এনসিপি’র উত্তরাঞ্চলের কেন্দ্রীয় সংগঠক বাঘার ইমরান ইমনের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ

রাজশাহী

আব্দুল হামিদ মিঞা,বাঘা(রাজশাহী): ২০১৩ সালে প্রথম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আসুন পরিবর্তনের রাজনীতি করি’ আহ্বান করে সুস্থ রাজনৈতিক চিন্তার মানুষদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন ইমরান ইমন । এর মাধ্যমেই তাঁর নতুনভাবে রাজনৈতিক পথ চলা শুরু হয়। এরপর অংশ নেন পিপলস পাওয়ার মুভমেন্ট (চবড়ঢ়ষবং চড়বিৎ গড়াবসবহ)এর সাথে, যা পরবর্তীতে রাষ্ট্রচিন্তা নামে কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ‘উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ’ ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’”রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন”২০২৪-এর জুলাইয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদের সাথে অংশগ্রহণের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকে ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত রাখতে সমন্বয় করেন ইমরান ইমন ।

সাফল্যের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখা পাড়া গাঁয়ের ছেলে সেই ইমরান ইমন,জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র কেন্দ্রীয় সংগঠক হিসেবে উত্তরাঞ্চলের দায়িত্ব পেয়েছেন। এর আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ছিলেন তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দলটির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সদস্য সচিব ফরিদুল হক বলেন,জনকল্যানমুখী সংগঠনের সাথে যারা কাজ করছেন, ইমরান ইমন তাদেরই একজন। ভালো সংগঠক হিসেবে দলের পক্ষ থেকে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ইমরান ইমন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার জোতরাঘব গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর পিতা ইয়াকুব আলী একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। মাতা আফিরা বেগম একজন গৃহিণী। ভাই বোনের মধ্যে তিনি বড়। এক কন্যা সন্তানের জনক, তার স্ত্রী একজন সরকারি কর্মকর্তা। স্থানীয় স্কুল ও কলেজে পড়াশোনার পর ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। পরে রাজনীতি করার কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করছেন।

জানা যায়, স্কুল জীবনে আবৃত্তি, গান ও বিতর্ক প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালিন বন্ধু-শুভাকাঙ্খীদের নিয়ে গড়ে তোলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এর প্রতিষ্ঠাকালিন আহবায়ক এর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের আলোচিত শিক্ষায় ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন এর অন্যতম একজন সংগঠক।
২০১৩ সালে প্রথম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘আসুন পরিবর্তনের রাজনীতি করি’ আহ্বান করে সুস্থ রাজনৈতিক চিন্তার মানুষদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। এর মাধ্যমেই তার রাজনৈতিক পথ চলা শুরু হয়। পরে অংশ নেন পিপলস পাওয়ার মুভমেন্ট(চবড়ঢ়ষবং চড়বিৎ গড়াবসবহঃ) এর সাথে। যা পরবর্তীতে রাষ্ট্রচিন্তা নামে কার্যক্রম শুরু করে।

২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন জোরালোভাবে শুরু হলে ‘উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ’ এর ব্যানারে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। একইভাবে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলন, গাইবান্ধার আদিবাসীদের ভূমি উদ্ধার আন্দোলন, চুনারঘাটের চা শ্রমিকের আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন।
২০১৮ সালে ভয়ংকর কারচুপির জাতীয় নির্বাচনের পরে রাষ্ট্রচিন্তা আন্দোলনের মাঠে ভাসানী অনুসারী পরিষদ, ছাত্র-যুব অধিকার পরিষদ ও গণসংহতি আন্দোলনের সাথে যৌথভাবে কাজ শুরু করলে রাষ্ট্রচিন্তার প্রতিনিধি হিসেবে যুব অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রচিন্তার অ্যাক্টিভিস্টদের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হলে, যুব অধিকার পরিষদ ছেড়ে পুনরায় রাষ্ট্রচিন্তার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

২০২২ সালের ৭ আগষ্ট, করোনার ভয়াবহ সংকটের মধ্যে এক অনলাইন প্রতিনিধি সভার মাধ্যেমে “রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন” নামে রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সে সময় এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত কাইয়ূম, সৈয়দ হাসিব উদ্দিন হোসেন ও ইমরান ইমন দেশবাসীর কাছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন। প্রতিষ্ঠাকালিন জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য ও নির্বাহী কমিটি গঠন করা হলে তাঁর উপর সংগঠনিক সমন্বয়কের দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়।
২০২৩ সালের ৮ আগস্ট ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে রাজনৈতিক জোট গঠন করা হলে জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি ।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ভোটারবিহীন ডামি নির্বাচনের মধ্যমে নতুন সরকার গঠিত হলে ভোট বাতিল ও পুনঃনির্বাচনের দাবিতে মাঠের আন্দোলনে সক্রিয় নেতৃত্ব দেন।

২০২৪-এর জুলাইয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদের সাথে অংশ গ্রহণের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকে ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত রাখতে সমন্বয় করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলের পক্ষের কর্মসূচিতেও নেতৃত্ব দান করেন। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম রাজনৈতিক নেতা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নেতৃত্বকালে সরকারী দল ও বিভিন্ন বাহিনী দ্বারা হামলা-বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছে বহুবার।

ইমরান ইমন জানান,বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কার ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আমি দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া আমার জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ এবং দায়িত্ববোধের বিষয়। এই অঞ্চলের মানুষের ন্যায্য অধিকার, সুশাসন ও রাষ্ট্র সংস্কারের যে আন্দোলন আমরা করছি, তা শক্তিশালী করা আমার প্রধান লক্ষ্য। এই দায়িত্ব পালনে আমি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই এবং আশা করি, জনগণের আস্থা ও সমর্থন আমাদের পথচলাকে আরও দৃঢ় করবে।

রোববার (১৬-০৩-২০২৫) ইমরান ইমনের জোতরাঘব এর বাড়িতে গিয়ে কথা হলে তার পিতা ইয়াকুব আলী জানান,ছাত্র জীবন থেকে জনকল্যাণকর কাজে তার অংশগ্রহন দেখে আমার মনে হয়েছে রাজনীতিতে জনগনের সমর্থন পেলে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারবে।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *