সিসা দূষণ বন্ধের কঠোর পদক্ষেপের দাবিতে রাবিতে র‍্যালি ও মানববন্ধন

রাজশাহী

প্রেস বিজ্ঞপ্তি: ২২শে অক্টোবর ২০২৪, রাজশাহী জেলা, বাংলাদেশ: “আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ” উপলক্ষে রাজশাহীতে সচেতনতামূলক র‌্যালি ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক জনসচেতনতা র‌্যালিতে সিসা দূষণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকার ও নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে একইসাথে ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা গড়ে তোলা ও সিসাযুক্ত পণ্য বর্জনে আহ্বান জানানো হয়। “সিসা দূষণ বন্ধ হলে, বাড়বে শিশু বুদ্ধি-বলে” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ইউনিসেফের সহযোগিতায় এই কর্মসূচির আয়োজন করে ইয়ুথনেট গ্লোবাল এবং পিওর আর্থ বাংলাদেশ।

র‍্যালিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ, সাধারণ মানুষ, ইয়ুথনেট গ্লোবালের স্বেচ্ছাসেবীসহ বিভিন্ন যুব সংগঠন, সুশীল সমাজ সংগঠন ও স্থানীয় এনজিও প্রতিনিধি, নীতিনির্ধারণী মহল, পরিবেশ অধিকারকর্মী, সমাজকর্মী, গণমাধ্যমকর্মীসহ মোট ৬০ জন অংশ নেন। র‌্যালিটি দুপুর ১২টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ প্রদক্ষিণ করে দুপুরে মানববন্ধনের মাধ্যমে শেষ হয়। এসময় অংশগ্রহণকারীরা সিসা দূষণ বিরোধী বার্তা সম্বলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন এবং “সিসা দূষণ প্রতিরোধে, আমরা আছি একসাথে” স্লোগান দিতে থাকেন।

এসময় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে সিসা দূষণের ক্ষেত্রে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। দেশের প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ বাংলাদেশি শিশুর (আনুমানিক ৬০ শতাংশ) রক্তে উচ্চমাত্রার সিসার উপস্থিতি রয়েছে; যা শিশুদের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর এবং তা মস্তিষ্কের ক্ষতি করে ও বুদ্ধিমত্তা কমিয়ে দেয়। সিসা দূষণ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে বছরে প্রায় ১৪০,০০০ মৃত্যু ঘটে। গর্ভবতী নারীরাও আছেন সিসা দূষণের ঝুঁকিতে। সিসা-সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ প্রতি বছর ২৮.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আমরা দৈনন্দিন ব্যবহার করি এমন অনেক জিনিসপত্রে সিসা মেশানো থাকতে পারে। যেমন: দেয়াল রং, অ্যালুমিনিয়াম ও সিরামিকের বাসনপত্র, মসলা, শিশুদের খেলনা, কসমেটিক্স বা প্রসাধনী, চাষকৃত মাছের খাবারসহ আরও অনেক কিছুতেই সিসা মেশানো হয়। অনিরাপদে, খোলা জায়গায় যখন সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারি ভাঙ্গা ও সিসা গলানো হয় রিসাইক্লিং এর জন্য তখন সিসা পরিবেশে উন্মুক্ত হয়ে দূষণ ছড়ায়।

এসময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রাদিয়া আওয়াল ত্রিশা রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি পর্যায়ে সিসা দূষণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির উপর জোর দিয়ে বলেন, “সিসা দূষণ বিষয়টা আমাদের কাছে নতুন। তাই ব্যপক সচেতনতা প্রয়োজন। আমরা সিসা দূষণের কারণে মৃত্যুর পরিসংখ্যান জানতে পাই কিন্তু এর পরোক্ষ প্রভাব অর্থাৎ মানুষ হৃদরোগে ও ফুসফুস আক্রান্ত হচ্ছে, শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত রোগে ভুগছে সেই ভোগান্তিটাও আশঙ্কাজনক। রাষ্ট্রীয়ভাবে মনিটর করতে হবে যেন আমাদের মাটি, পানি, বাতাস দূষিত না হয়। বিশেষ করে নদী, নালা, পানির উৎসগুলোকে দূষণ মুক্ত রাখতে হবে, আর ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতন থাকতে হবে যেন নিত্য ব্যবহার্য জিনিস সিসামুক্ত হয়।”

সিসা দূষণের কারণে শিশুদের উপর নেতিবাচক প্রভাবের উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইউনিসেফের স্পোর্টস ফর ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের রাজশাহী জেলার সিপিসিএম মোখলেসুর রহমান পিন্টু বলেন, “গর্ভবতী নারী, শিশু, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সকলেই সিসা দূষণের শিকার। তবে ছোট্ট শিশুদের মস্তিষ্কের জন্য সিসা খুবই ক্ষতিকারক কেননা তা শিশুদের মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্থ করে বিকাশে বাধা দেয়। যেসব পরিবারের সদস্য সিসা সম্পর্কিত কাজের সাথে জড়িত যেমন রং বা সিসা ব্যাটারি রিসাইক্লিং তারাও বাড়ি ফিরে সিসা পরিবারে নিয়ে যাচ্ছে – নিজেও দূষণের শিকার হচ্ছে, পরিবারের শিশুদেরকেও ঝুঁকিতে ফেলছে।”

এসময় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সিসা দূষণ বিষয়ক লিফলেট ও স্টিকার বিতরণ করা হয়। সচেতনতামূলক র‍্যালিটি দুপুর ১২টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে মানববন্ধন তৈরির মাধ্যমে দুপুর ১টায় শেষ হয়।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *