কারাগারে যার প্রেম বিয়ে প্রণয়!

সারাদেশ

স্বদেশবাণী ডেস্ক: কাসিমপুর কারাগারে বন্দি হলমার্কের জেনারেল ম্যানেজার তুষার আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়া নারীর পরিচয় মিলেছে। নাম তার আসমা শেখ ওরফে সুইটি। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। হাতিরঝিলসংলগ্ন পুলিশ প্লাজা কনকর্ড শপিং সেন্টারের ৪র্থ তলায় রয়েছে তার বিউটি বাজ নামের ফ্যাশন হাউজ। এর আগে তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করতেন।

৬ জানুয়ারি কাশিমপুর কারাগারে বন্দি হলমার্কের জিএম তুষার আহমেদের সঙ্গে এক তরুণীর সাক্ষাতের ভিডিও ফাঁস হলে কারা প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ৩ জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কারা কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে আসমাকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করেছেন তুষার। তার দাবি, মোবাইল ফোনে তাদের বিয়ে হয়। তবে বিয়ের আগে তিনি আসমার সঙ্গে কারাগার থেকে মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলতেন। ফোনেই তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে তুষারের সঙ্গী আরও বেশ কয়েকজন কারাবন্দির সাক্ষাৎকার নিয়েছে তদন্ত কমিটি।

তুষার গ্রেফতার হওয়ার পর তার প্রথম স্ত্রী নাজনিন সুলতানা মিষ্টি দুই সন্তানকে নিয়ে বিদেশে চলে যান। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ায় বসবাস করছেন। তবে তুষারের দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে পরিবারের সদস্যদের কেউ কিছু জানেন না।

তুষারের প্রথম স্ত্রীর বড় ভাই আব্দুর রাজ্জাক শনিবার যুগান্তরকে বলেন, আমার ছোট বোন ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে তুষারের বিয়ে হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। তুষার গ্রেফতার হওয়ার পর তার পরিবারের সঙ্গে আমাদের তেমন কোনো যোগাযোগও নেই।

সূত্র জানায়, তুষারের সঙ্গে এর আগেও একাধিকবার দেখা-সাক্ষাৎ করেছেন আসমা। করোনার আগে নিয়মিতই তিনি কাশিমপুর কারাগারে যেতেন। কাশিমপুর কারাগারের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়মিত তার ফ্যাসন হাউজে কেনাকাটাও করেন। সর্বশেষ কাসিমপুর কারাগারের ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলাইন সস্ত্রীক আসমার ফ্যাশন হাউজে গিয়ে ৭৫ হাজার টাকার কেনাকাটা করেন। তবে কোনো টাকা দেননি। সবটাই উপঢৌকন হিসাবে তাকে দেয়া হয়।

সাকলাইন ছাড়াও কারা অধিদফতরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা আসমার বিউটি বাজ থেকে মোটা অঙ্কের শপিং করেছেন। শনিবার বিকালে বিউটি বাজ নামের ফ্যাশন হাউজে গিয়ে আসমাকে পাওয়া যায়নি।

তবে দোকানের ম্যানেজার মেহেদী হাসান যুগান্তরকে বলেন, কাশিমপুর কারাগারের ঘটনা মিডিয়ায় আসার পর থেকে মালিক কিছুটা আড়ালে থাকছেন। অপরিচিত কারও ফোনও তিনি রিসিভ করছেন না। মেহেদী বলেন, আমাদের দোকানের মালিক তার স্বামীর সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে গেছেন। এতে অন্যায়ের কিছু নেই বলে দাবি করেন তিনি।

কাশিমপুর কারাগারের সাবেক জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা যুগান্তরকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা দর্শনার্থীদের পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হয় না। ফলে তুষারের সঙ্গে আগেও আসমা দেখা-সাক্ষাৎ করতে এসেছেন কিনা তা বলা যাচ্ছে না।

সূত্র বলছে, কারাগারে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার আগে তুষারের পিএস হিসাবে পরিচিত সমর কুমার বিশ্বাস সংশ্লিষ্ট কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলাইন ছাড়াও জেলার নূর মোহাম্মদের সঙ্গে তার একাধিকবার ফোনে কথা হয়। আসমা কারাগারে ঢোকার সময় জেলার নূর মোহাম্মদ, জেল সুপার রত্না রায় এবং ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলাইন সবাই নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করছিলেন।

আসমাকে কারাফটকে রিসিভ করেন ডেপুটি জেলার। এরপর আসমা জেলার নূর মোহাম্মদের কক্ষে যান এবং তার কক্ষের সঙ্গে লাগোয়া বাথরুম ব্যবহার করেন। দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে আসমা কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কারা কর্মকর্তাদের সবাই কারাগারেই অবস্থান করছিলেন।

২০১২ সালে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর অদ্যাবধি কারাগারে আছেন তুষার আহমেদ। কারা কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তিনি কারাগারে থাকেন অনেকটা ভিআইপি স্টাইলে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *