নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নওগাঁয় নতুন খাদ্য গুদাম নির্মাণের অভিযোগ

রাজশাহী লীড

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সরস্বতীপুরে নতুন খাদ্য গুদাম নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজের মান খারাপ এবং নির্মাণ কাজেও করা হচ্ছে অনিয়ম এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। নিয়ম অনুযায়ী কার্যস্থলে নির্মাণ কাজের বিবরণ সম্বলিত সাইনবোর্ড দৃশ্যমান থাকার কথা থাকলেও তা টানানো হয়নি। ফলে এই কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সরস্বতীপুরে “মহাদেবপুর উপজেলা চাউল কল মালিক গ্রুপের” দানকৃত ১ একর ২৭ শতাংশ জমিতে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরের ১ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য শস্য ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি খাদ্য গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। ঝিনাইদহ’র মেসার্স লিটন ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ গুদাম নির্মাণের কার্যাদেশ পায়। ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনের সাংসদ ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম এ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্মাণ কাজের মেয়াদ চলতি ডিসেম্বর মাসে শেষ হলেও এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিম্নমানের ইট, পাথর ও জংধরা রড (মরচে পড়া) দিয়ে নির্মাণ কাজ চলছে। খাদ্য গুদামের অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে তিন নম্বর ও নম্বরবিহীন ইট। পা দিয়ে একটু জোরে পাড়া দিলেই গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় ব্যবহৃত সেই ইট চুলার মাটির চেয়েও নরম। নিম্নমান ও নম্বরবিহীন এসব ইট ব্যবহার করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইচ্ছামতো কাজ করছেন। নির্মাণ কাজ তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কোন কর্মকর্তা-প্রকৌশলীকে সেখানে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, সিডিউলে উন্নতমানের ইট, পাথর ও রড দিয়ে কাজ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খাদ্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যাক্তির সঙ্গে সিন্ডিকেট করে নিম্নমানের ইট, পাথর, সমদূরত্বে রড না দেয়া এবং পরিমাণে কম সিমেন্ট ব্যবহার করে নামমাত্র নির্মাণ কাজ করছে। কাজে অনিয়ম হলেও দেখার কেউ নেই। স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, দ্রুত তদন্ত করে শিডিউল অনুসারে উপকরণ দিয়ে যেন খাদ্য গুদাম ও অভ্যন্তরীণ রাস্তার কাজ হয়। এ ব্যাপারে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

মেসার্স লিটন ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী আবু তালেব বলেন, মহাদেবপুর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইট সরবরাহ করার দয়িত্ব নিয়েছিলেন। তিনি ইট সরবরাহ না করায় আমরা বিপদে পড়ে গেছি। লক্ষাধিক ইটের কাজ; মাত্র ১৫-১৬ হাজার ইট আনা হয়েছে। ভাল ইট না পাওয়ায় এগুলো আনা হয়েছে।

নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জিএম ফারুক হোসেন পাটওয়ারী বলেন, গুদামে যখন যে কাজগুলো হয়, আমাদের জানালে আমি অথবা আমার প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত থাকে। নিম্নমানের ইটগুলো সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে; দু’একদিনের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সব ইট সরিয়ে নিবে।

খাদ্য অধিদপ্তরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী মো. আব্দুল আলিমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, খাদ্য গুদামের অভ্যন্তরীণ রাস্তার কাজের জন্য নিম্নমানের ইট আনার বিষয়টি জানতে পেরে নির্মাণ কাজ বন্ধের জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ কাজে অনিয়ম হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্মাণ সামগ্রীসহ সার্বিক বিষয়ের গুণগত মান ঠিক রাখতে সুষ্ঠু তদারকি করা হচ্ছে। সূত্র: পূর্বপশ্চিমবিডি।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *