স্টাফ রিপোর্টার: পদ্মা নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রকৃত মালিককে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর পূর্বক লিখে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শরিফুল ইসলাম থানায় মামলা করেছেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত দুই আসামী মাহাবুর রহমান ও শরীফ আলী মুনমুন বর্তমানে জেল-হাজতে আছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বাদী শরিফুল ইসলাম তার পরিচালনায় রাজশাহী মহানগরীর শালবাগান বিমান বন্দর রোডে ৪ তলা বিল্ডিং ভাড়া নিয়ে পদ্মা নার্সিং ইনস্টিটিউট নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুরু করার পরিকল্পনা করেন। এরই প্রেক্ষিতে যাবতীয় ইক্যুইপমেন্ট সামগ্রী ক্রয় পূর্বক যথাযথ ল্যাব ও ক্লাসরুম সন্নিবেশিত করে প্রতিষ্ঠানের স্টাফ নিয়োগ করে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল কর্তৃক প্রনীত নিয়ম অনুসারে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্ট এবং দশ লাখ টাকার এফ.ডি.আর সম্পাদনও করেন তিনি।
মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হওয়ায় প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম একটু স্থবির হয়। এহেন অবস্থায় আমেনা মেডিকেল এসিস্টেন্ট ট্রেনিং স্কুল তালাইমারী এর পরিচালক বিবাদী মাহাবুর রহমান বাদী শরিফুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেন। ওই সময় মাহাবুর রহমান তাকে মৌখিক প্রস্তাব দেন যে, তালাইমারীতে তার আমেনা ম্যাটস্ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। ওই ভবনেই যদি পদ্মা নার্সিং ইনস্টিটিউটটি পরিচালনা করা হয় তাহলে খরচ সংকুলান হবে। এই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে শরিফুল ইসলাম সেখানে পদ্মা নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থানান্তর করেন। পরবর্তিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের পহেলা জুন পদ্মা নার্সিং ইনস্টিটিউট (স্বারক নম্বর ৫৯.০০.০০০০.১৪৩.০৬.০২.২০১৮-১৩০/১(৬)) এর অনুমোদন প্রদান করেন।
সেই সময় লোভের বশবর্তী হয়ে মাহাবুর রহমান ও শরীফ আলী মুনমুন ইনস্টিটিউটি দখলের পায়তারা শুরু করে। ওই দুই জন মালিকানা নিয়ে নিতে ব্যাপক ভাবে তোড়জোড় শুরু করে এবং বাদি শরিফুল ইসলামকে নানাবিধ ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে।
এক পর্যায়ে ২০২১ সালের পহেলা মার্চ সকাল আনুমানিক ১০টা ৪০ মিনিট শরিফুল ইসলামকে ফোন করে রাজশাহী মহানগরীর জিরোপয়েন্টে জলিল বিশ্বাস মার্কেটে ডাকেন ওই দুই জন। শরিফুল ইসলাম সেখানে উপস্থিত হলে আসামী শরিফ আলী মুনমুন তাকে বলেন যে, তুমি বাহিরের লোক, ১০ লাখ টাকা চাঁদা না দিলে তুমি প্রতিষ্ঠান চালাতে পারবে না। সে সময় তারা আরো ভয়ভীতি দেখিয়ে বলেন যে, চাঁদার টাকা না দিতে পারলে আমাদের নামে প্রতিষ্ঠান স্ট্যাম্পে লিখে দাও আমরা প্রতিষ্ঠান চালাবো।
এই ভাবে কয়েক ঘণ্টা তাকে আটকিয়ে রেখে জোর পূর্বক মাহাবুর রহমান তার নামে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্য দেখিয়ে তিনশত টাকার একটি স্ট্যাম্পে শরিফুল ইসলামকে নানান ভয়-ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে জোর করে স্বাক্ষর করে নেয়। চুক্তিনামাটি ছয় মাসের মধ্যে রেজিষ্ট্রি করার বিধান থাকলেও তা রেজিষ্ট্রি না করে শুধুমাত্র নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে তালিকাভুক্ত করা হয়। এই ফল বলহীন চুক্তিনামার আলোকে প্রতিষ্ঠানের চলতি ব্যাংক হিসাব, এফ.ডি.আর এবং বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল কর্তৃক প্রতিষ্ঠানের আসল গভর্নিং বডিসহ পরিচালনা পর্ষদের নাম পরিবর্তন করে মালিক বণে যায়। পরবর্তিতে শরিফুল ইসলামকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠান হতে বের করে দেয়।
শরিফুল ইসলাম জানান, এতে তার প্রায় ২ (দুই) কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয় এবং মান সম্মান ক্ষুন্ন হয়। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটসহ নানান কারণে তিনি এত দিন কোন আইনী ব্যবস্থা নিতে পারেননি। এর সঙ্গে বিবাদীরা নানানভাবে লাগাতার হুমকি দিয়ে আসছেন তাকে। বর্তমানে পরিবেশ অনুকূলে হওয়ায় থানায় মামলাটি চলতি বছর ০২ সেপ্টেম্বর দায়ের করেছেন তিনি।
ওই মামলার প্রেক্ষিতে দুই অভিযুক্ত মাহাবুর রহমান ও শরীফ আলী মুনমুন আদলত থেকে আপসের শর্তে জামিন নেন। পরের ধার্য্য তারিখের আগেই আপোষ করে নেয়ার কথা থাকলেও তারা তা করেনি। সর্বশেষ ২৭ অক্টোবর আবার আদালতে হাজির হলে অভিযুক্ত দুই জনকে জেল-হাজতে প্রেরণ করেন বিচারক।
শরিফুল ইসলাম আরো অভিযোগ করেন, প্রতিপক্ষ বিষয়টি নিয়ে তাকে বিপদে ফেলতে নানানভাবে অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন। এরমধ্যেই তার বিরুদ্ধে চলতি বছর ১৪ অক্টোবর আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন মাহাবুর রহমান। শুধু তাই না, তার দায়ের করা মামলা উঠিয়ে নিতে তাকে নানানভাবে হুমকিও দেয়া হচ্ছে অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে। এ নিয়ে তিনি প্রাণনাশের আশঙ্কাতেও ভূগছেন।