ভালোবাসা দিবসেও প্রেমিকার বাড়িতে কান্নার রোল

সারাদেশ

স্বদেশবাণী ডেস্ক: ভালোবাসা দিবসেও প্রেমিকার বাড়িতে কান্নার রোল। ঢাকার ধামরাইয়ের দেওখোলা গ্রামে বিয়ের দাবিতে সাত দিন অনশন করার পর ওই স্কুলছাত্রীকে গুমের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসীর চাপের মুখেও অনশনরত স্কুলছাত্রীকে বিয়ে না করে তাকে গুম করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী ও গুম হওয়া ওই স্কুলছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ।

এলাকাবাসীর ধারণা, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে কিংবা দায়মুক্তি পেতে অনশনরত ওই স্কুলছাত্রীকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে গভীর রাতে অন্য কোনো স্থানে নিয়ে গুম করে রাখা হয়েছে। অথবা হত্যার পর মাটিচাপা অথবা বস্তাবন্দি করে নদী, পুকর কিংবা বিলের পানিতে ফেলে দেয়া হয়েছে। এমনকি প্রেমিকের বাড়ির লোকজনও তাকে লুকিয়ে রাখতে পারে বলে ধারণা তাদের। এ নিয়ে এলাকাবাসীর কাছে বিষয়টি এক ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিন এলাকাবাসী জানান, ছয় মাস পূর্বে মানিকগঞ্জ জেলা সদরের ভগবানপুর গ্রামের মো. মমরেজ আলীর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে মৌসুমী আক্তার মিতুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে রং নাম্বারে পরিচয় ঘটে উপজেলার কুশুরা ইউনিয়নের দেওখোলা গ্রামের মো. আব্দুল হালিমের ছেলে মো. সেলিম হোসেনের। সেলিম হোসেন রঘুনাথাপুর আবুল বাশার কৃষি কলেজের এইচএসসির ছাত্র।

একপর্যায়ে তাদের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। শেষপর্যন্ত তাদের এ প্রেম শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত গড়ায়। বিয়ের প্রলোভনে ওই কলেজছাত্র বিভিন্ন সময়ে ওই স্কুলছাত্রীর সঙ্গে দৈহিক মেলামেশা করে। পরে ওই স্কুলছাত্রী সেলিমকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে।

এরপর তার সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। মোবাইল ফোনের সংযোগও বন্ধ করে দেয় প্রতারক সেলিম হোসেন। ফলে ওই স্কুলছাত্রী কোনো উপায়ন্ত না দেখে সাত দিন আগে সেলিম হোসেনের বাড়িতে এসে বিয়ের দাবিতে অনশন শুরু করে। তাকে নির্যাতনের পর চুলের মুঠি ধরে বাড়ি থেকে তাড়াতে চায় লোকজন।

ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে শত শত উৎসুক জনতা ওই বাড়িতে এসে ভিড় করে এ দৃশ্য দেখার জন্য। সর্বশেষ শুক্রবার দিনগত রাতে এ নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মেছের আলীর সভাপতিত্বে এক সালিশি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। সালিশি বৈঠকে ওই ইউপি মেম্বারের একক মতামতের ভিত্তিতে অনশনরত ওই স্কুলছাত্রীকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ভয়ভীতি দেখিয়ে অনশনরত ওই স্কুলছাত্রীকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় ওই ইউপি মেম্বারের সহযোগীরা। রাত ১১টা পর্যন্ত ওই বাড়িতে স্থানীয় লোকজন ও সাংবাদিকদের উপস্থিতি ছিল। অনশনরত ওই স্কুলছাত্রীকে ওই বাড়িতে রেখেই সবাই চলে যান।

এরপর শনিবার সকালে অনশনরত ওই স্কুলছাত্রীকে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখতে পাননি এলাকাবাসী। ঘরের দরজায় ঝুলছে তালা। এমনকি ওই স্কুলছাত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও রয়েছে বন্ধ। শুধু তাই নয়, ওই বাড়ির লোকজনও ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে আত্মগোপন করেছেন বলে জানা গেছে।

সঙ্গতকারণেই এলাকাবাসীর মনে সন্দেহের দানা বাঁধতে শুরু করে। তাদের ধারণা বিয়ের দাবিতে অনশনরত ওই স্কুলছাত্রীকে হাত-পা মুখ বেঁধে অন্য কোনো স্থানে নিয়ে রাখা হয়েছে। এমনকি বস্তাবন্দি করে নদী, বিল  কিংবা পুকুরের জলে ফেলে দেয়া হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। অথবা হত্যার পর লাশ মাটিচাপা দেয়া হয়েছে।

এলাকাবাসীর পাশাপাশি গুম হওয়া ওই স্কুলছাত্রীর পরিবারেরও একই ধারণা। তারা ওই স্কুলছাত্রীর দ্রুত সন্ধান চান।

এ ব্যাপারে ওই স্কুলছাত্রীর পিতা মো. মমরেজ আলী বলেন, প্রেমের সম্পর্কের কারণে আমার মেয়ে ওই বাড়িতে এসে বিয়ের দাবিতে অনশন করে। শনিবার সকালে খবর পেয়ে ওই বাড়িতে এসে আমার মেয়েকে পাইনি। শুক্রবার রাত ১১টায়ও আমার মেয়ে ওই বাড়িতেই ছিল বলে এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানতে পারি। আমি এ ব্যাপারে ধামরাই থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে আমি আদালতের দ্বারস্থ হব।

এ ব্যাপারে ধামরাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) পুলিশ পরিদর্শক মো. কামাল হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে কেউ পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ব্যাপারে ইউপি মেম্বার মো. মেছের আলী বলেন, মেয়েটি অন্যায়ভাবে একটি ছেলের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে উঠে অশান্তির সৃষ্টি করেছে। তাই তাকে ওই বাড়ি থেকে বিতাড়িত করতে এলাকার লোকজন নিয়ে পরামর্শ করতে বসি। মেয়েটি ওই বাড়ি ছেড়ে যেতে না চাইলে তার বাবা-মা, এলাকার মাতবর ও চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নিয়ে আসতে বলি। ওই মেয়ে আমাদের কোনো কথাই কর্ণপাত না করলে রাত ১১টার দিকে ওই বাড়ি থেকে চলি আসি।

তিনি বলেন, আমরা মীমাংসা করার জন্য চেষ্টা করেছি। তবে পরবর্তীতে কী ঘটনা ঘটেছে তা আমার জানা নেই।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *