স্বদেশবাণী ডেস্ক: কর্মসূচি প্রত্যাহার হলেও উত্তাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বৃহস্পতিবারও সেখানে বরিশাল-কুয়াকাটা আন্ত:মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধ তুলে নেয়া প্রশ্নে দেয়া আলটিমেটামের সময়সীমা নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ফের সড়ক অবরোধ করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তাদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে অবরোধ থেকে সরিয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু মহাসড়কের পাশেই এ ক্যাম্পাস থাকার কারণে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় ও তার আশপাশ এলাকায়। শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দিলেও ক্যাম্পাসে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়সহ শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর দুই প্রান্তে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, ববি ছাত্রদের মাঝরাতে মেস থেকে নামিয়ে মারধরের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে ৬ দফা দাবিতে স্তম্ভের পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা। তার আগে আধাঘণ্টার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সড়ক অবরোধ করেন তারা
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মাহমুদ হাসান তমাল বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অ.দা.) বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
রূপাতলী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, আজকেও অল্প সময়ের জন্য সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। ভিসির আশ্বাসে তারা ক্যাম্পাসে ফিরে গেছেন। এখন সমাধান করবেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ছাদিকুল আরেফিন বলেন, এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়েছি যেন দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার করা হয়।
প্রসঙ্গত, ১৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিআরটিসি বাস কন্টাক্টটারের বাকবিতণ্ডা হয়। এর জেরে এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত ও অপর একজন ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করে। ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুই ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ শেষে আবাসস্থলে ফিরে যান। ১৭ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সব শিক্ষার্থীদের মেসে গিয়ে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ১১ শিক্ষার্থীকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হামলার পরপরই রাত আড়াইটার দিকে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা; যা উপাচার্যের আশ্বাসে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে অবরোধ ১৪ ঘণ্টা পর তুলে নেয় ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকাল সোয়া ৪টায়।
এদিকে ববি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে নগরীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা ও মহানগর সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট।
বক্তব্য রাখেন বরিশাল সমাজতাত্রিক দলের (বাসদ) সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তী, মো. সিফাত, লামিয়া সাইমুন, সাইফুল ইসলাম, সুজন সিকদার, প্রতিভা রায়, মোজাম্মেল হক সাগর ও শন্তু মিত্র প্রমুখ।
অপরদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ আলম এক বিবৃত্তিতে এ দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে দোষীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।