তানোরে সালিশের নামে একটি নিরহ পরিবারের ওপর ১৫দিন ধরে চলছে প্রহসন

রাজশাহী লীড

সারোয়ার হোসেন,তানোর: রাজশাহীর তানোর উপজেলার কাঁমারগাঁ ইউপির কৃষ্ঠপুর গ্রামে সালিশের নামে একটি নিরহ পরিবারের ওপর ১৫দিন ধরে করে চলছে প্রহসন বলে অভিযোগ উঠেছে। চলতি ৯ নভেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাতে কৃষ্ঠপুর গ্রামের গ্রাম্য সালিশদারগণ বিচার নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে এই অমানবিক ঘটনা ঘটিয়েছে। এদিকে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় মুহুতের মধ্যে শুরু হয়ে যায় তোলপাড় ও সমালোচনার ঝড়।

প্রত্যক্ষদর্মীরা জানান, কলমা ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম (মেম্বার), চৌরখৈর গ্রামের মোজাম, কাঁমারগা ইউপি সদস্য শয়ন প্রামানিক ও সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম, জার্জিস মন্ডল ও গ্রাম প্রধান মোজাম মন্ডল প্রমূখগণ সালিশ বৈঠক করে একটি মেয়েকে কৃষ্ঠপুর গ্রামের মোবারক হোসেনের বাড়িতে জোরপূর্বক তুলে দেন। এদিকে সালিশদারগণের এমন অমানবিক আচরণে অসুস্থ মোবারক হোসেন হঠাৎ করেই মানসিক টেনশনে শয্যাশয়ী হয়ে মূত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। স্থানীয়রা সচেতন মহল এ ঘটনায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও মানবাধিকার সংস্থার জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা বলেন, অপরাধ হলে আইনের আশ্রয় নিবে তাই বলে সালিশদারগণ আইন হাতে তুলে নিতে পারে না।

জানা গেছে, তানোরের কাঁমারগা ইউপির কৃষ্ঠপুর গ্রামের বাসিন্দা মোবারক হোসেনের পুত্র গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে তানোরের কলমা ইউপির চাকুইট গ্রামের জনৈক ব্যক্তির কন্যা ও তালন্দ লোলিত মোহন ডিগ্রী কলেজের এক ছাত্রীর মুঠোফোনের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু গোলাম রাব্বানী এই অভিযোগ অস্বীকার করে এখন তাকে বিয়ে করতে অসম্মতি জানায়। এ ঘটনায় চলতি বছরের ৮ নভেম্বর বৃ¯প্রতিবার ওই ছাত্রী বিয়ের দাবিতে রাব্বানীর বাড়িতে প্রবেশের চেস্টা করে কিন্তু বাড়ির লোকজন বাধা দেয়ায় বাড়িতে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু রাব্বানী বাড়ি না থাকায় গ্রাম্য মাতব্বরগণ ওই ছাত্রীকে মোজাম মন্ডলের বাড়িতে রাখে। এদিকে রাব্বানীর দুলা ভাই আব্দুস সালাম এ ঘটনায় তানোর থানায় লিখিত অভিযোগ করলে পরের দিন শুক্রবার বিকেলে থানা পুলিশ ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করতে যায়।

এ সময় গ্রামের কিছু লোকজন পুলিশের ওপর চড়াও হয় ও ওই ছাত্রীকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে অস্বীকার করে ওই রাতেই কুষ্ঠপুর গ্রামে সালিশ বৈঠক হয়। সালিশ বৈঠকে রাব্বানীর দুলাভাই আব্দুস সালামকে জিম্মি করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে তারা জোরপূর্বক ওই ছাত্রীকে রাব্বানীর বাড়িতে তুলে দেন। আর গ্রামবাসীকে পিকনিক করার জন্য উভয় পক্ষের ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এবিষয়ে রাব্বানীর দুলাভাই আব্দুস সালাম বলেন, তার শ্যালক এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, তিনি বলেন, ওই ছাত্রী আইনের আশ্রয় নিক তার শ্যালক যদি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে তাহলে তাদের বিয়ে দিতে তাদের কোনো আপত্তি নাই। তিনি আরো বলেন, গ্রাম্য মাতব্বরগণ আইনের আশ্রয় না নিয়ে একটি মেয়েকে জোরপূর্বক অন্যর বাড়িতে তুলে দিয়েছে এটা বিচার নামে প্রহসন ব্যতিত কিছু নাই তারাও এটার বিচার দাবি করেছেন। এ বিষয়ে সালিশ বৈঠকের সভাপতি ও ইউপি সদস্য শয়ন প্রামানিক বলেন, পুরো গ্রামবাসির উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠক হয়েছে এবং সকলের সম্মতিতে ওই ছাত্রীকে তার প্রেমিক গোলাম রাব্বানীর বাড়িতে তুলে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রামের লোকজন দুদিন ধরে অনেক পরিশ্রম করেছে তাই তাদের পিকনিক করার জন্য উভয় পক্ষের কাছে থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে দেয়া হয়েছে। এব্যাপারে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এব্যাপারে ভিকটিম ছাত্রী বলেন, তাকে শরিফুল মেম্বার ও মোজাম প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আইনের আশ্রয় নিতে না দিয়ে জোরপূর্বক ছেলের বাড়িতে তুলে দিয়েছে তবে এতে তিনি খুশি এখন ছেলে আসলে তাকে বিয়ে করে সংসার করবেন বলে জানান তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *