বাঘায় উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় কুপিয়ে হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন

রাজশাহী লীড শিক্ষা

বাঘা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘায় স্কুল পড়ুয়া ভাগ্নিকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ওই ছাত্রীর মামা নাজমুল হোসেন (২৮)কে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ২ নারিসহ ৬জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এরা হলো- বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নে সুলতান গ্রামের রফিজ উদ্দিনের স্ত্রী রফিজা বেগম, রানা আলীর স্ত্রী রিতা বেগম, লালাপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুরের আবুল কাশেমের ছেলে জিল্লুর রহমান, মনিহারপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হোসেন, আমজাদ হোসেনের ছেলে সজিব আহমেদ ও একই গ্রামের রঞ্জিতের ছেলে নজরুল ইসলাম।

মঙ্গলবার (১৪-০১-২০২০) রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে একই দিন (মঙ্গলবার) সন্ধায় নাজমুলকে কুপিয়ে হত্যা করে বখাটেরা। এ সময় আহত হয়েছেন ওই ছাত্রীর ভাই তারিকুল ইসলাম ও বাবা শাহজাহান আলী ওরফে বাদশা মাস্টার। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাঘা-লালপুর সীমান্তের সুলতানপুর ও মনিহারপুর গ্রামের ভোলার মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় নিহতের বাবা, সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা আজিজুর রহমান বাদি হয়ে ২৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

অপরদিকে বুধবার (১৫ জানয়ারি) সকালে হত্যা ও উত্ত্যক্তকারিদের ফাঁসির দাবি করে উপজেলার খানপুর জেপি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

অভিযুক্তদের সাতদিনের মধ্যে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দিয়ে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি পালনের হুসিয়ারি দিয়েছেন তারা। সঠিক বিচার না হলে উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারি ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপজেলা চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষনা দিয়ে অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন, প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান.সহকারি শিক্ষক আব্দুল মান্নান,শিক্ষার্থী শুভ জামান সৌরভ আহমেদ প্রমুখ।

স্থানীয় ও মামলার এজাহার সুত্রে জানান, বাঘার পাশর্^বর্তী লালপুর উপজেলার মনিহারপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বাঘা উপজেলার খানপুর জেপি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক, শাহজাহান আলী ওরফে বাদশা মাস্টারের কন্যা জেপি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার পথে দেখা পেলেই তাকে প্রেম ভালবাসার প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করতো একই গ্রামের (মনিহারপুর) আরজেদ আলী ওরফে ভোলার ছেলে সুমন।

৬ মাস আগে থেকেই তার সাথে এ ধরনের আচরন করতো। মেয়ের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে শাহজাহান আলী সুমনের বাবার কাছে অভিযোগ করে সুৃমনকে সতর্ক করে দেওয়ার জন্য বলেন। ২মাস পূর্বে সেনাবাহিনীতে সেনা সদস্য হিসেবে চাকুরি পান সুমন। এর পর হতেও উত্ত্যক্ত মূলক কথা বার্তা বলে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে ওই ছাত্রী নিজের বাড়ি থেকে নানার বাড়িতে যাওয়ার পথে সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছাকাছি পৌঁছলে তাকে থামতে বলে আবারো একইভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করে সুমন। তার সহপাঠিরাও বিষয়টি নিয়ে হাসাহাসি করে। বিষয়টি নানার বাড়িতে গিয়ে তার মামা নাজমুল ও সহোদর ভাই তারিকুল ইসলাম তুষারকে জানায়।

তারা সুমন ও তার সহপাঠিদের সতর্ক করে দিয়ে নওপাড়া বাজারে চলে যায়। এর পরে সুমনের নেতৃত্বে সম্রাট, সুলতান, আরিফ, নাজমুল, মিঠু ও রামকৃষ্ণপুরের কামরুলসহ ২০ থেকে ২৫ জন যুবক মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শাহজাহান মাস্টারের বাড়িতে গিয়ে তার ওপর হামলা করে। এতে শাহজাহান মাস্টার (৫০) গুরুতর আহত হন।

এ খবর জানার পর শাহজাহান মাস্টারের শ্যালক নাজমুল হোসেন ও তার পুত্র তারিকুল ইসলাম শাহজাহান মাস্টারকে উদ্ধার করতে যাওয়ার পথে বাঘা-লালপুর সীমান্তের সুলতানপুর ও মনিহারপুর গ্রামের ভোলার মোড় এলাকায় নাজমুল হোসেন ও তারিকুল ইসলামকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে বখাটেরা।

পরে নাজমুলকে ও তার ভাগ্নে তারিকুল ইসলামকে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়া হলে চিকিৎসক নাজমুলকে মৃত ঘোষণা করেন। তারিকুলকে বাঘা হাসপাতালে ও তার বাবা শাহজাহান মাস্টারকে লালপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, মূল আসামি পালাতক থাকায় তাকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি। বাকিদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে । মামলায় ২৩ জনের নাম উলে¬খ করে ৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *