উল্লাপাড়ায় ২ সন্তানের জননীর মাথার চুল কেটে দিলো আ’লীগ নেতা

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ২ সন্তানের জননীর মাথার চুল বটি দিয়ে কেটে দিয়েছে এক আওয়ামী লীগ নেতা। ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর নাম বিলকিস খাতুন (৩৪)। তার স্বামীর নাম জাহাঙ্গীর হোসেন। তাদের বাড়ি উধুনিয়া ইউনিয়নের গজাইল গ্রামে।

অভিযুক্ত ব্যক্তি উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ আব্দুর রশিদ। ঘটনার সময় তার সঙ্গে ৪ সহযোগী ছিল বলে জানা গেছে।

গত ২৫ নভেম্বর রাতে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ নিজেই বাদী হয়ে ২ ডিসেম্বর উল্লাপাড়া মডেল থানায় ওই আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ৪ সহযোগীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০/৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। যার নং ২। এ মামলার অপর আসামিরা হলো,গজাইল গ্রামের মোজাহারের ছেলে মুনসুর (৩৮), বাহের প্রামাণিকের ছেলে আব্দুস সালাম (৪৫), নাসির উদ্দিন (৪০) ও শহিদুল ইসলাম (৩২)।

এ মামলা দায়ের করার পর থেকে আসামিরা ভুক্তভোগীকে হুমকি দিয়ে আসছে। একের পর এক হুমকির ভয়ে ওই গৃহবধূ পার্শ্ববর্তী তরফ বায়রা গ্রামের বাবার বাড়ি গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আর এ ঘটনার পর থেকে গ্রেফতার এড়াতে ওই আওয়ামী লীগ লীগ নেতা ও তার সহযোগীরা আত্মগোপনে থেকে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এ বিষয়ে নির্যাতিতা বিলকিস খাতুন বলেন, ‘গত ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় আমি আমার এক আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের খোঁজে বের হই। পথিমধ্যে একই গ্রামের মৃত আবেদ আলীর ছেলে সাইফুল ইসলামের বাড়ির পাশে উধুনিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গজাইল গ্রামের মৃত বেলায়েত সরকারের ছেলে মোঃ আব্দুর রশিদ ও তার ৪ সহযোগী আমার পথরোধ করে। এরপর সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আমাকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করেছে বলে চিৎকার শুরু করে।

এ সময় গ্রামের লোকজন ছুটে এলে তাদের সামনে আমাকে বিবস্ত্র করে মারপিট করে। এতেও তারা ক্ষান্ত হয়নি। কয়েকশ লোকের সামনে মাছকাঁটা বটি দিয়ে আমার মাথার চুল কেটে উল্লাস করে। এ সময় আমি তাদের কাছে নানা কাকুতি-মিনতি করলেও তারা বিন্দুমাত্র সাহায্য না করে নির্দয়ভাবে আমার মাথার চুল কেটে দেয়।

এ ঘটনার পরেও তারা ক্ষান্ত হয়নি। ওই রাতেই তারা ছুটে যায় গজাইল বাজারের শরিফ নামে এক সেলুন শ্রমিকের কাছে। সেখানে গিয়ে তারা আমার মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার জন্য তার কাছে খুর- কাঁচি চায়। কিন্ত ওই সেলুন শ্রমিক তাদের খুর-কাঁচি দিতে রাজি না হওয়ায় তাকেও তারা মারধর করে।’ সেলুন শ্রমিক শরিফ এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘তারা আমাকে অন্যায় ভাবে মারপিট করেছে।’

নির্যাতিতা গৃহবধূ আরও জানান, ‘আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রশিদ দীর্ঘদিন ধরে আমাকে নানা ভাবে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। এতে আমি রাজি না হওয়ায় এবং আমার বাড়ির ডিস সংযোগ লাইন বারবার কেটে দেওয়া নিয়ে তার সঙ্গে পূর্ব বিরোধের জের ধর সে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সবার সামনে মাথার চুল কেটে নির্যাতন করা হয়েছে। এতে আমি সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছি। এ ঘটনার পর থেকে আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি এবং ভেঙ্গে পড়েছি। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছি না। এমনকি সমাজের কাছে মুখ দেখাতে পারছি না। লজ্জা ও ঘৃণায় বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। ফলে এক রকম নিজ বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছি।’

এ সব কথা বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি আরও বলেন, ‘এখন মামলা তুলে নিতে আমাকে ও আমার পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ঘটনার পর ঘটনাস্থল থেকে ওই গৃহবধূ কোনমতে পালিয়ে তার সন্তানদের নিয়ে পার্শ্ববর্তী তরফ বায়রা গ্রামের বাবার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। এরপর বাবার বাড়ির লোকজনের কাছে ঘটনাটি খুলে বলেন। এরপর গ্রাম্য বিচার চেয়ে না পেয়ে নিকট আত্মীয়দের সহায়তায় গত ২ ডিসেম্বর ওই গৃহবধূ নিজেই বাদী হয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানায় ওই আওয়ামী লীগ নেতা ও তার সহযোগীদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।

এদিকে ওইদিন রাতেই আওয়ামী লীগ নেতা ও তার সহযোগীদের গৃহবধূর চুল কাটার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রশিদ তার সহযোগীদের নিয়ে বটি দিয়ে চুল কেটে উল্লাস করছে।

এ মামলাটি বর্তমানে উল্লাপাড়া মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ হাফিজ তদন্ত করছেন। মামলা দায়েরের পর থেকে আসামিরা পুলিশি গ্রেপ্তার এড়াতে রাতে আত্মগোপনে থাকছে। আর দিনের বেলায় প্রকাশ্যে এসে মামলা তুলে নিতে বাদী ও তার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন বলে ওই গৃহবধূ অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে গজাইল গ্রামের একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কেউ অপরাধ করলে তাকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে এভাবে বর্বরচিতভাবে প্রকাশ্য জনসম্মুখে বিবস্ত্র করে ওই গৃহবধূর চুল কেটে দেওয়া আইনত অপরাধ। এর জন্য তাদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।’

গজাইল গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও ইউনুস আলী জানান, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রশিদ দলীয় প্রভাব বিস্তার করে এর আগেও নিরপরাধ এক স্কুল শিক্ষকসহ এলাকার অনেককে মারধর করেছে। এ সবের বিচার না হওয়ায় সে এখন চরম বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ জন্য তার শাস্তি হওয়া উচিত। এদিকে ঘটনার ১৩দিনেও আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় তারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রশিদ বলে, ‘ওই গৃহবধূর চুল আমি কাটিনি। অসামাজিক কার্যকালাপে জড়িত থাকার সময় গ্রামবাসী তাকে হাতেনাতে আটক করে মাথার চুল কেটে দিয়েছে। স্থানীয় একটি মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে ওই গৃহবধূকে দিয়ে আমার নামে মিথ্যা মামলা করিয়েছে।’

এ বিষয়ে উধুনিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শাহীন শাহ পারভেজ বলেন, ‘আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সূত্র: ইত্তেফাক।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *