গণতন্ত্র ধ্বংসে একজোট হয়েছে ইসি-প্রশাসন-বিচার বিভাগ

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: নির্বাচন কমিশন (ইসি), প্রশাসন, বিচার বিভাগ বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য একজোট হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ করে বলেছেন, এটা আমাদের কাছে শুধু বিস্ময়কর নয়, আতঙ্কের। এই কথা আমরা অত্যন্ত দায়িত্ব নিয়ে বলছি।

ফখরুল বলেন, আমরা আশা করেছিলাম তফসিল ঘোষণার পর দেখতে পাব বিরোধী দল তাদের প্রার্থীদের নিয়ে প্রচারণায় নামতে পারছে। নির্বিগ্নে প্রচারণা করতে পারছে। মামলা স্থগিত থাকবে। কিন্তু তা হয়নি।

তিনি বলেন, যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে সেই অবস্থায় দেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। জনগণের মুক্তির জন্য আমরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু এখন নির্বাচনের আদৌ পরিবেশ আছে কিনা সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে এই নির্বাচন একটি তামাশা ও প্রহসনে পরিণত হয়েছে।

বিচার বিভাগের ওপর পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে একদম উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাদের প্রার্থিদের প্রার্থিতা বাতিল করছে। একটা উদাহরণ আমি দিতে চাই সিলেট-২ আসনে। সেখানে আমাদের গুম হয়ে যাওয়া নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা প্রর্থী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তিনি পদত্যাগ করে প্রার্থী হয়েছেন। তিন বছর আগে কেন করেননি সেই অভিযোগে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।

অন্যদিকে ড. এনামুল হক সরদার জৈন্তাপুর সরকারি ইমরান আহমেদ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত আছে। লুনার প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে কিন্তু এনামুল হক সরদারের প্রার্থিতা বাতিল হয়নি।

বিএনপি মসচিব বলেন, লুনার প্রার্থিতা নির্বাচন কমিশন থেকে বাতিল হয়নি। কারণ আমাদের দেশে যে আইন আছে, সরকারি চাকরি না করলে ওই তিন বছরের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যে কোনো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে যে কোনো প্রার্থীর নির্বাচন করা সম্ভব, এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে আছে নির্বাচন চলাকালেও পদত্যাগ করতে হবে না, নির্বাচিত হলে তাকে পদত্যাগ করতে হবে। কিন্তু এ বিষয়ে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছে এটাকে কি আইনসম্মত বলব, না বেআইনি বলব।

তিনি বলেন, এটা কি ইনোসেন্ট অর্ডার অথবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আদেশ বলব। আমরা বক্তব্য হচ্ছে- আজকে এই কাজগুলো কেন করা হচ্ছে। একই ব্যক্তিকে একই আদালতে একজনকে বলা হচ্ছে বৈধ আরেকজনকে বলা হচ্ছে অবৈধ।

ফখরুল বলেন, আমাদের প্রশ্নটা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন যাকে বৈধ ঘোষণা করল তারপরে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে হাইকোর্টে কোনো এখতিয়ার আছে কিনা সেই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করার। আইনটা হচ্ছে নির্বাচন কমিশন যখন ফাইনালি বলে দিল সে বৈধ চলে গেল প্রতীক নিয়ে। তারপরে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার বিধান আছে- নির্বাচনের পরে, আগে নয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এভাবে প্রত্যেকটা জায়গায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। শুধু হস্তক্ষেপ নয়। আমার দলের প্রার্থী কাকে মনোনয়ন দেবে সে কথা হাইকোর্ট থেকে বলে দেয়া হয়েছে। এটা প্রশ্ন? তাহলে আমি কী করে বুঝব, হাইকোর্ট থেকে আমি ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাচ্ছি। আমি কী করে বলব, হাইকোর্ট তার আইনের প্রয়োগ করছেন।

তিনি বলেন, আমি বুঝতে পারছি না, মানুষ বুঝতে পারছে না। এখানে নির্বাচনে প্রধান স্টেকহোল্ডার হচ্ছে রাজনৈতিক দল। প্রধান রাজনৈতিক দলকে এভাবে ইচ্ছাকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের প্রার্থীদের বাতিল ঘোষণা করা হয় তাহলে কী মানুষ বলত না যে, আজকে বিচার বিভাগও সরকারের ইচ্ছা পূরণ করছে।

প্রার্থিতা বাতিলের আসনে পুনঃতফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে বিচার বিভাগ যার ওপর মানুষের আস্থা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আজকে তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে বলেছি আসনগুলোতে আমাদের প্রার্থীদের প্রার্থিতা অবৈধভাবে বেআইনিভাবে শূন্য ঘোষণা বা বাতিল করা হয়েছে সেই আসনগুলোতে আমাদের প্রার্থী দেয়ার সুযোগ প্রদান অথবা সেই আসনগুলোর নির্বাচন স্থগিত রাখা হোক। পরে শিডিউল ঘোষণা করে আবার নির্বাচন দেয়া হোক।

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনে আমাদের প্রতিপক্ষ হচ্ছে পুলিশ। আওয়ামী লীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা তারা নিজেরা নিজেদের অফিস ভাঙচুর করছে, এটা পরিত্যক্ত ঘরের মধ্যে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। এসব ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলছেন বিএনপি-জামায়াত ভুয়া ব্যালট পেপার ছাপাচ্ছে। অথচ আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশন ছাপানো শুরু করে দিয়েছে। যেটা আমরা শুনতে পারছি, ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখা হবে। এটা পরিকল্পনা। শুনতে পারছি না, ওথেনটিক সোর্সের মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি। এগুলো করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকটা জোন তৈরি করে রাখা হয়েছে, পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা বলতে চাই, এই ছকে কোনো লাভ হবে না। মানুষের জাগরণ ঘটেছে এসব ছক ভেঙে চুরমার করে দেবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন বিএনপির টাকা নিয়ে নৌকায় ভোট দিন। তিনি কী করে এটা বলতে পারেন। এটা প্রধানমন্ত্রীর অনৈতিক কথা। তিনি গুজব ছড়াচ্ছেন। গুজব ছড়ানো, অনৈতিক পরামর্শ দেয়া অপরাধ। নির্বাচন কমিশনের উচিত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। আমি দাবি করব, নির্বাচন কমিশন এগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘লন্ডন থেকে ষড়যন্ত্র। পুলিশ অফিসার হত্যা করা হবে নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা হচ্ছে।’ এটা মারাত্মক ভয়াবহ মিথ্যা অভিযোগ। এটার বিরুদ্ধে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিএনপির নাকি মুজিব কোর্ট বানাচ্ছে। এখন উনারা পুলিশের ড্রেস বানাচ্ছেন আমরা শুনেছি পত্রপত্রিকায় এসেছে। সেটাকে কাউন্টার করার জন্য উনি বললেন কিনা আমি জানি না।

সেনাবাহিনীসহ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান রেখে ফখরুল বলেন, নির্বাচনের ৬/৭ দিন বাকি। এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সেনাবাহিনী যারা ২৪ তারিখ নামবে বলে বলা হয়েছে। সবার মধ্যে দেশপ্রেম-দায়িত্ববোধ কর্তব্যবোধ ও তাদের চার্টারে যা বলা আছে সেভাবে তারা দায়িত্বপালন করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সবার প্রতি আমাদের একটি মাত্র আহ্বান যে বাংলাদেশ আমাদের সবার দেশ, জনগণ দেশের মালিক। মুক্তিযুদ্ধে অনেক অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য দেশ ও জনগণ আপনাদের যে দায়িত্ব দিয়েছে সেই দায়িত্ব আপনারা পালন করুন।

তিনি বলেন, আপনার কোনো দল বা ব্যক্তির কর্মকর্তা বা কর্মচারী নন, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী। আপনারা নিরপেক্ষভাবে নির্ভয়ে দায়িত্বপালন করুন। এটাই জনগণ চায় আপনাদের কাছ থেকে। জনগণের যে আস্থা আছে সেনাবাহিনীর ওপরে আমরা আশা করব ন্যূনতম আস্থা বিচার বিভাগ ও প্রশাসনের ওপরেও আছে সেই আস্থাটাকে আপনারা ধ্বংস করে দেবেন না।

মির্জা ফখরুল বলেন, সেনাবাহিনীকে দেশের জনগণ শ্রদ্ধার সঙ্গে চোখে দেখেন। তারা মনে করেন দেশের যে কোনো সংকটময় মুহূর্তে দায়িত্বপালন করেন আজকে যখন নির্বাচনে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা নিরপেক্ষভাবে পালন করবেন। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা যে গণতন্ত্র তাকে তারা রক্ষা করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, বাংলাদেশ মাইনোরিটি পার্টির সুকৃতি কুমার মণ্ডল প্রমুখ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *