সুনামগঞ্জের বোরো ফসল ঘরে তুলতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী

জাতীয় লীড

কাজী মোঃ জমিরুল ইসলাম মমতাজ (দক্ষিন সুনামগঞ্জ): করোনা ভাইরাস থাবা বিস্তার করেছে। চারদিকে আতঙ্ক আর আতঙ্ক। সিংহভাগ মানুষই ঘর থেকে বের হচ্চেন না। এই পরিবেশের মধ্যে দিয়ে বোরো ফসল সংগ্রহের সময় এসেছে। বোরো ফসল নিরাপদে ঘরে তুলতে পারবেন কীনা তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ জেলার বিশাল এলাকায় প্রতি বছর বোরো চাষ করা হয়। এই বোরো ধান বাংলাদেশের বিশাল অংশের খাদ্য চাহিদা মেটায়। এই বোরো ধানের উপর নির্ভশীল সুনামগঞ্জের ৯০ ভাগ মানুষ, কৃষক। বোরো ফসল ঘরে তুলতে প্রয়োজনীয় শ্রমিক পাবেন কী না তা নিয়ে ইতোমধ্যে কৃষকরা অনেকটা দিশেহারার মতো।

ওই পরিস্থিতির খবর নিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। তিনি বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। সুনামগঞ্জের কৃষকরা যাতে নির্বিঘ্নে বোরো ফসল ঘরে তুলতে পারেন, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে। স্থানীয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন। শ্রমিক সংকটের কারণে বোরো ফসল ঘরে তুলতে যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার জন্যে জেলার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রী। ’

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন, বোরো ফসল কাটতে যেসব শ্রমিক সুনামগঞ্জে আসেন, তারা যেন বাধার সম্মুখিন না হয়। যেসব শ্রমিক ধান কাটার জন্যে সুনামগঞ্জে আসবেন তাদেরকে নিরাপদ স্থানে রেখে কাজে লাগাতে হবে। সুনামগঞ্জে যেসব শ্রমিক আসতে চান, তাদেরকে কোনোভাবে বাধা দেয়া যাবে না। তাদের উপর মনিটরিং করতে হবে। যাতে তাদের মাধ্যমে করোনা বিস্তার ঘটতে না পারে। মোট কথা শ্রমিকদের নিরাপদ স্থানে রেখে ধান কাটার কাজে লাগাতে হবে। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে কৃষককে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে মনিটরিং করতে হবে স্থানীয় প্রশাসন ও দলীয় নেতাকর্মীদের। সুনামগঞ্জের হাওরের বোরো ধান নিরাপদে ঘরে তুলতে সকলকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানের ব্যাক্তিগত সহকারী হাসনাত হোসেন বলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী সার্বক্ষণিক সুনামগঞ্জের ডিসি, এসপি, সিভিল সার্জন, দলীয় নেতাকর্মীসহ অন্যান্য সেক্টরে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মপরিকল্পনা জানিয়ে দিচ্ছেন সবাইকে। শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন মন্ত্রী।

হাসনাত হোসেন বলেন, মন্ত্রী বর্তমানে সুনামগঞ্জের বোরো ফসল নিয়ে চিন্তিত। বোরো ফসল নিরাপদে ঘরে তোলার জন্যে প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। দিক নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে।

হাসনাত হোসেন বলেন, করোনা দুর্যোগ শুরু হওয়ার পর থেকে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সার্বক্ষণিক এলাকার খোঁজ খবর রাখছেন। ইতোমধ্যে দুই দফায় তিনি ব্যাক্তিগতভাবে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বরাদ্দ দিয়েছেন। সর্বশেষ ৮ এপ্রিল ১২ উপজেলার স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেন। ওইসব সামগ্রীর মধ্যে ছিল ১২০ টি পিপিই, ৪০০০ টি সার্জিকেল মাস্ক, চশমা ৪০ টি, টেস্ট কিট ৭৫ টি ও ডিজিটাল থার্মোমিটার ৮টি। প্রথম দফায় বরাদ্দ দেয়া সামগ্রীর মধ্যে ছিল ১২০ টি পিপিই, ১৫০০০ হাজার সাবান ১৫০০০ সার্জিকেল মাক্স ১৫০০০ হেন্ড গ্লাভস ও ৭৫টি কিট। এসব স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী প্রায় সব জায়গায় বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।

হাসনাত হোসেন জানান, সুনামগঞ্জ জেলা বিশেষ করে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলায় খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে দলীয় নেতা কর্মী ও বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রী। মন্ত্রীর ডাকে সারা দিয়ে অনেকে খাদ্য সহায়তা বিতরণ শুরু করেছেন।

কৃষক লীগের আমির হোসেন ও ফরিদ মিয়া দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন। ডুংরিয়া গ্রামের আওয়ামী লীগ একটি ফান্ড গঠন করেছে। ওই ফান্ড থেকে ২-১ দিনের মধ্যে ওই গ্রামে খাদ্য সহায়তা বিতরণ শুরু হবে। লন্ডন প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা রাজা মিয়া পাথারিয়া এলাকায় খাদ্য সহায়তা বিতরণ করছেন।

হাসনাত হোসেন জানান, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নুর হোসেন গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কর্মহীন মানুষের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন।

একই অবস্থা চলছে জগন্নাথপুর উপজেলায় জানিয়ে হাসনাত হোসেন বলেন, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জগন্নাথপুরে খাদ্য সহায়তা বিতরণ শুরু করবেন ২-১ দিনের মধ্যে। আরো এগিয়ে এসেছেন অনেকে। এগিয়ে আসছেন অনেকে মন্ত্রীর আহ্বানে সারা দিয়ে।

প্রকৃত খেটে খাওয়া মানুষ খাদ্য সহায়তা পাচ্ছেন কী না জানতে চাইলে হাসনাত হোসেন বলেন, এই বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। যারা ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য তারাই যেন ত্রাণ পায় সে ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। হাসনাত হোসেন বলেন, সরকারিভাবে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্যাক্তি উদ্যোগে ও সাংগঠনিকভাবে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। পরিকল্পনামন্ত্রী ওই সহযোগিতার জন্যে সকলের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছিলেন। এই অবস্থায় প্রকৃত শ্রমজীবী কর্মহীন মানুষের তালিকা তৈরি করে তাদের তাদের হাতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। স্বচ্ছতা নিশ্চিতে মন্ত্রী সার্বক্ষণিক যোযোগ রক্ষা করে চলেছেন।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *