নিরাপদ অপরাধের স্বর্গরাজ্য পূর্বাচল

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: স্যাটেলাইট শহর বাস্তবায়ন চলছে রূপগঞ্জের পূর্বাচলে। এখানে সাড়ে ছয়শ’ বিঘায় ইতিমধ্যে রাস্তা ও ড্রেনেজের কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু দিনে কর্মমূখর পরিবেশে থাকলেও রাত হলেই নির্জন, ভয়ঙ্কর সব অপরাধ ঘটে এখানে। ঢাকার বাইপাস, কুড়িল বিশ্বরোড ছাড়াও শীতলক্ষ্যা আর বালু নদীতে যাতায়াতের সুবিধায় অপরাধীরা নিরাপদ জোন হিসেবে ব্যবহার করছে এই পূর্বাচলকে।

শুধু তাই নয়, মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণ, হত্যাসহ নানা অপরাধ ঘটছে নিত্যনৈমত্তিকভাবে। আর থানা পুলিশের সদস্য কম, এমন অজুহাতে দায় এড়িয়ে যেতে চায় রূপগঞ্জ থানা পুলিশ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, শুধু পূর্বাচলেই নয়, রূপগঞ্জজুড়েই চলছে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। হাটবাজার ও নির্জন পথে জনসাধারণের টাকা পয়সা ছিনতাইসহ সড়ক মহাসড়কে চলছে ব্যাটারিচালিত গাড়ি ও বৈধ যানবাহন ছিনতাই। আর ছিনতাই করেই শেষ নয়, চালককে হত্যা করে পূর্বাচলের নির্জন কোন স্থানে কিংবা মহাসড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে মরদেহ।

এমনই এক ঘটনায় গত ১১ জানুয়ারি উপজেলার বাগবের এলাকার অটোচালক মজিরউদ্দিনের অটো ছিনতাই করে নিয়ে যায় একটি চক্র। এসময় তাকে হত্যা করে পূর্বাচলের ২নং সেক্টরের একটি পরিত্যক্ত প্লটে মরদেহ ফেলে যায়। পরে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এর আগে ৩ জানুয়ারি আতলাপুর এলাকার মিলন নামের এক অটো চালককে হত্যা করে পূর্বাচলের ১০নং সেক্টরে ফেলে যায়। এভাবে পূর্বাচলের ৪ নং সেক্টর এলাকায় গত ডিসেম্বরে একই কায়দায় অটো ছিনতাই করে কালিগঞ্জ এলাকার অটো চালক ফরিদকে গলা কেটে মরদেহ ফেলে যায়।

শুধু হত্যাই নয়, নির্জন এলাকা হওয়ায় নিত্যই ঘটে ধর্ষণের ঘটনা। এমন ঘটনা ঘটেছে গত ৯ ডিসেম্বর। ইফসুফগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রীকে পাতিরা এলাকার আজিজুল হকের ছেলে আবুল কালাম আজাদ ও তার চক্র স্কুলে যাওয়ার পথে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে ধর্ষণ করে।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভা এলাকায় পৌর ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সোহান ও তার বন্ধুরা স্থানীয় অপর এক ৯ম শ্রেণির ছাত্রীকে তুলে নিয়ে দু’দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে। পরে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই ছাত্রলীগ নেতাকে দল থেকে বহিস্কার করে স্থানীয় ছাত্রলীগ।

এসব হত্যা ও ধর্ষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডাকাতির ঘটনাও। ইয়াপুরা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রোমান মোল্লা জানান, গত ৫ জানুয়ারি রাত ১টার দিকে পুলিশ পরিচয়ে বাজারের দুটি স্বর্ণের দোকানে একটি ডাকাত দল হানা দেয়।

এ সময় বাজার কমিটির লোক হিসেবে ৩ তলা বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে জানতে চাইলে তারা নিজেদের পুলিশ পরিচয় দেয়। তবে তাদের হাতে থাকা রাইফেল ও ছুড়ি দেখে সন্দেহ হয়। পরে ৯৯৯-এ কল দিলে ঘটনাস্থলে র‍্যাব ও পুলিশ আসলেও ততক্ষণে ডাকাতরা ডাকাতি করে পালিয়ে যায়।

সূত্র জানিয়েছে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প নির্জন হলেও আশপাশের গ্রামগুলোও নিরাপদ নয়। এখানকার গরু ব্যবসায়ী ও গরু পালনকারীরা রয়েছেন ডাকাত আতঙ্কে। রাত জেগে পাহারা বসিয়েও মিলছে না সুরাহা। গত ১০ জানুয়ারি উপজেলার মধূখালী গ্রামের চান মিয়ার ৫টি গরু নিয়ে যায় ডাকাতের দল। বাধা দিলেই খুন করে পালিয়ে যায় তারা। এর আগে গত নভেম্বরে গুতিয়াবো নামাপাড়া এলাকার গৃহবধূ সুলতানার ৮টি গরু নিয়ে যায় ডাকাতদল।

এদিকে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও এসব ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার বা সমস্যা সমাধানের কোন কুলকিনারা না পাওয়ায় স্থানীয়দের ক্ষোভের অন্ত নেই। তাদের দাবি, পূর্বাচল নতুন শহর এলাকায় ব্যাপকভাবে অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটলেও পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা চোখে পড়ে না। ফলে অহরহ বেড়ে যাচ্ছে এসব অপরাধ।

সম্প্রতি এখানে র‍্যাব বেশ কয়েকটি ছিনতাই চক্র ও ডাকাত গ্রেপ্তার করলেও থামছে না এসব অপরাধকাণ্ড।

এ প্রসঙ্গে র‍্যাব-১ সিপিসি-৩ এর কমান্ডার মেজর আব্দুল্লাহ মেহেদী বলেন, পূর্বাচল নির্জন হওয়াতে অপরাধীরা এ এলাকাকে নিরাপদ মনে করছে। তবে র‍্যাব শুরু থেকেই তৎপর। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি চক্রকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছি।

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, রূপগঞ্জের জনসংখ্যার তুলনায় পুলিশ সদস্য অনেকটা কম। তবে পুলিশের কোন গাফিলতি নেই। প্রতিটি ঘটনা তদন্তে পুলিশ কাজ করছে। পূর্বাচলসহ অপরাধপ্রবণ এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *