“মরে যাবার আগেই, মরে যেতে নেই!”

চারণ সংবাদ রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: খরগোশের একটা গল্প পড়েছিলাম ছোটবেলায় আমরা। অধিকাংশই ভুলে গেছি, যতটুকু মনে থেকে গেছে, সেটা হলো, যখন খরগোশকে শিকারি ধরতে আসে, তখন খরগোশ চোখ ঢেকে নেয়। এবং ভাবতে থাকে সে শিকারিকে দেখতে পাচ্ছেনা মানে শিকারিও তাকে দেখতে পাচ্ছেনা!

অথচ তার পুরো শরীর শিকারি দেখতে পাচ্ছে এবং যেকোনো সময় তাকে ধরে ফেলবে। ব্যাপারটা দারুন হাস্যকর তাইনা?

এখানে খরগোশের পয়েন্ট অফ ভিউ টা এমন, সে বোকামির কারনে চোখ ঢাকছে। এবং ভাবছে তাকে দেখা যাচ্ছে না! ফলস্বরূপ, ঠিক যে মূহুর্তে শিকারি তাকে ধরবে, তার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত সে নির্ভয়ে, নিশ্চিন্তে চুপচাপ বসে আছে।

একটা বাস্তব সত্য হচ্ছে, বিপদের সময় পজেটিভ থাকা প্রয়োজন! এখানে আমার কথা + অবস্থা ঠিক খরগোশের মত। বাহ্যিকভাবে বোকামি মনে হতে পারে, তবে যদি যেকোনো মূল্যে নিজেকে নিজেই সাপোর্ট করা মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে, তাহলে এই লজিক অবশ্যই কাজে লাগে।

অনেকেই এখন এটা চিন্তা করছে, এবং সেভাবেই টিকে আছে। আমার মত আরও অনেকের এই লজিক হলো, নিজেকে নির্ভয় দেওয়ার লজিক।

Pandamic চলছে, আপনি, আমি যেকোনো সময় বিনা জানাজায় কবরে চলে যাবো। কোনো গ্যারেন্টি নাই।অনেকের সাথে অলরেডি শেষ দেখা হয়তো হয়ে গেছে লক ডাউনের আগে। এটা জানি, বুঝি আমরা প্রায় সবাই।

কিন্তু আমার চিন্তাটা ওই জানা পর্যন্তই। অর্থাৎ আমি জেনেছি, বুঝেছি, সে পর্যন্তই। রোজ রোজ এটা নিয়ে ভেবে মরে প্যানিকড হওয়ার বোকামি করার পক্ষপাতি অন্তত নই আমি!

এখন ভাবুন, কোনো মহামারী চলছে না। আপনার দুরারোগ্য রোগ ধরা পড়লো, আপনাকে বলা হলো সময় হাতে খুব কম। একজন যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে, আপনি নিশ্চয়ই নিজের জীবনের শেষ কিছু সময় ডিপ্রেসড থেকে কাটিয়ে দিবেন না! চাইবেন রোগ ভুলে থেকে শেষ সময়টা শেষ সময়ের মত করেই কাটাতে।

আমি যে কয়টা ক্যান্সারে সার্ভাইভ করে যাওয়া মানুষের গল্প শুনেছি, তাদের সবার মতেই, মানুষ ক্যান্সারে মারা যাবার অনেক আগেই টেস্ট রিপোর্ট দেখার পর ভয়ের দ্বারা মরে যায়। আত্মিকভাবে মারা যায়! অথচ হয়তো চেষ্টা করলে, ইমিউনিটি বাড়ালে সেও সার্ভাইভ করতে পারতো!

এখন আমরা যে অবস্থা পার করছি, তাতে যদি ধরেই নিই যে আমি ভাইরাসে আক্রান্ত, বা আমার খুব নিকটজন আক্রান্ত, সেক্ষেত্রে শেষ সময়টা নিশ্চয়ই আমি অন্তত ডিপ্রেসড হয়ে কাটাতে চাইবো না। অন্য কারো ক্ষতি না করে, নিজের সাধ্যের মধ্যে যতটুকু ভালো থাকা যায়, ততটুকু কেন নয়?

আপনার যদি মারা যাবার কথা ১মাস পরে থেকে থাকে, তাহলে আজই ভয়ের ঠেলায় আমি “বাঁচা” ছেড়ে দিলেন, ফলাফল কি দাঁড়ালো? জীবনের শেষ ১মাস ডিপ্রেসড হয়ে কাটালেন। ঠিক যে সময় চলে যাবার কথা, সে সময় তো টুপ করে মরে যাবো যে কেউ!

এর অর্থ এই নয় যে মৃত্যুকে নিমন্ত্রন দিয়ে মাস্ক ছেড়ে, বিন্দাস রোডে ঘুরে বেড়াবেন। কোনো precaution মানবেন না! এর অর্থ হচ্ছে আপনি সব দিক থেকে সচেতন থাকছেন, কিন্তু মনোবল হারাচ্ছেন না। সাবধান আছেন, একই সাথে হাসিখুশিও আছেন।

যারা এক্সট্রোভার্ট, ছুটাছুটি ছাড়া ভালো থাকে না, তাদের জন্য করোনার ভয়ের চেয়ে এই লক ডাউনে থাকাটা বেশি ডিপ্রেসিং। বাসার মধ্যে বন্দি থেকে সারাদিন কি এমন করা যায়? কিভাবে ভালো থাকা যায়?

প্রথমত, রোজ রোজ নিউজ চেক করা বন্ধ করে দেন। ক’জন আক্রান্ত, ক’জন মরলো, এসব অটোমেটিক জেনে যাবেন। ঘটা করে চেক করা বন্ধ করে দেন। বাসায় বন্দি থেকে করা যায় এমন অনেক কিছুই আছে। যদি সেটাকে আদৌ verb হিসেবে ধরেন আপনি, তবেই! খাওয়া, ঘুমানোও কিন্তু verb!

আমরা কয়জন নিজে একা টিকে থাকার মত নিজের কাজ নিজে করতে পারি? নিজের খাবার উপযোগী কিছু নিজেই রান্না করা, নিজের ময়লা কাপড় নিজে ধোয়া, নিজের ঘর নিজে পরিস্কার রাখা, কয়জন পারি!? বা পারলেও করি কয়জন?

শুধু নিজের কাজ নিজে করা শুরু করলেই দিনের অর্ধেক সময় কেটে যাবে তাতেই। এরপর হিসাব করে দেখুন, কত কাজ, কত গল্প পড়া হয়নি, কত মুভি দেখা হয়নি, শুধু “সময় নেই” অযুহাতে!? কত প্রিয় মানুষের, বন্ধু-বান্ধবের খোঁজ নেওয়া হয়না, সময় ছিলো না এতদিন আমাদের সেই অযুহাতে!?

নিজের ফেলে রাখা কাজ, পছন্দের কাজ করুন। পছন্দের মানুষগুলার সাথে কথা বলুন। আপনার মতই তারাও বন্দি! একসাথে গল্প করুন পুরোনো স্মৃতি নিয়ে। একসাথে হাসুন! পরিবারের সবার সাথে গল্প করুন। কিছু না পেলে পুরোনো এলবাম বের করে একেকদিন একেকটা ছবির গল্পই নাহয় করুন!

মন শান্ত রাখতে মেডিটেশন করুন। ঘটা করে মেডিটেশন না জমলে, নিয়ম করে নামাজটাই নাহয় পড়ুন!

নিজেকে ভালো রাখার, মানসিকভাবে রিল্যাক্স থাকার সকল পন্থা জানা আছে, তারপরও সবসময় ঘ্যানঘ্যান করছেন “ভালো নেই, ভাল্লাগে না”! তাহলে ভাই আগে নিজের বাম কাঁধের শয়তানকে থাপড়ান!

Pandamic শেষ হবার পর একটা বড়সড় ধাক্কা সামলাতে হবে সবাইকে, যারা বেঁচে যাবে তাদের। সে সময়টার জন্যই নাহয় নিজেকে প্রস্তুত করুন! নিজের জন্য বেটার ক্যারিয়ার প্ল্যান করুন। প্ল্যান অনুযায়ী অনলাইনে ঘাটাঘাটিই নাহয় করুন!

নো ম্যাটার, এই সবকিছু কতদিন করার সময় আল্লাহ্ আমাদের দিয়েছেন! কিন্তু মরতে হলেও বিজয়ীর বেশে মরুন। টিপিক্যাল বাঙালির পজিটিভিটি হজম হয়না।
আশেপাশের সেসব টিপিক্যাল ব্যক্তিবর্গের নিকট হইতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন!

কানের কাছে বা ইনবক্সে রোজ কেউ না কেউ ঘ্যানঘ্যান করবে, “আল্লাহ্, দেশের এই অবস্থা, আর তুমি এইসব করছো?(প্যানিকড নও কেন তুমি!?)”
“দেশের এই অবস্থায় তুমি মজার রান্না করছো? মজার খাচ্ছো? সাজগোজ করে ছবি তুলছো? এত এত হাসিখুশি কথা বলছো?
ভাই তোমার মানবিকতা কই!”

তাদের ইগ্নোর করুন। খুব জোর জিজ্ঞাস করে বিদায় করুন, “আপনি আপনার বিশাল মানবিকতা দিয়ে কি করলেন দেশের জন্য, প্যানিকড হওয়া আর করা ছাড়া!?”

আমরা সবাই দেখছি, জানছি, বুঝছি, আমাদের অবস্থা বেগতিক। সেটার জন্য পর্যাপ্ত সচেতন থাকুন। নিজের ঘরে খাবার সেভ করুন। আশেপাশে কোন ঘরে খাবার নেই, তাদের খাবার দেবার সামর্থ্য থাকলে দিন! ব্যাস এইটুকুর বাইরে আপনার এখন কিছু কি করার আছে? নেই!

রোজ রোজ অবস্থা দেখে প্যানিকড না হয়ে খরগোশের গল্পের মত নিজেকে অভয় দিন নিজেই। আর কিছু না হলেও, আপনার ইমিউন সিস্টেম ভালো থাকবে পজিটিভ থাকলে।

Sleeping cycle, eating cycle সবারই বিগড়ে গেছে ট্রাস্ট মি! And it’s ok! It’s fine!

ছুটির দিনে ২ঘন্টা এক্সট্রা ঘুম দেওয়া জাতি আমরা! আমাদের কাছে “জীবন যখন যেমন” নীতি অনুযায়ী এসব সিম্পলি মেনে নেওয়ার কথা! মেনে নেন, এবং খুশি থাকেন।
অন্তত এখনও নিঃশ্বাস চলছে, এই খুশিতেই এক গাল হাসুন!

নিজেকে, নিজের আশেপাশের সবাইকে ভালো রাখার খাতিরে যা করবেন করুন, যেভাবে খুশি করুন! শুধু মনে রাখিয়েন, মরে যাবার আগেই, মরে যেতে নেই…

লেখক : আনিকা তাবাসসুম এ্যানি

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *