বাঘায় গলা কেটে হত্যার ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার, উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে থামছেনা পরিবারের আহাজরি

রাজশাহী লীড

আব্দুল হামিদ মিঞা,বাঘা (রাজশাহী): রাজশাহীর বাঘায় আনিসুর রহমান নামে শ্রমিককে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নিহতের ভাইরা ভাই রায়হানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার(২৪ নভেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) মনিগ্রামের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক বজলু রহমান মাষ্টারের আমবাগান থেকে নিহত আনিসুরের গলা কাটা মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। নিহত আনিসুর রহমান বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের তুলশিপুর গ্রামের মৃত শামসুল মোল্লার ছেলে। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে বাড়ি থেকে মনিগ্রাম বাজারে এসে রাতের কোন এক সময়ে দুর্বৃত্তের হাতে খুন হন আনিসুর।

রোববার(২৪ নভেম্বর) নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সংসারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে  পরিবারের  বুক চাপড়িয়ে কান্না পাশের লোকজনের চোখের পানিও থামাতে পারেনি।

এক বছরের ছেলে সোহাগ জানেনা বাবাকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা । সাত বছরের মেঝ মেয়ে মদিনা চিন্তিত তার পড়া লেখা নিয়ে আর নিহতের ডিভোর্সী বড় মেয়ে আলপনা, স্ত্রী পারভিন বেগম আর ৭০ বয়োসার্ধ বিধবা মা আনজেরার আহাজারি এখন কেইবা তাদের দেখভাল করবে। এনজিও থেকে ঋণ নেওয়া টাকাই বা কে দিবে।
পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন আনিসুর রহমান। স্থানীয় এনজিওর কাছ থেকে আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। শ্রমিকের কাজ করে এনজিওর কিস্তি দিতেন আর সংসার চালাতেন।

নিহতের  স্ত্রী পারভিন বেগম জানান, পারিবারিক খরচের জন্য তার ভগ্নিপতি ( পারভিন বেগমের) রায়হান আলীর কাছ থেকে  ধারে টাকার নেওয়ার জন্য শুক্রবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে মনিগ্রাম বাজারে যান। পরে আর বাড়িতে ফেরেনি। পরে শোনেন,আমবাগানে তার স্বামীর গলাকাটা মরদেহ পড়ে আছে। কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, তার সংসার দেখা শোনার আর কেউ রইলোনা। কে করবে ছেলে মেয়েদের দেখভাল আর কিস্তির টাকাই বা কে দিবে। তার ভাষ্য মতে,৪টা এনজিওর কাছ থেকে ঋণে নেওয়া টাকা দিয়ে আধাপাকা বাড়ি নির্মাণসহ সংসার পরিচালনা করেছেন।

নিহতের ভাই আনারুল ইসলাম ও চাচাতো ভাই কবি হাফিজুর রহমান জানান, রাত দশটায় বাড়িতে না ফেরা দেখে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ খবর নিতে থাকেন। শনিবার সকাল  ৮টার দিকে জানতে পারেন মনিগ্রামের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক বজলু রহমান মাষ্টারের আমবাগানে তার মরদেহ পড়ে আছে। আত্মীয় স্বজন নিয়ে সেখানে গিয়ে পরিধেয় বস্ত্র পরা অবস্থায় পড়ে থাকা গলা কাটা মরদেহ দেখে সনাক্ত করেন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

হত্যার পরে জানতে পারেন মনিগ্রাম  বাজারে গিয়ে ভাইরা রায়হান আলীর কাছ থেকে মনিগ্রাম বাজারের ছাগল বেচা কেনার স্থানে ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। ভাইরা রায়হান আলীকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের আগে তিনি জানিয়েছিলেন তার কাছ থেকে  ৫ হাজার টাকা নিয়ে সন্ধার পরে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়।

চারঘাট-বাঘার মেইন সড়ক থেকে পূর্ব দিকে আনিসুরের বাড়ির যাওয়ার রাস্তায় বজলু নামের একজন চা ব্যবসায়ী জানান,বাড়িতে ফেরার পথে মাঝে মধ্যে তার চায়ের দোকানে বসেন। সেদিন রাত ৮টায় বসেছিল।

পরিবার ও এলাকাবাসী জানায় সে একজন সরল সহজ মানুষ ছিল। সে কোন নেশায় আসক্ত ছিল না । এদিকে আনিসুর খুন হওয়ার পর বাঘা- চারঘাট সার্কেলের সিনিয়র এএসপি প্রণব কুমার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বাঘা থানা পুলিশ,ডিবি পুলিশসহ আইনপ্রয়োগকারি সংস্থা হত্যার রহস্য উদঘটনে তদন্ত শুরু করেছে। গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে রায়হানকে নির্দোষ দাবি করেছেন তার স্ত্রী সাথী বেগম।

মামলার তদন্তকারি অফিসার উপ পরিদর্শক (এসআই বাঘা থানা)  বজলুর রশিদ জানান,নিহত আনিসুরের স্ত্রী পারভিন বেগম বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। এ মামলায় আনিসুরের ভাইরা ভাই রায়হান আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *