। তবে ওইদিন সকালে উপজেলা চত্বরে ওকে একাই বাচ্চাদের নজর না লাগে এমন নজর কাঠি ৫০ টাকা, বাচ্চাদের ঝুনঝুনি ৩০, বাত ব্যথা ভালো হওয়ার মালা ৪০ টাকা ও ব্যথানাশক তৈল ৭০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। ছোট্ট বালকটিকে এক উপজেলা থেকে অন্য উপেজলায় বেঁচে থাকার তাগিদে এভাবেই দিনের পর দিন ছুটে চলতে হয়।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *