শরীয়তপুরে যৌতুক না দেয়ায় সাউন্ড বক্সে গান বাজিয়ে গৃহবধূকে হত্যা!

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: শরীয়তপুরের নাড়িয়ায় যৌতুকের টাকার জন্য সুমাইয়া আক্তার (১৯) নামের এক গৃহবধূকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাতে উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের পাঁচগাও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত সুমাইয়া আক্তার উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের পাঁচগাও গ্রামের ইতালী প্রবাসী জুলহাস মাদবরের স্ত্রী। এ ঘটনায় নড়িয়া থানা পুলিশ মামলা না নেয়ায় মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) শরীয়তপুর আদালতে মামলা করেছে নিহত সুমাইয়ার পরিবার।

মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল উপজেলার পাঁচগাও গ্রামের আব্দুর রব শেখের মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে একই গ্রামের দুলাল মাদবরের ছেলে ইতালী প্রবাসী জুলহাস মাদবরের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে কয়েক মাস সংসার জীবন ভালোই কাটছিল তাদের। পরে জুলহাস ঢাকায় বাড়ি কিনবে বলে সুমাইয়াকে তার বাবার বাড়ি থেকে ১০ লাখ টাকা যৌতুক আনতে বলে।

টাকা দিতে অস্বীকার করলে স্বামী জুলহাস মাদবর (৩০), শশুর দুলাল মাদবর (৫৮), শাশুড়ি সেলিনা বেগম (৪৫), ননদ আলো বেগম (২৫), চাচা শশুর সিরাজ মাদবর (৫৫), মোহর চান মাদবর (৫৭), তার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা আক্তার (২০), আছিয়া আক্তার (১৯), ছেলে মতিউর রহমান মাদবর (২৫) মিলে সুমাইয়াকে মানসিক ও শারীরিকভাবে করতে থাকে।

গত ৮ নভেম্বর স্বামী জুলহাসের হুকুমে আবার সুমাইয়াকে যৌতুকের জন্য চাপ প্রয়োগ ও মারধর করা হয়। সেই ধারবাহিকতায় পূর্বপরিকল্পনা মতে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে টাকা দিতে অস্বীকার করলে সুমাইয়াকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন মারধর করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে উঁচু করে বেঁধে হত্যার চেষ্টা করে। তখন তার চিৎকারে আশপাশের মানুষ এগিয়ে আসে। গুরুতর আহত অবস্থায় রাত ১১টার দিকে তাকে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতলে প্রেরণ করেন।

সদর হাসপাতলে না নিয়ে সুমাইয়ার স্বামীর পরিবার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুমাইয়ার মৃত্যু হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্ত শেষে রোববার (১৭ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে তার স্বামীর বাড়িতে এনে জানাজা শেষে চন্ডিপুর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এ ঘটনায় কেদারপুর ইউপি সদস্য বিল্লাল হোসেন মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এলাকার অনেকে জানান, সুমাইয়ার ননদ আলো বেগম, চাচা শ্বশুর মোহর চান মাদবর, তার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা আক্তার, আছিয়া আক্তার, ছেলে মতিউর রহমান মাদবর মিলে শুক্রবার রাতে জুলহাসের বাসার ভেতর সাউন্ড বক্সে বিকট শব্দে গান ছেড়ে মারধর করে সুমাইয়াকে। পরে তাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে উঁচু করে বেঁধে হত্যার চেষ্টা করে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং যারা অপরাধী তাদের বিচার দাবি করেন এলাকাবাসী।

সুমাইয়ার মা মাফিয়া বেগম বলেন, আমার একটাই মেয়ে। মেয়েটা সুখে থাকবে বলে বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু জুলহাসরা এত খারাপ জানতাম না। ১০ লাখ টাকার জন্য ওরা আমার মেয়েকে মারধর করে কষ্ট দিয়ে মেরেছে। মেয়েকে হত্যা করে তারা বলছে আমার মেয়ে নাকি গলায় দড়ি দিছে। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।

তিনি বলেন, সুমাইয়াকে মারধর করে নড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করে এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে ভর্তি করে কিন্তু আমাকে কিছুই জানায়নি। যখন আমার মেয়ে মারা যায় তখন আমাকে জানায়, আপনার মেয়ে গলায় দড়ি দিয়ে মারা গেছে। আমার মেয়ের বিচার চেয়ে আত্মীয় স্বজন ও সাক্ষীদের নিয়ে নড়িয়া থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। তাই শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মামলা করেছি।

সুমাইয়ার ভাই রায়হান শেখ বলেন, জুলহাসের অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। সেটা সুমাইয়া জেনে যায়। ননদ আলো বেগমের পরকীয়াও যেনে যায় সুমাইয়া। এগুলো নিয়েও তাকে নির্যাতন করতো তারা। তাছাড়া যৌতুকের টাকা দিতে পারি নাই তাই বোনটাকে হত্যা করলো তারা।

অভিযুক্ত সুমাইয়া আক্তারের ননদ আলো বেগম বলেন, আমরা ভাবিকে হত্যা করবো কেন? সে নিজেই গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মরতে চেয়েছে। আমরা বাঁচানোর চেষ্টা করেছি।

নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. এসএম তৌহিদুল বাসার বলেন, সুমাইয়াকে যখন হাসপাতালে আনা হয় তখন রাত ১১টা। তখন তার প্রচুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল এবং অজ্ঞানের মতো ছিল। গলা দিয়ে গড়গড় শব্দ হচ্ছিল। গলায় হালকা দাগ ছিল। তখন অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছিলাম। তখন যারা তার সাথে আসছে তাদের জিজ্ঞাস করলাম রোগির আপন লোক কে? কিন্তু দেখলাম কেউ আপন না, সবাই দূর সম্পর্কের লোকজন। তারা চারদিকে তাকাচ্ছিল। আমার সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। আপন কেউ না আসায় আমার সন্দেহ হয়- এটা আত্মহত্যা না-কি তাকে আত্মহত্যার চেষ্টা করানো হয়েছিল। রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে রেফার্ড করি।

নড়িয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় কেউ মামলা বা অভিযোগ করতে থানায় আসেনি। স্থানীয় কিছু লোকজন আমাদের তথ্য দিয়েছিল যে, সুমাইয়া আত্মহত্যা করেছে।

ঢাকার শাহাবাগ থানায় যোগাযোগ করেছিলাম। ময়নাতদন্তর রিপোর্ট পেলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সূত্র: পূর্বপশ্চিমবিডি।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *