স্টাফ রিপোর্টার: বিপৎসীমায় ওঠার আতঙ্ক ছড়িয়ে কমতে শুরু করেছে রাজশাহীর পদ্মা নদীর পানি। একটু একটু করে পানি নামছে নিচের দিকে। কিন্তু পানির সঙ্গে নদীর তীররক্ষা বাঁধের কিছু কিছু ব্লকও নিচের দিকে সরে যেতে শুরু করেছে। ফলে ভাঙনের নতুন আতঙ্ক এখন পদ্মাপাড়ের বাসিন্দাদের চোখেমুখে।
রাজশাহী মহানগরীর প্রায় সব এলাকাতেই এখন পদ্মা নদীর পাড়ে কংক্রিটের তীররক্ষা বাঁধ রয়েছে। তবে নগরীর কেশবপুর থেকে পশ্চিমে বুলনপুর পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার বাঁধ বেশ পুরনো। নগরীর পাঁচআনি মাঠ থেকে পঞ্চবটি শ্মশানঘাট পর্যন্ত বাঁধটিও অনেক দিন আগের।
এ দুই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পানি সামান্য কমলেও ইতিমধ্যে কিছু কিছু স্থানের ব্লক সরে গেছে। পানি আরও কমার সাথে সাথে তীব্র ভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তবে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে কোথাও কোথাও ফেলা হচ্ছে বালুভর্তি জিও ব্যাগ।
কেশবপুর ঘোষপাড়া, গোয়ালপাড়া ও নবাবগঞ্জ ঘোষপাড়া এলাকায় নদীর তীররক্ষা বাঁধের পাড় ঘেঁষেই সরকারি জমিতে প্রায় দেড় হাজার পরিবারের বাস। বেশিরভাগেরই বাড়িতে ঢোকার প্রধান দরজা বাঁধের ওপর। আর বাড়িগুলোর দরজা থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরেই বয়ে যাচ্ছে ফুলে ফেঁপে ওঠা প্রমত্তা পদ্মার তীব্র স্রোত।
কেশবপুর গোয়ালপাড়া এলাকার বাসিন্দা লিজা বেগমের (৩০) বাড়ির সামনে বাঁধের ব্লকগুলো এক সারি থেকে আরেকটি সারি তিন থেকে চার ইঞ্চি পর্যন্ত সরে গেছে। লিজা বেগম জানালেন, গেল বছর পদ্মার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তাদের এলাকায় তীররক্ষা বাঁধে ধ্বস নামে। এবারও গত দুই দিন ধরে বাঁধের ব্লক একটু একটু করে সরে যেতে শুরু করেছে। পানি যত কমবে ব্লকের নিচের দিকে নেমে যাওয়াও তত বাড়বে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
নগরীর পাঁচআনি মাঠ, সেখেরচক ও পঞ্চবটি শ্মশানঘাট এলাকায় পদ্মার পাড় ঘেঁষে পাকা রাস্তা। রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাতও। ২০১৬ সালে পদ্মার পানি যখন কমছিল তখন সেখেরচক এলাকায় রাস্তাটির প্রায় ২০০ মিটার পাঁচ ফুটের মতো নিচের দিকে দেবে যায়। কয়েকটি বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়ার পাশাপাশি ফাটল দেখা দেয় পাঁচটি বাড়িতেও। কিছু দিন পরে রাস্তাটি আবার নতুন করে নির্মাণ করা হয়। এবারও সেরকম ধ্বসের আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা।
ওই এলাকার গিয়ে দেখা গেছে, সেখেরচক এলাকায় বাঁধের কিছুটা অংশ নিচু। সেখানে জমে আছে কিছু কচুরিপানা। স্থানীয়রা জানালেন, ২০১৬ সালে ঠিক এই জায়গাটিই নিচের দিকে দেবে গিয়েছিল। তারপর সংষ্কার করা হলেও জায়গাটি কিছুটা নিচুই থেকে যায়। এবার নদীতে পানি বৃদ্ধি হলে নিচু স্থানটিতে পানি ওঠে। গত শুক্রবার দিনগত রাতে পানি নেমেও গেছে। কিন্তু পানিতে আসা কচুরিপানাগুলো থেকে গেছে। এখন এই স্থানে আবার বাঁধের ব্লক একটু করে সরে গেছে।
সেখেরচক এলাকার বাসিন্দা ইদ্রিস আলী বলেন, সেই বছর (২০১৬ সালে) তো পানি কমার সাথে সাথে আমার ঘর দেবে গেছিল। ছেলে-মিয়েক লিয়ে পাশের বাড়িত আশ্রয় লিসুনু। এইবার যে কী হয় সেই চিন্তায় করছি! আল্লাকে ডাকছি, ভরসা রাখছি। কী হবে তিনিই ভালো জানেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. চৌধুরী সরওয়ার জাহান সজল বলছেন, শুধু পদ্মা নয়, প্রতিটি নদীতেই বন্যার পর ভাঙন দেখা দেয়। আর এটা হয় বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার কারণে। তিনি বলেন, নদীতে যখন পানি বাড়ে তখন তা পাড়ের মাটির নিচেও ঢোকে। এতে মাটির ওজন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু দ্রুতই পানি কমতে থাকলে সেই মাটি আর নিজের ওজনসহ এক জায়গায় থাকতে পারে না। নিচের দিকে নামতে থাকে। এ কারণে বন্যার পরই ভাঙন হয়। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
জানতে চাইলে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম বলেন, বন্যার পর নদীপাড়ে ভাঙন দেখা দেয় এটা স্বাভাবিক কথা। এ ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। ভাঙন দেখা দিলে তা ঠেকানোর জন্য যত টাকাই দরকার হোক না কেন আমরা জরুরি ভিত্তিতে তা করতে পারব। ইতিমধ্যে কেশবপুরের যে এলাকায় ব্লক সরে যেতে শুরু করেছে সেখানে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা জানান, রাজশাহীতে পদ্মার পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। গেল সপ্তাহে হঠাৎ করেই নদীতে দ্রুত পানি বাড়তে শুরু করে। তারপর সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ১৯ মিটার পর্যন্ত উঠেছে পানিপ্রবাহ। গত বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় নগরীর বড়কুঠি পয়েন্টে পানির এই প্রবাহ রেকর্ড করা হয়। তবে এর পর থেকেই পানি কমতে শুরু করেছে। রোববার বেলা ৩টায় পানি পাওয়া গেছে ১৮ দশমিক ০৫ মিটার। নদীর পানি এখন কমতেই থাকবে।
স্ব.বা/শা