অবশেষে গ্রেপ্তার হলেন গরিবের বন্ধু ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক’!

সারাদেশ

স্বদেশবাণী ডেস্ক:  তিনি ‘এমবিবিএস ডাক্তার’। আছে পিজিটি ডিগ্রিও। বাস্তবে চিকিৎসা বিষয়ক কোনও সার্টিফিকেট না থাকলেও শিশু, মেডিসিন এবং সার্জারি বিশেষজ্ঞ পরিচয়ে দীর্ঘ ১১ বছর অসংখ্য রোগীর সাথে প্রতারণা করার পর অবশেষে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার মৃত আবুল কাশেমের পুত্র কথিত ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক’ জাহাঙ্গীর আলম।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার (রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম এবং রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল হারুনের নেতৃত্বে রাউজান থানা পুলিশের একটি টিম অভিযান চালিয়ে প্রতারক জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করে। এ সময় উপজেলাধীন নোয়াপাড়া পথেরহাটস্থ তার চেম্বার থেকে জব্দ করা হয় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ প্রেসক্রিপশন প্যাড, ভিজিটিং কার্ড, সিল, সাইনবোর্ডসহ অন্যান্য কাগজপত্র।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, অভিযান চলাকালে প্রথমে প্রতারক জাহাঙ্গীর চিকিৎসা বিষয়ক বিভিন্ন পরিভাষা (টার্ম) উল্লেখ করে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালান। কিন্তু পুলিশের জেরার মুখে কোনও প্রকার সনদ বা বিএমডিসি নিবন্ধনের প্রমাণপত্র উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়ে পরবর্তীতে প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করে নেন তিনি।

এক পর্যায়ে তিনি ‘গরিবের বন্ধু’ হিসেবে এ পর্যন্ত ভূমিকা পালন করে এসেছেন দাবি করে তাকে গ্রেপ্তার না করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে অনুরোধ করেন। সার্টিফিকেট না থাকলেও সারাজীবন অনেক কম পয়সায় অসংখ্য গরীব রোগীকে যথাযথ চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন মর্মেও দাবি তার।

শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা নোয়াপাড়া ইউনিয়নের মোকামী পাড়া এলাকার জাহানারা বেগম বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম এমবিবিএস চিকিৎসক পরিচয় দেওয়ায় আমি তার কাছে চিকিৎসা করাই, তিনি আমার কাছ থেকে ৪শ টাকা ফি নেন। এর আগে আরও অনেকবার দেখিয়েছি। আজ (সোমবার) আসতে বলেছেন তাই এসেছি।’

অভিযানের নেতৃত্বে থাকা চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার (রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই ভুয়া ডাক্তার জাহাঙ্গীরকে আমরা সন্দেহের তালিকায় রেখেছিলাম। অবশেষে সুস্পষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আজ রাউজান পথেরহাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। ভবিষ্যতেও বিভিন্ন পেশার সম্মান রক্ষার্থে ভুয়া পেশাজীবী পরিচয়দানকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আমাদের অনুরূপ অনুসন্ধান ও অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

এসময় গ্রেপ্তারকৃত জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে নিয়মিত মামলা রুজু করার বিষয়টিও নিশ্চিত করেন রাউজান-রাঙ্গুনিয়ার এই শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল অভিযুক্ত প্রতারক জাহাঙ্গীরকে একই অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শামীম হোসেন রেজার নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমান আদালত দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেছিলেন। তাতেও ক্ষান্ত না হয়ে ভুয়া ডাক্তার সেজে প্রতারণা অব্যাহত রাখায় এবার এএসপির নেতৃত্বাধীন পুলিশ ফোর্সের নিকট গ্রেপ্তারই হতে হলো তাকে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *