দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সজীব চালাতে পারেন মোবাইল-কম্পিউটার

জাতীয় সারাদেশ

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: দুচোখে দেখতে পান না শাহরিয়ার ইসলাম সজীব। তারপরও থেমে থাকেনি তার জীবন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে অসম্ভবকেও যে সম্ভব করা যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। দুচোখে না দেখতে পারা সত্তে¡ও মোবাইল ও কম্পিউটারের যাবতীয় কাজ রপ্ত করেছেন সজীব। ই-পাসপোর্টের আবেদন থেকে শুরু করে ভিসা প্রসেসিং ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের আবেদন ফি জমা, ই-টিন সার্টিফিকেটের আবেদন, জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) আবেদন ও সংশোধন, বিদ্যুৎবিল জমা ও ফ্লেক্সিলোড—সবই করতে পারেন সজীব।

শাহরিয়ার ইসলাম সজীব বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের নতুন বাজার এলাকার রেজাউল করিমের ছেলে। অদম্য ইচ্ছাশক্তি দৃষ্টিহীন সজিবকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। চোখে না দেখলেও মনের সাহসে তিনি শুরু করেছেন মাল্টিমিডিয়ার ব্যবসা।

উপজেলার সান্তাহার মালাহল এলাকায় ‘এস আর টেলিকম’ নামের মাল্টিমিডিয়ার দোকান দিয়েছেন সজীব। রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সেখানে তার সঙ্গে কথা হয়।

তিনি  জানান, তার বাবা ছিলেন সরকারি চাকরিজীবি। এখন অবসরে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় সজীব। ছোট দুই ভাই ও বোন স্কুলে পড়ে। জন্মের পর থেকে এক চোখে দেখতেন না সজীব। বাকি চোখের ওপর ভরসা করে চালিয়ে নিতে পারতেন সব কাজ। লেখাপড়া, খেলাধুলা ও প্রয়োজনীয় সব কাজই করতেন অন্য আরও দশজনের মতোই।

বয়স যখন ১০ বছর তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তেন সজীব। একদিন সহপাঠীদের সঙ্গে মাঠে খেলতে যান। ক্রিকেটের বল এসে লাগে তার সচল চোখটিতে। এতে সাড়া জীবনের জন্য পৃথিবীর আলো দেখা থেকে বঞ্চিত হন তিনি। পরে অনেক চিকিৎসা করিয়েও আর দৃষ্টিশক্তি ফেরানো সম্ভব হয়নি সজীবের।

তবে দমে যাওয়ার পাত্র নন সজীব। চোখে না দেখা সত্তে¡ও শুধু শুনে পবিত্র কোরআনের ৫ পারা মুখস্ত করেন। এরপর সান্তাহার পৌর শহরের লকোসেট জামে মসজিদে কিছুদিন মোয়াজ্জিন ও পরে ইমামতি করেন। সেখানে সবশেষ তার বেতন ছিল ২৫০০ টাকা।

বছরখানেক আগে কম্পিউটার বিষয়ে অভিজ্ঞতা নিতে সান্তাহার ডিজিটাল পোস্ট অফিসে ছয়মাস মেয়াদি কোর্সে (প্রশিক্ষণ) ভর্তি হন এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। ট্রেনিং শেষে একটি মাল্টিমিডিয়ার দোকান দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু অর্থের অভাবে সেই অসাধ্যকে সাধন করা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে তার মা তাসলিমা বানু তার বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া সম্পত্তি (জমি) বিক্রি করে ছেলের হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দেন। সেই টাকায় ব্যবসা শুরু করেন সজীব।

দৃষ্টিহীন সজীব এখন তার দোকানে মাল্টিমিডিয়ার কাজের পাশাপাশি ই-পাসপোর্টের আবেদন, ভিসা প্রসেসিং ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের আবেদন ফি জমা, ই-টিন সার্টিফিকেটের আবেদন, এনআইডির আবেদন ও সংশোধন, বিদ্যুৎবিল জমা ও ফ্লেক্সিলোড দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম রকি বলেন, ‘প্রতিটি কাজের পেছনেই তীব্র ইচ্ছা থাকা দরকার। ইচ্ছাশক্তি প্রবল হলে সফলতা সুনিশ্চিত। ইচ্ছাশক্তির বলেই যে কোনো অসাধ্য সাধন করা যায়। সজীব তেমনই একজন। সে দৃষ্টিহীন হলেও স্বাভাবিক আরও দশজনের মতো কম্পিউটার ও মোবাইল চালাতে পারে।’

এ বিষয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শাহরিয়ার ইসলাম সজীব জাগো নিউজকে বলেন, ‘দোকান চালুর পর আটমাস হয়ে গেলেও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় অনেক খদ্দের আমার দোকানে আসতে চান না। কিন্তু আমি খদ্দেরদের বলতে চাই আমার ওপর শতভাগ ভরসা রাখতে পারেন।’

কম্পিউটারে কাজ করতে কোনো সদস্যা হয় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেটভিত্তিক কোনো কাজ করতে গেলে ভেরিফিকেশন কোড নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কিন্তু খদ্দেরদের সহযোগিতা নিয়ে চালিয়ে নিতে পারি। তাছাড়া অন্য কোনো সমস্যা হয় না।’

সজীব বলেন, ‘আমার তেমন কোনো চাওয়া নেই। এখন দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট বিল দিয়ে টিকে থাকতে পারলে আলহামদুলিল্লাহ। তবে কখনো যদি সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাই তাহলে মোবাইল এক্সেসরিসের মালামাল তুলে ব্যবসা বাড়াতে চাই।’

সান্তাহার ডিজিটাল পোস্ট অফিসের কম্পিউটার ট্রেনার (অফিস অ্যাপ্লিকেশন) মিজানুর রহমান মিজান জানান, ৭০ জন ট্রেনিং নিতে আসেন। তাদের মধ্যে দুজন ছিলেন প্রতিবন্ধী। তাদের জন্য ৫০% ছাড়ে ট্রেনিং দেওয়া হয়। সজীবের রেজাল্ট ভালো ছিল।

স্ব.বা/ রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *