স্টাফ রিপোর্টার: বর্নিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে নাটোরের লালপুর-বাগাতিপাড়া বাসির স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান গ্রীনভ্যালী পার্ক আজ শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে উদ্বোধন করা হয়।
ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আদম আলীর সহধর্মিনী ও পুলিশ সুপার আলমগীর কবির পরাগের মা আজমিরা খাতুন এবং পুলিশ সুপার আলমগীর কবির পরাগের সহধর্মিনী ও প্রাকীর্তি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নূরীয়া পারভীন।
উদ্বোধনের পর উপস্থিত অতিথিবৃন্দ ও সুধীবৃন্দরা পার্কটি দর্শন শেষে আলোচনা সভায় মিলিত হন।
পার্কের চেয়ারম্যান আঞ্জুমান্দ আরা পুষ্প’র সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল, নাটোর জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন, (বিপিএম,পিপিএম), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বড়াইগ্রাম সার্কেল) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ, লালপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুনার রশিদ পাপ্পু, লালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নজরুল ইসলাম জুয়েল, লালপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফু, সাধারন সম্পাদক ইসাহাক আলী, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার, আব্দুল হান্নান, আনিছুর রহমান, পার্কের পরিচালক গণ ও বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অতিথিবৃন্দ এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই নিশ্চিন্তে বিনোদনের জন্য আসতে পারেন এ পার্কটিতে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান পিকনিক স্পট হিসেবে সুন্দর, পরিপাটি ও সকল সুবিধার দিক মাথায় রেখে পছন্দের তালিকায় রাখতে পারেন পার্কটিকে। পার্কের কারণে এলাকার যুবদের প্রাথমিকভাবে ৫০জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তীতে এ সংখ্যা আরো বাড়বে। এছাড়া পার্কের পাশেই বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী ও বাহারি দোকান গড়ে উঠছে। পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নুরীয়া পারভীন জানান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পর্যটনের জগতে লালপুরকে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াসই গ্রীনভ্যালী পার্ক লিমিটেড। সারা দেশের বিভিন্ন স্থানের স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ৩৮জন পরিচালকের সম্মিলিত উদ্যোগ এই পার্ক। প্রায় ৩০ একর জমির ওপর পার্কটি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। পরিচালকদের শেয়ার আর ঋণের টাকায় মানব সেবার ব্রত নিয়ে প্রতিষ্ঠিত পার্কের লভ্যাংশের সিংহভাগ ব্যয় হবে সমাজকল্যাণ মূলক কর্মকান্ডে। পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠা করা হবে আন্তর্জাতিক মানের বিদ্যালয়, শিশু পরিবার, বৃদ্ধাশ্রম ও হাসপাতাল প্রভৃতি।
পার্কটিতে সুবিধা পাবেন: পিকনিক স্পট, শ্যুটিং স্পট, এ্যাডভেঞ্চার রাইডস, কনসার্ট এন্ড প্লে-গ্রাউন্ড, নিজস্ব বিদ্যুৎ সুবিধা, নামাজের সু-ব্যবস্থা, সিকিউরিটি সার্ভিসের ব্যবস্থা, ডেকোরেটর সুবিধা, গাড়ি রাখার ব্যবস্থা, ক্যাফেটেরিয়া, শপ কর্ণার, সভা-সেমিনার এর জায়গা, আবাসিক ব্যবস্থাসহ নানা ধরনের সুবিধা। বিনোদনের জন্য রয়েছে: স্পীডবোট, প্যাডেল বোট, বুলেট ট্রেন, মিনি ট্রেন, নাগরদোলা, পাইরেট শীপ, ম্যারিগোরাউন্ড, হানি সুইং ইত্যাদি। প্রতিটি রাইডের আনন্দ উপভোগ করতে গুনতে হবে ৫০টাকা। এছাড়া প্রায় ৩০ একর জমির উপর বিস্তৃত নয়নাভিরাম লেক, অত্যন্ত মনোরম পরিবেশ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত সুস্থ্য বিনোদনের ব্যবস্থা। পিকনিক স্পট বা সভা-সেমিনারসহ যে কোন বিষয়ে জানতে যোগযোগ করতে পারেন।
গ্রীনভ্যালী পার্কে প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে জনপ্রতি ১০০/- টাকা। তবে লালপুরবাসীর জন্য ২০টাকা ছাড়ে ৮০টাকায় পরিদর্শনের সুযোগ রাখা হয়েছে। অন্যান্য সুবিধা: পার্কে যে কোন অনুষ্ঠানের জন্য ডেকোরেটর সামগ্রী, চেয়ার, টেবিলসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ভাড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বিভিন্ন প্যাকেজ সুবিধায় ২০টি টেবিল, ২০০ চেয়ার, লাক্সারী দুটি রুম ও বড় শেড ৩০হাজার টাকায় পাওয়া যাবে। উন্মুক্ত স্থানে ৫হাজার টাকা ভাড়ায় পিকনিক করা যাবে। এর সাথে পানির ট্যাপ ও ওয়াশ রুমের বাড়তি সুবিধাও থাকছে। পার্কিং সুবিধা: বাস-৫০০টাকা, হাইস মাইক্রো- ৩০০টাকা, মাইক্রোবাস- ২০০টাকা, সিএনজি-১০০টাকা এবং মোটরসাইকেল- ৫০টাকা পার্কিং ফি নির্ধারিত রয়েছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা: সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে আনন্দ-বিনোদনের লক্ষ্যে গ্রামের মধ্যে যাতায়াতের ব্যবস্থাসহ গড়ে তোলা হয়েছে নিরিবিলি পরিবেশে পার্কটি।
সড়ক পথ: সড়ক পথে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে নাটোর জেলার লালপুরে আসার সুব্যবস্থা রয়েছে। বাস, সিএনজি, অটোরিক্সা ও ব্যক্তিগত বা রিজার্ভ যানবাহনে লালপুর পৌঁছে মাত্র এক কিলো মিটার পাকা রাস্তা।
রেল পথ: দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে আন্তনগর বা সাধারণ ট্রেনে আব্দুলপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশনে নেমে মাত্র ১০কিলো মিটার রাস্তা সিএনজি, অটোরিক্সা বা ভ্যানে পার্কে যাওয়া যাবে।
পানি পথ: পদ্মা নদীর উপকূলবর্তী জনপদ লালপুর। পদ্মা নদীতে যাতায়াতকারী নৌযানে লালপুর ঘাটে নেমে মাত্র এক কিলো মিটারের রাস্তা পেরিয়ে পার্কে পৌঁছা যাবে।
লালপুরের স্বপ্নদ্রষ্টা লালপুরের কৃতী সন্তান বর্তমান রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ সুপার (এসপি), ঢাকাস্থ লালপুর উপজেলা কল্যাণ সমিতির সভাপতি আলমগীর কবির পরাগ বলেন, ‘গ্রীনভ্যালী পার্কের প্রত্যেক কর্মচারী গ্রীনভ্যালী পরিবারের সদস্য। গ্রীনভ্যালী পার্ক প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব আপনারা নিলে আপনাদের পরিবারের প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নেবে গ্রীনভ্যালী।’ তিনি আরো বলেন, চাইলেই একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান করা যায়। কিন্তু একটি বিনোদন কেন্দ্র করতে লাগে সুন্দর মন, সৃষ্টিশীল মানসিকতা ও ভালবাসা। পৃথিবীর বিভিন্ন পার্ক ঘুরে দেখে, অনলাইন ভিজিট করে মাটির প্রতি ভালবাসার টানে সৃষ্টি এই পার্ক। বিশ্বের বুকে লালপুরের নাম প্রতিষ্ঠিত করার অদম্য সাধনা। প্রাকীর্তি ফাউন্ডেশন এই সেবামূলক কাজ করে চলেছে।