স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলো গত রোববার। এর মধ্য দিয়ে এসেছে নতুন নেতৃত্ব। মঙ্গলবার নতুন কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। হয়েছে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিনের কার্যালয়ে।
নতুন কমিটির সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা জেলার প্রতিটি উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে পবা উপজেলার নওহাটায় নতুন কমিটি এমপি আয়েন উদ্দিনের কার্যালয়ে এই সভা করেন। এমপি আয়েন নতুন কমিটির ২ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক।
সভায় রাজশাহীর সব দলীয় সংসদ সদস্যকেও উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। সভায় এমপি আয়েন উদ্দিন ছাড়াও ছিলেন রাজশাহী-১ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এবং রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের এমপি ডা. মুনসুর রহমান। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক নিজে উপস্থিত না থেকে তার একজন প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন। রাজশাহী-৬ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সভায় উপস্থিত ছিলেন না। সভায় নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক সূত্র জানায়, আলোচনার প্রধান বিষয় ছিলো দলের আসন্ন জাতীয় সম্মেলনের জন্য কাউন্সিলর প্রস্তুত। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা নেতাদের কেন্দ্র থেকে পাঠানো একটি চিঠি দেখান। চিঠিটি তার নামেই লেখা। এই চিঠিতে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের জন্য জেলার প্রতি ২৫ হাজার মানুষের জন্য একজন করে কাউন্সিলর প্রস্তুত করে তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে।
সভায় কাউন্সিলর প্রস্তুতের বিষয়ে আলোচনা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের বিষয়েও কিছুটা আলাপ হয়। এছাড়া এ সভায় জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আগামী ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপনের বিষয়েও আলোচনা হয়। একপর্যায়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের বিষয়েও আলোচনা হয়। নতুন কমিটির নেতারা উপজেলার নেতাদের জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় পরিবর্তনের বিষয়ে মতামত চান। উপজেলা পর্যায়ের নেতারা মতামত দেন, লক্ষ্মীপুরের দলীয় কার্যালয় থাকতে অন্য কোনো জায়গায় দলীয় কার্যালয় খোলা ঠিক হবে না। কিন্তু যদি পরিবর্তন করতেই হয় তাহলে কার্যালয় যেন শহরের ভেতরেই থাকে।
নগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়ে একটি মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় এখন জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়। সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ১৯৯২ সালে যখন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তখন একটি ঘর ভাড়া নিয়ে যুবলীগের কার্যালয় খুলেছিলেন। এক যুগ আগে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হওয়ার পর তিনি পাশের আরেকটি বড় ঘর ভাড়া নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় করেন। তখন থেকেই এটি জেলা আওয়ামী লীগের ঠিকানা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই কার্যালয়ের ভাড়াও দিয়ে থাকেন আসাদুজ্জামান আসাদ।
সম্মেলনের আগে সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরোধ দেখা দেয়। ফারুক চৌধুরী এই কার্যালয়ে না যাওয়ার ঘোষণা দেন। তাই সম্মেলনের আগে ২৬ মাস যাননি। তবে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির দুই-তিনটি সভায় তিনি এই কার্যালয়ে যান। সম্মেলনে ফারুক এবং আসাদ-দুজনেই বাদ পড়েছেন। তবে দায়িত্ব পেয়েছেন ফারুকের অনুসারিরা। ফলে তারা এখন আর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যালয়ে যেতে চাইছেন না।
এ বিষয়ে কথা বলতে নতুন কমিটির সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। আর ফোন ধরেননি সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা এবং ২ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক আয়েন উদ্দিন। ১ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। গত রোববার অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এই চারজনেরই নাম ঘোষণা করে গেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
দলীয় কার্যালয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, লক্ষ্মীপুর মোড় জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে প্রাণকেন্দ্র। এখানেই দলীয় কার্যালয়। এখন নতুন সভাপতি-সম্পাদক যদি এর চেয়েও বড় এবং ভাল দলীয় কার্যালয় করেন, তাহলে তাদের অভিনন্দন। কিন্তু লক্ষ্মীপুর মোড় প্রাণকেন্দ্রই থাকবে।
স্ব.বা/শা