ঘুমের মধ্যে ‘বোবায় ধরে’ কেন জানেন!

চারণ সংবাদ জাতীয় বিশেষ সংবাদ লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: “আমার বয়স তখন ১৫। প্রথম আমাকে ঘুমের মধ্যে বোবায় ধরে। অন্যান্য দিনের মত স্বাভাবিকভাবে আমি ঘুমাতে গেলাম, সারাদিন খেলাধুলা করে খুব ক্লান্ত ছিলাম তাই খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম।

রাতে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি আবিষ্কার করলাম আমি আমার হাত পা কিছুই নাড়াতে পারছি না। উঠে বসার খুব চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। মনে হল বুকের উপর ভারী কিছু একটা খুব চাপ দিয়ে আছে।

কানের কাছে হঠাৎ এক ধরনের আওয়াজ হতে লাগলো এবং ক্রমেই তা বাড়তে লাগলো। আমি চিৎকার করে কাউকে ডাকও দিতে পারছিলাম না। দোয়া পড়ার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু দুই এক লাইন এর পর আর দোয়া মনে পড়ছিলাে না।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সব স্বাভাবিক হয়ে এলো। আবার আমি হাত পা নাড়াতে পারলাম। উঠে বসলাম। ভাবছিলাম আমার মনে হয় পুরা রাত নির্ঘুম কাটবে! খুব ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু কিছুক্ষনেই মধ্যেই আবার গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম ।”

-ঘুমের মাঝে অজানা ভয়ংকর অভিজ্ঞতার বলছিলো ১৭ বছর বয়সী রাহাত।

ঘুমের মধ্যে হাত পা অবশ হয়ে যাওয়া, উঠে বসতে না পারা, কথা বলতে না পারার অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন অনেকেই। ভয়ংকর এই অভিজ্ঞতা নিয়ে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে বিভিন্ন নাম ও মিথ প্রচলিত রয়েছে।

খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা একে “demons attack” বলেন। আফ্রিকানরা বলে “witch riding your back” এবং চাইনিজরা বলে mengyan, “ghost pressing on body.” বাংলায় একে “বোবায় ধরা”বলা হয়। অনেক মুসলিম দেশে একে “জিনের আছর” বলেও মনে করা হয়।

বহু বছর ধরে ‘বোবায় ধরা’ এই সমস্যা বা অনুভূতিটিকে আধ্যাত্মিক বা আধিভৌতিক সমস্যা মনে করা হলেও মূলত এটি শারীরিক সমস্যা ছাড়া আর কিছুই না। ইংরেজিতে একে বলে স্লিপিং প্যারালাইসিস। সাধারণত বিছানায় একদম সোজা হয়ে শুয়ে থাকলে স্লিপিং প্যারালাইসিস হয়ে থাকে। তখন হৃৎপিণ্ডের মধ্যে সরাসরি মধ্যাকর্ষণ বল কাজ করে।

ধারণা করা হয়, স্লিপিং প্যারালিসিস বংশগত রোগ হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু এর সম্ভাবনা খুবই কম। সাধারণত অনিদ্রা, মানসিক চাপ, ক্লান্তি, অস্থিরতা এসব কারনে স্লিপিং প্যারালাইসিস হয়ে থাকে। নানান ধরনের ওষুধ বিশেষ করে যেগুলো ADHD সমৃদ্ধ সেগুলো ও মাদক সেবনের কারনেও এটি হয়ে থাকে। আবার কখনো কখনো ন্যাক্রলেপসি এর কারণে স্লিপিং প্যারালাইসিস হয়ে থাকে (মস্তিষ্কের ঘুমন্ত ও জাগ্রত অবস্থার চক্র নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কমে যাওয়াকে ন্যাক্রলেপসি বলে।

এরফলে মাসল অ্যাটনিয়া হতে পারে অর্থাৎ পেশিগুলো দুর্বল হয়ে যায়। যেহেতু হৃৎপিণ্ড মাধ্যাকর্ষণ শক্তি দ্বারা আকৃষ্ট হতে থাকে তখন আমাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ হয় না। তাই আমাদের হ্যালুসিনেশন হতে থাকে। যার ফলে নানা ধরনের শব্দ কানের কাছে হচ্ছে বলে মনে হয়। অক্সিজেনের অভাবের কারণেই চেষ্টা করা সত্ত্বেও মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হয় না।

স্লিপিং প্যারালাইসিস খুব বেশি ক্ষতিকর বা ভয়ানক কোন সমস্যা নয়। এটি হওয়ায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিজেকে শারীরিকভাবে অক্ষম মনে হয়, শ্বাসকষ্ট ও হ্যালুসিনেশনের কারনে খুব ভয়ংকর অনুভূতি হয়। যাদের প্রতিনিয়ত স্লিপিং প্যারালাইসিস হয়, তাদের মাইগ্রেনের সমস্যা ও এ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার (anxiety disorder) হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

সময়মত ও পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম (৬-৮ ঘণ্টা) শুধুমাত্র এই সমস্যার সবচেয়ে বড় চিকিৎসা। কিন্তু সমস্যাটি খুব বড় আকৃতি ধারন করলে, প্রতিনিয়ত হতে থাকলে ডাক্তারি পরামর্শে ওষুধ সেবন করার প্রয়োজন হয়। সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *