রাজশাহী বিএমডিএ’র রেস্ট হাউজ চেয়ারম্যানের দখলে

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত অফিসের রেস্ট হাউজগুলো করা হয়ে থাকে সাধারণত বাইরে থেকে ভিআইপি কোনো অতিথি এলে তাঁদের থাকার জন্য। অতিথিরা কয়েকদিনের জন্য সেই রেস্ট হাউজে অবস্থান করে আবার নিজ কর্মস্থলে ফিরে যান। এটাই নিয়ম।

কিন্তু এই নিয়মের যেন কোনো বালাই নাই রাজশাহীতে অবস্থিত বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র (বিএমডিএ) রেস্ট হাউজের ক্ষেত্রে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে গত চার বছর ধরেই তিনি পুরো রেস্ট হাউজটিই ব্যবহার করে আসছেন।

রেস্ট হাউজের তিনটি কক্ষ দখল করে তিনি যেন ঘর-বাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন। ফলে বিএমডি’র কাজে বাইরে থেকে রাজশাহীতে এসে রেস্ট হাউজ না পেয়ে রাজশাহীর হোটেলে বা অন্য কোথাও অবস্থান করতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। এ নিয়ে চরম ক্ষোভও আছে। কিন্তু চেয়ারম্যানের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

এদিকে রেস্ট হাউজ দখলে রাখা ছাড়াও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনে বিএমডিএর পাজেরো গাড়ী ব্যবহার করে মাসে বিপুল অংকের টাকার জ্বালানী খরচসহ বাড়ির কাজের লোককেও অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে দেখিয়ে বেতন উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এর বাইরে চেয়ারম্যান বিএমডিএ’র ভবন সংস্কার কাজের নামে ১০ লাখ টাকার কোটেশন নিয়েছেন সম্প্রতি। এসব নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে বিএমডিএ জুড়ে।

বিএমডিএ সূত্র মতে, প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একজন করে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে স্বায়ত্বশাসিত এ প্রতিষ্ঠানিতে এ পদে একজন করে নিয়োগ দেওয়া হয় রাজনৈতিক ব্যক্তি। এর আগে এখানে চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নূরুল ইসলাম ঠান্ডু। তাঁকে সরিয়ে বছর চারেক আগে নওগাঁর সাবেক এমপি আকরাম হোসেনকে দায়িত্ব দেয় সরকার। কিন্তু আকরাম হোসেন এখানে চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের পর থেকেই তিনি বিএমডিএ’র প্রধান কার্যালয়ের ভিতরে রাজশাহী নগরীর বিলসিমলা এলাকায় রেস্ট হাউজটি ব্যবহার করে আসছেন।

রেস্ট হাউজের তিনটি কক্ষ চেয়ারম্যান একাই দখল করে আছেন। পাশাপাশি তাঁর সেবা করার জন্য রাখা ব্যক্তিগত একজন কর্মচারীকে বিএমডিএ’র কর্মচারী হিসেবে অস্থায়ী নিযোগ দেখিয়ে বেতন উত্তোলন করে যাচ্ছেন এখনো। এর আগে যোগদানের পর থেকে তিনি ৪-৫ জনের বেতন উত্তোলন করে সরকারি অর্থ অপচয় করতেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান আকরাম হোসেনের ঢাকায় নিজস্ব বাড়িতে কাজ করেন এমন দুইজন কর্মচারীও ছিলেন। বছর দুয়েক তিনি এভাবে বেতন উত্তোলন করেন ৪-৫ জনের নামে। পরে সেই বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয় বিএমডিএ’র পক্ষ থেকে।

বিএমডিএ’র দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, চেয়ারম্যান এভাবে দিনের পর দিন রেস্ট হাউজ পুরোটাই ব্যবহার করতে পারেন না। তাঁর কারণে বাইরে থেকে আসা কর্মকর্তারা রেস্ট হাউজে থাকতে পারেন না। ফলে হোটেল বা অন্য কোনো স্থানে থাকতে হয় তাঁদের। এতে করে তাঁদের থাকার জন্যেও বাড়তি খরচ ব্যয় করতে হয় বিএমডিএ’কে।’

আরকেজন কর্মকর্তা বলেন, ‘চেয়ারম্যান বাড়ির কাজের লোকজনের নামেও দিনের পর দিন বেতন উত্তোলন করেছেন। এ নিয়ে যারা প্রতিবাদ করেছেন, তাদের বিপক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন চেয়ারম্যান। কাউকে কাউকে চাপ প্রয়োগ করে বদলিও করা হয়েছে।’

সূত্র আরো জানায়, চেয়ারম্যানের গ্রামের বাড়ি হলো নওগাঁর মহাদেবপুরে। তিনি মাসে ৮-১০ বার যাতায়াত করেন ওই বাড়িতে। এ সময়ে বিএমডিএ’র পাঁজেরো গাড়িটিই ব্যবহার করেন। ফলে মাসে ৫০-৬০ হাজার টাকার জ্বালানীর অপচয় করেন তিনি। আবার এই বাড়িতে যাতায়াতের জন্য তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ে টিএ-ডিএ হিসেবে অর্থও দাবি করেন। তবে মন্ত্রণালয় থেকে সেই অর্থ ছাড় করা হয়নি।

বিএমডিএ’র একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘চেয়ারম্যান যদি বিএমডিএ’র কোনো কাজে গিয়ে গাড়ি ব্যবহার করেন, তাহলে সেটি ঠিক ছিল। কিন্তু তিনি যোগদানের পর থেকেই মাসে অন্তত ৮-১০ দিন যান তাঁর গ্রামের বাড়িতে বিএমডিএ’র গাড়ি নিয়ে। এতে করে সরকারি অর্থ অপচয় হচ্ছে।’

সূত্র আরো জানায়, চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন সম্প্রতি নওগাঁ জোনের একটি ভবন সংস্কারের নামে ১০ লাখ টাকার কোটেশন নিয়েছেন। তিনি আরো বেশি টাকা দাবি করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ভবন সংস্কারের নামে তাঁকে ১০ লাখ টাকার কাজ দেওয়া হয়। তিনি তাঁর পছন্দের একজন ঠিকাদারকে দিয়ে কিছু পরিমাণ কাজ করিয়ে সেই টাকা উত্তোলন করে নেন। এ নিয়েও বিএমডিএজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে।’

এদিকে সম্প্রতি চেয়ারম্যান দুর্নীতিবাজ বিএমডিএর সাবেক সচিব ও বিএনপি নেতা ব্যারিস্ট্রার আমিনুল হকের ভাই আসাদুজ্জামান আসাদের সঙ্গে ঢাকায় একটি গোপন বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের ছবি পরে ভাইরাল হলে বিএমডিএ’র কর্মকর্তাদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আসাদুজ্জামান আসাদের বিরুদ্ধে বিএমডিএ’র তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

এসব নিয়ে যোগাযোগ করা হলে চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন বলেন, ‘নিজের নিরাপত্তার জন্য রেস্ট হাউজটি ব্যবহার করি। বাইরে কোথাও থাকাটা নিরাপদ মনে করি না। আবার লোকজনেও ঝামেলা করে, তাই এখানেই থাকি।’

তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনের কারণেই সরকারি গাড়ি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যায়। তবে নিজের বাড়ির কর্মচারীদের নামে বেতন উত্তোলন ও কোটেশনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। সূত্র: সিল্কসিটি।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *