নাটোর প্রতিনিধি: নওগাঁয় জন্ম নেওয়া আনোয়ার (৪৫) পেশায় একজন জেলে হলেও তার আসল নেশা ছিল নারী হত্যা। এ পর্যন্ত তিনি আটজন নারীকে হত্যা করেছেন। রবিবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে নাটোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য জানান পুলিশের রাজশাহী বিভাগীয় ডিআইজি একেএম হাফিজ আক্তার।
গত ১৯ অক্টোবর নাটোর শহরের রেলস্টেশন এলাকা থেকে বাবুকে গ্রেফতার করে জেলা পুলিশ। এর আগে তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। এরইমধ্যে বাবু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, তার পুরো নাম আনোয়ার ওরফে আনার ওরফে বাবু শেখ ওরফে কালু (৪৫)। বাবু’র জেলে পেশার আড়ালে আসল নেশা ও উদ্দেশ্য ছিল মানুষ হত্যা ও চুরি করা। এ পর্যন্ত তিনি আটজন নারীকে হত্যা করেছেন বলে পুলিশের কাছে শিকার করেছেন। তার টার্গেট ছিল মূলত নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত নারীরা। তার হাতে প্রাণ হারানো নারীদের বয়স ১৩ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে যেখান থেকে সহজেই পার পাওয়া যাবে এমন জায়গাগুলোই বেছে নিতেন বাবু শেখ ওরফে আনোয়ার।
ডিআইজি একেএম হাফিজ আক্তার জানান, এসব হত্যাকাণ্ডে তাকে আরও চারজন সহযোগীতা করতেন। তারা হলেন – রুবেল আলী (২২), আসাদুল (৩৬) ও শাহিন (৩৫)। এছাড়াও হত্যার পর চুরি করা স্বর্ণালঙ্কার শহরের লালবাজার এলাকার স্বর্ণ ব্যাবসায়ী লিটন খাঁ (৩০)। তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার জানান, অত্যধিক চুরির কারণে বাবু শেখকে নওগাঁয় তার জন্মস্থান থেকে তাড়িয়ে দেয় গ্রামবাসী। এরপর থেকে তিনি সহযোগীদের নিয়ে জেলে সেজে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মাছ ধরে বিক্রি করতেন।
তবে, মাছ বিক্রির অজুহাতে ছিল এলাকার খোঁজখবর যে কোনও নারী একা বাড়িতে থাকেন কিনা। আশপাশে কে কে থাকে? ওই বাড়িতে কিভাবে যেতে হবে ইত্যাদি। তারপর তারা ওই বাড়িতে গিয়ে ওই নারীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ যা পেতেন তা নিয়ে পালিয়ে যেতেন বাবু ও তার সহযোগীরা। তবে, হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়ে গেলে আর ওই এলাকায় থাকতেন না তারা। এমন ঘটনাও ঘটেছে যে কোনও নারীকে হত্যার পর ওই বাড়ি থেকে কিছুই পায়নি।
ডিআইজি আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে বাবু এ পর্যন্ত আটটি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। এর মধ্যে নাটোর জেলায় ৫টি, নওগাঁয় ১টি আর টাঙাইল জেলায় ২টি। এছাড়াও নওগাঁ জেলার সদর থানায় ২০০৭ সালে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডটি তার নেতৃত্বেই হয়েছিল। যার রহস্য এরই মধ্যে উদঘাটিত হয়েছে। সে টাঙ্গাইল জেলার মীর্জাপুর থানার বাঁশতৈল গ্রামের রুপ বানু (৪৫) ও একই জেলার সখিপুর থানার তক্তারচালা এলাকার সমলাকে (৬০) হত্যা করেছেন বলে স্বীকার করেছেন বাবু। এমনকি স্কুলছাত্রী মরিয়ম খাতুন লাবণীকে (১৩) হত্যার আগে ধর্ষণ করেছে বলেও পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি ও পুলিশ সুপার জানান, গত ৮ অক্টোবর রাতে লালপুরের চংধুপইলে সাবিনাকে হত্যা করে তার স্বর্ণের চেইন, কানের দুল ও একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় বাবু ও তার সহযোগীরা। এরপর বাগাতিপাড়ার জয়ন্তীপুরে রেহেনা বেগমকে হত্যা করে ১৬ হাজার টাকা নিয়ে যায় তারা। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশ ১৫ অক্টোবর সিংড়া থেকে রুবেলকে গ্রেফতার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই দিন সন্ধ্যায় লিটন খাঁর দোকান থেকে লালপুরের ঘটনায় চুরি হওয়া স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধারসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। আসামি লিটন ও রুবেলের দেয়া তথ্যমতে পরের দিন নাটোর রেলস্টেশন এলাকা থেকে আসাদুলকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় একই জায়গা থেকে বাবু শেখকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হবে এবং আরও তথ্য উদঘাটনের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হবে।
এসপি লিটন কুমার সাহা জানান, বাবু শেখ আরও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে কিনা তা বের করে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন।
স্ব.বা/শা