স্বদেশ বাণী ডেস্ক: সিলেটের বালাগঞ্জে গত ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্রদল নেতা সোহেলের বাড়িতে গেছেন এক্যফ্রন্ট নেতারা। সেখানে নেতারা দীর্ঘ সময় অবস্থান করে নিহত সোহেলের কবর জিয়ারত করেন। সোহেলের পরিবারকে সান্তনা দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদানও দেয়া হয়। পরে নিহতের কবরের পাশে একটি খোলা মাঠে তাৎক্ষণিক শোক সভার আয়োজন করা হয়। সোমবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে তারা বালাগঞ্জ যান।
শোক সভায় সেখানে বক্তব্য রাখেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী, মহাসচিব হাবিবুর রহমান বীর প্রতীক, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু।
শোক সভায় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বলেন, ৩০ ডিসেম্বর দেশে কোনো ভোট হয়নি। যেটা হয়েছে তা ইতিহাসের নিকৃষ্টতম কলঙ্কময় দিন। আর সবচেয়ে বড় যেটা হয়েছে তা হলো আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি। পুরো জাতি নির্লজ্জ ডাকতির সাক্ষী হয়েছে।
নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি যে রুখতে চেয়েছে তাকে গুলি করে হত্য করা হয়েছে। আর শত বাধা পেরিয়ে যে ভোট দিতে পেরেছে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সিলেটের বালাগঞ্জ এবং নোয়াখালীর সুবর্ণচরের দুই ঘটনাই বলে দিচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে কতটা কলঙ্কিত অধ্যায় এঁকে দিয়েছে সরকার।
তারা বলেন, সারা দেশেই সকলের চোখে-মুখে একটা শোকের চিত্র ফুটে উঠেছে। এর কারণ জনগণ তাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। দখলদারি সরকার বাংলাদেশের জনগণের অধিকারকে হরণ করে নিয়ে গেছে এবং তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। জনগণের রায়কে তারা ডাকাতের মতো ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। বালাগঞ্জে সোহেলের বাড়িতে বিকেল সাড়ে ৩টায় সভাটি শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল ৫টায়।
জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীমের সভাপতিত্বে, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ জামালের সঞ্চালনায় শোক সভায় অন্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জীবন, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে বিএনপি’র দলীয় প্রার্থী এবং খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, কলিম উদ্দিন মিলন প্রমুখ।
এসময় সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অসংখ্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
পূর্বঘোষিত তিন দফা কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার সিলেটে আসেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। বেলা ১২টার দিকে নিয়মিত একটি ফ্লাইটে সিলেট এসে পৌঁছান তারা। সিলেটে গিয়ে প্রথমেই হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন তারা। এরপর মাজারে অবস্থানরত সাংবাদকর্মীদের সংক্ষিপ্ত ব্রিফ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জ ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন পরবর্তী ফের সংলাপের আবাস দিয়েছে সরকার। কিন্তু সংলাপের এজেন্ডা কি হবে সেটি জানানো হয়নি। সংলাপে অংশ নিতে পুনরায় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন বিষয়ক এজেন্ডা থাকলে এ সংলাপে আগ্রহী আছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আর আগের সংলাপের মতো লোক দেখানো হলে এমন সংলাপ অর্থবহ হবে না। নির্বাচনের আগে ওই সংলাপে অংশ নিয়েছিল বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, জাতীয় পার্টি, যুক্তফ্রন্টসহ আরও বহু দল। ওই সংলাপের সময়ই বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা ঘোষণা করে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের ঐক্যফ্রন্ট অটুট আছে। সামান্যতম কোন সমস্যা নেই আমাদের ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে। রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরের কিছুটা অমিল থাকতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে কোন ঝামেলা নেই।
জামায়াত নিয়ে ড. কামালের বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জামায়াত নিয়ে কামালের বক্তব্য গণফোরামের। এটি ঐক্যফ্রন্টের বক্তব্য নয়। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে এখনও কোনো আলাপ-আলোচনা করিনি। জামায়াত ইস্যুতে ঐক্যফ্রন্টে ফাটল ধরবে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঐক্যফ্রন্টে কোনো ফাটল ধরার সুযোগ নেই। অটুট থাকবে। কারণ আমরা অভিন্ন দাবিতে একসঙ্গে আন্দোলন করছি।
প্রসঙ্গত, এ সফরের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা তাদের পূর্বঘোষিত তিন দফা কর্মসূচি শুরু করলেন। ধারাবাহিকভাবে দেশের অন্যান্য এলাকায় নির্বাচনি সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাও পরিদর্শন করবেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা।