উচ্চ আদালতের নির্দেশের পরও রাজশাহীতে ফসলি জমিতে পুকুর কাটা চলছেই

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: উচ্চ আদালতের নির্দেশের পরও রাজশাহীতে পুকুর কাটা বন্ধ হয়নি। প্রশাসনের কর্মকর্তারা অভিযোগ পেয়ে পুকুর কাটা বন্ধ করার পরপরই আবারও শুরু হচ্ছে কাজ। প্রশাসনের সঙ্গে এ লুকোচুরিতে মদদ জোগাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলে অভিযোগ উঠেছে।

উল্লেখ্য, গত ১০ মার্চ হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রাজশাহী জেলায় পুকুর কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজশাহী জেলার আনাচে-কানাচে গত কয়েক বছরে ফসলি জমি উজাড় করে নির্বিচারে বিপুলসংখ্যক পুকুর কাটা হয়েছে।

জমি ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন আয়তনের নতুন সাড়ে ৫ হাজার পুকুর কেটে মাছচাষ করছে একশ্রেণির লোক। এতে পরিবেশগত প্রতিকূলতার পাশাপাশি রাজশাহীতে কৃষিজমি কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। এতে শস্য ভাণ্ডারখ্যাত রাজশাহী জেলায় কৃষিপণ্যের উৎপাদনও কমছে।

অন্যদিকে পুকুর এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে আশপাশের জমিতে ফসল করতে পারছেন না কৃষকরা। এসব কারণে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ফসলি জমিতে পুকুর কাটা বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

অভিযোগে জানা গেছে, জেলার তানোর উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া এলাকায় সম্প্রতি ২৫ বিঘা ফসলি জমিতে পুকুর কাটা শুরু করেছেন পার্শ্ববর্তী মোহনপুর উপজেলার ধুরইল গ্রামের বাবু নামের এক ব্যক্তি। তানোর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি লুৎফল হায়দার ময়নার পৃষ্ঠপোষকতায় পুকুর কাটা হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

তবে গত ২৬ নভেম্বর এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে পুকুর কাটা বন্ধ করে দেন। কিন্তু তারা ঘটনাস্থল ত্যাগের পরপরই আবার পুকুর কাটার কাজ শুরু হয়।

জানা গেছে, তানোরের যুবলীগ নেতা ময়না চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগে তানোরের ইউএনও সম্প্রতি জেলা প্রশাসন ও মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এরপরও পুকুর কাটা থেকে শুরু করে খাস জমি ও পুকুর দখলে ময়না চেয়ারম্যানের দৌরাত্ম্য কমেনি। জানতে চাইলে ময়না চেয়ারম্যান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

এদিকে প্রশাসন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশের পরও কীভাবে পুকুর কাটছেন জানতে চাইলে পুকুরের মালিক বাবু বলেন, ‘তিনি ময়না চেয়ারম্যান ও প্রশাসনকে বলেই পুকুর কাটছেন। আমার কাজ শেষের পথে। আপনারা এখন ঝামেলা করবেন না।’

এদিকে প্রশাসনের নানাবিধ তৎপরতার পরও রাজশাহীর তানোর, মোহনপুর, বাগমারা, পুঠিয়া, দুর্গাপুর, গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলায় ফসলি জমিতে পুকুর কাটা বন্ধ হয়নি।

প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মদদে প্রভাবশালীরা পুকুর কাটছেন আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। বিশেষ করে জেলার তানোর ও পবা উপজেলায় পুকুর কাটা বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক জানান, জেলার কোথাও পুকুর কাটতে দেয়া হচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসনকে পুকুর কাটা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপরও কেউ আইন লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সূত্র: যুগান্তর।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *