পাল্টে গেছে বাঘা সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দৃশ্যপট, বন্ধ করা হয়েছে সমিতির নামে টাকা নেওয়া কার্যক্রম

রাজশাহী লীড

আব্দুল হামিদ মিঞা,বাঘা(রাজশাহী): ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশের পট পরিবর্তনের পর, রাজশাহীর বাঘায় পাল্টে গেছে সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের চিত্র। সমিতির নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধ হওয়ায় স্বস্তিতে ফিরেছে জমি ক্রেতাদের। দলিল লেখকের উপস্থিতি কমলেও বৃদ্ধি পেয়েছে রাজস্ব আয়।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে স্থগিত করা হয়েছে আগের সেই দলিল লেখক সমিতির নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় কার্যক্রম। এতে করে হোচট খেতে আগের মতো সুবিধা নিতে যাওয়া লোকজনকে। এতে আয় কমেছে অনেক দলিল লেখকদের।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বাঘা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে কেউ জমি নিবন্ধন করতে গেলে দলিল লেখক সমিতির টাকা না দিলে জমি নিবন্ধন করতে দেওয়া হতো না। কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলেও বাড়তি টাকা নিতেন সমিতির নেতারা। তাই বাধ্য হয়েই সমিতির ঘরে গিয়ে জমির মূল্য ধরে প্রতি লাখে পাঁচ থেকে ছয় হাজার করে টাকা দিতে হতো জমি ক্রেতাদের। প্রতিবাদ করেও বিষয়টি নিয়ে যার সুফল মেলেনি। সুবিধাবাদিদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে অতীতে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
মঙ্গলবার(০৮-১০-২০২৪) সরেজমিন দেখা যায়, সাধারণ মানুষ কোনো হয়রানি ছাড়াই জমি নিবন্ধন করছেন। কার্যালয়ের ভেতরে-বাইরে কোনো জটলা নেই।দেখা গেছে,সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা- কর্মচারী, দলিল লেখক ও সেবা নিতে আসা লোকজনের আনাগোনা।তবে হাত খরচের নামে ২/১ জনের টাকা নেওয়ার কথা শোনা গেলেও প্রমান মেলেনি।

জমি নিবন্ধন করতে আসা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের দিঘা গ্রামের স্বপন কুমার চৌধুরি বলেন, তার এলাকায় ১৬ দশমিক ১৭ শতাংশ জমির ৩লাখ ৮৯ হাজার দলিলে রেজিস্ট্রি করতে ব্যয় হয়েছে ৩৭ হাজার ৩৬৫ টাকা। এর মধ্যে দলিল লেখক নিয়েছেন ৩ হাজার টাকা। একজন দলিল লেখক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,আগে এর রকম জমির দলিল করতে সমিতি নিত,১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। উপজেলা রিনা বেগম জানান, জমি নিবন্ধনে বাড়তি কোনো টাকা দিতে হয়নি। জমি নিবন্ধন করতে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে কিছুদিন আগেও সমিতিকে বাড়তি টাকা দিতে হতো বলে জানান তিনি।
দলিল লেখকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলায় মোট লাইসেন্সধারি দলিল লেখকের সংখ্যা ১৬৭ জন। এর মধ্যে ৩জন মারা গেছেন। বর্তমানে ১৬৪ জন দলিল লেখক আছেন। প্রকৃত পক্ষে দলিল লেখক ৬০/৭০ জন। এরাই এখন অফিসে আসা যাওয়া করছেন। সমিতির সদস্যভ’ক্ত হয়ে আগে তারা কাজ না করেই ভাগ নিতেন, দৃশ্যপট পাল্টে যাওয়ার পর তাদের অনেকেই এখন আর আসছেননা। আগে কেউ কেউ সর্ব নি¤œ ১০০০ থেকে ১২০০শ টাকা পেয়েছেন। ৩০০০ হাজার টাকাও পেয়েছেন কেউ কেউ ।

তাদের সাথে কথা বলে জানা গেল, দলিল লেখকের লাইসেন্স করে সমিতির সদস্য হতেও নেতাদের দেওয়া লাগতো অন্তত ৪০ হাজার টাকার কিছু কম কিংবা বেশি। সদস্য হয়ে ভাগ নিতেন অনেকেই। এ কারণে দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেয়েছে দলিল লেখকের সংখ্যা। ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে দলিল লেখক সমিতির নেতাদের। প্রভাবশালি এককজন নেতার ইশারাই সমিতির নেতা বনে গেছেন তারা ।

দলিল লেখক জিল্লুর রহমান বলেন,তার সেরেস্তায় ৩জন কাজ করে। ১টি দলিল লিখে পান এক থেকে দুই হাজার টাকা। যা ৩জন মিলে ভাগ করে নিতে হয়। কাজ না থাকায় হতাশার কথাও জানিয়েছেন অনেক দলিল লেখক।

সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, জমির শ্রেণী অনুযায়ী, পৌর সভা ও ইউনিয়নে সরকার নির্ধারিত টাকার সাথে আনুসাংগিক কিছু খরচ হয়। দলীয় প্রভাব মুক্ত থাকায় এখন সরকার নির্ধারিত টাকায় জমি নিবন্ধন করা যাচ্ছে। বর্তমানের এ নিয়ম আগামীতেও চালু থাকে এমনটাই দাবি করেছেন সাধারন জনগন।

স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে কথা বললে জানান,আগের মতো সমিতির নামে কেউ যেন কোন টাকা আদায় না করে, এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ দলীয় লোকজনকে সজাগ থাকতে নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সুরে কথা বলেছেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মাওলানা জিন্নাত আলীও।

বাঘা সাব-রেজিস্ট্রার এন.এ.এম নকিবুল আলম বলেন, সরকার দলীয় লোকদের প্রভাবে জনগনকে সেবা দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও পেরে উঠেননি। দেশের স্পট পরিবর্তনের পর দলিল লেখক সমিতির নামে টাকা আদায় বা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আগের তুলনায় দলিল সম্পাদন ও রাজস্ব আদায় বেড়েছে। মাসে দুইশ থেকে আড়াইশ’ দলিল সম্পাদন হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতায় দলিল লেখক সমিতির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাচ্ছেন।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *