পিতার মৃত্যুবার্ষিকীতে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিলেন ডা. লুৎফর রহমান

সারাদেশ

স্বদেশবাণী ডেস্ক:  মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সাধারণত কাঙালিভোজ, দোয়া মাহফিলসহ খাবার-দাবারের নানা আয়োজন থাকে।

কিন্তু মানিকগঞ্জে গরিবের ডাক্তারখ্যাত লুৎফর রহমানের পিতার মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গ্রামের শত শত গরিব ও অসহায় মানুষকে বিনামূল্যে ওষুধসহ ঢাকা এবং মানিকগঞ্জ থেকে খ্যাতনামা চিকিৎসক এনে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে।

ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে প্রধান অতিথি ছিলেন মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা, মানিকগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতালের সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেল, মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম ছারোয়ার ছানু, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী  লীগ সাধারণ সম্পাদক আফতার উদ্দিন সরকার।

আগত অতিথিরা ডা. লুৎফর রহমানের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে তার পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান তার বাবা মরহুম আনসার আলীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারও নিজ বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের সাহেবপাড়া গ্রামে এক ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করেন।

লুৎফর রহমান বছরজুড়েই নিজ গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের হাজার হাজার দরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে নীরবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে চলেছেন।

অবসর পেলেই তিনি ছুটে যান নিজ গ্রামে। ঘুরে বেড়ান দুস্থ মানুষের বাড়ি বাড়ি। খোঁজ নেন গ্রামের কে অসুস্থ, কার কী অসুখ। তিনি বিনাখরচে সেসব দুস্থ মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসক বন্ধুদের সহায়তা নিয়ে সেখানে আয়োজন করেন ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের।

লুৎফর রহমান জানান, তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন গ্রামের অসহায় মানুষদের চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি। অনেকেই ওষুধ কিনে খেতে পারেন না। সেই ভাবনা থেকে তিনি সারা বছর বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানির কাছ থেকে ফ্রি স্যাম্পল হিসেবে পাওয়া ওষুধ জমিয়ে বাবা আনসার আলীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দরিদ্র মানুষের মধ্যে তা বিতরণ করেন।

চিকিৎসাসেবা নিতে আসা সাহেবপাড়া গ্রামের ৬০ বছর বয়সী আসগর আলী বলেন, গরিবের ডাক্তার লুৎফর রহমান যত্নসহকারে দেখেন এবং টাকা ছাড়া আমাদের সব ওষুধ  দেন।

ওই গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ রমিজ উদ্দিন বলেন, গত ছয় বছর ধরে আমরা বিনাপয়সায় চিকিৎসা ও ওষুধ পাই। তিনি হলেন আমাগো গরিবের ডাক্তার। রাইত নাই দিন নাই, তার কাছে গেলে নিজে না পারলে অন্য ডাক্তারদের সহায়তায় চিকিৎসা ও ওষুধ দেন।

সোমবার সাহেবপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, লুৎফর রহমানের বিশাল বাড়ির আঙিনাজুড়ে করা প্যান্ডেলে সেবাদানকারী চিকিৎসকদের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা কর্নার।

মেডিসিন কর্নারে বসে রোগী দেখছেন ডা. মানবেন্দ্র সরকার মানব ও ডা. কাজী একেএম রাসেল। এ ছাড়া গাইনি সেবা দিচ্ছেন ডা. নাছিমা আক্তার।

লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে গ্রামের নানা বয়সি নারীরা বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা জানালেন, লুৎফর রহমানের এই মহৎ উদ্যোগে সাড়া দিয়ে তারা এখানে এসেছেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *