দেশে বাড়ছে করোনা ভাইরাস গণসংক্রমণের আশঙ্কা

জাতীয় বিশেষ সংবাদ লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক:

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হয়নি। এ খবর কিছুটা স্বস্তির হলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশে সীমিত আকারে একটি এলাকায় কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (গণসংক্রমণ) হয়ে থাকতে পারে। তবে সারাদেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে এটি বলা যাবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদেশফেরতদের ছড়িয়ে যাওয়া, হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে না পারা গণসংক্রমণের শঙ্কা বাড়াচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রোগের চারটি স্তর রয়েছে। প্রথম পর্যায় বিদেশ থেকে রোগের সংক্রমণ। দ্বিতীয় পর্যায় স্থানীয় সংক্রমণ। তৃতীয় পর্যায় কমিউনিটি সংক্রমণ। চতুর্থ পর্যায় যখন মহামারির আকার ধারণ করে। কমিউনিটি সংক্রমণ বলতে তারা বলছেন, যখন কোনো ব্যক্তি আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে আসেননি বা এমন কোনো দেশে সফর করেননি যেখানে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে, অথচ তার শরীরে ওই ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে।

মিরপুরের টোলারবাগে যে ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তিনি বিদেশফেরত কারো সংস্পর্শে আসেননি। সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি কেমন করে সংক্রমিত হলেন? এই প্রশ্নের উত্তরই খুঁজছে আইইডিসিআর। সেই সঙ্গে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে কি না তাও যাচাই করে দেখছে।
গতকাল নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বাংলাদেশে এখনো করোনা ভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়নি। তবে সীমিত আকারে কোনো একটি এলাকায় হয়েছে এটি বলতে পারি। এমনটি ভেবেই আমরা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ন্ত্রণ-প্রতিরোধ করার জন্য কার্যক্রম নিয়েছি। তবে দেশব্যাপী এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এছাড়া দুটো জায়গায় ‘সোর্স অব ইনফেকশন’ নিশ্চিত হয়নি। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলার আগে আমাদের তথ্য প্রমাণ প্রয়োজন। এই প্রতিবেদন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে দিতে হবে। আর পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ ছাড়া আমরা তাদের রিপোর্ট দিতে পারব না।

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মো. মোস্তাক হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন আমাদের জন্য পরবর্তী লেভেল। যতক্ষণ না আমরা নিশ্চিত না হবো ততক্ষণ আমরা এটা বলব না। আমরা কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বলার জন্য আরেকটু সময় নিচ্ছি। আমরা বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছি। যেমন : টোলারবাগে যে ব্যক্তির কথা বলা হচ্ছে, তার ক্ষেত্রে আমরা তাদের পাশে বিদেশ থেকে এসেছেন এমন দুই ব্যক্তির সন্ধান পেয়েছি। আমরা তাদের নমুনা সংগ্রহ করেছি। আমরা দেখতে চাই তাদের সংক্রমণ ছিল কিনা, ওই ব্যক্তির করোনা সংক্রমণ এদের কাছ থেকে এসেছে কিনা। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই আমরা চাই যে সংক্রমণের উৎস কী তা চিহ্নিত করতে চাই। এটি করতে পারলে পরবর্তী সংক্রমণটা প্রতিরোধ করা যাবে।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এম এইচ চৌধুরী লেলিন ভোরের কাগজকে বলেন, বিদেশ ফেরত যাত্রীদের, ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তি, ওই এলাকায় যারা বিশেষ করে জ্বর-সর্দি-কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন এমন ব্যাক্তিদের পরীক্ষা করা উচিত। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আমরা যত বেশি পরীক্ষা করতে পারব তত বেশি রোগী খুঁজে পাব। যা করোনা যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতে সহায়তা করবে।
আইইডিসিআর যে সংখ্যক নমুনা পরীক্ষা করেছে তা নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, এ পর্যন্ত আমরা ৭৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করেছি। অনেকের কাছে এ সংখ্যা কম মনে হচ্ছে। আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুসায়ী পরীক্ষা করছি। তবে অনেক সময় যেসব এলাকায় সংক্রমণের সংখ্যা বেশি হয়েছে সেক্ষেত্রে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞার বাইরে গিয়েও কারো কারো লক্ষণ উপসর্গ থাকলে তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

সূত্র: ভোরের কাগজ

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *