রাজশাহীর চারঘাটে থামছেই না অবৈধ পুকুর খনন কার্যক্রম

রাজশাহী লীড

চারঘাট প্রতিনিধি: এক সময় যে মাঠ জুড়ে চাষ হতো ধান, গমসহ বিভিন্ন ফসল। চোখ মেললে যেখানে সবুজের সমারোহে মনটা ভরে উঠতো। আজ সেই সবুজের বুক চিড়ে খনন করা হচ্ছে অবৈধ পুকুর। দেখার যেন কেউ নেই। গত কয়েক মাস ধরে শুধু একটি মাঠেই প্রায় আড়াইশ থেকে তিনশ বিঘা জমিতে চলছে অবৈধ পুকুর খনন।

মাঠের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে তাকালেই শুধু পুকুর আর পুকুর। এভাবে চলতে থাকলে গোটা চারঘাট এক সময় চরম সংকটের মধ্যে পড়বে। এভাবেই আক্ষেপ সুরে এ প্রতিবেদককে কথা গুলো বলছিলেন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার চৌধুরী নামক মাঠে ৬৮ বছর বয়সি বৃদ্ধ আব্দুল লতিফ মিঞা।

শুধু চৌধুরীর মাঠেই পুকুর খনন করা হচ্ছে এমনটা নয়। উপজেলার নিমপাড়া, ভায়ালক্ষিপুর, শলুয়া ও চারঘাট সদর ইউনিয়নের অধিকাংশ মাঠেই চলছে অবৈধ উপায়ে পুকুর খনন। সরজমিনে এসব ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে ফসলী মাঠ জুড়ে এসকেভেটর দিয়ে পুকুর খননে মহোৎসবে মেতেছে এক শ্রেণীর ভুমিদস্যুরা। কেউ খনন করছেন নিজের জমিতে আবার কেউ খনন করছেন অন্যের জমি চুক্তি ভিত্তিতে লিজ নিয়ে। দিন রাত সমান তালেই চলছে পুকুর খনন। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে এ খননের মহোৎসব।

চৌধুরীর মাঠে অবৈধ পুকুর খনন বিষয়ে জানতে চাইলে জমির মালিক বাদশা এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার জমিতে ধান করা হতো। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে আমার জমির আশে পাশে পুকুর খননের ফলে ধান চাষ করা যায় না। তাই বাধ্য হয়ে আমিও পুকুর খনন করছি। ধানি জমির শ্রেণী পরিবর্তন করতে হলে ভুমি মন্ত্রনালয়ের অনুমতি প্রয়োজন হয়। আপনি কি সেই অনুমতি নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বাদশার জমিতে পুকুর খননকারী আব্দুস সামাদ বলেন, আমি জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আবেদন করেছি। সরজমিন তদন্ত করে অনুমতি পাওয়া যাবে বলে সেখান থেকে জানানো হয়েছে। অনুমতি পাওয়ার আগে এভাবে পুকুর খনন করা আইনগত বৈধ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সামাদ বলেন, অনুমতিতো মিলবেই। তাই পুকুর খনন করছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুনজুর রহমান জানান, এভাবে পুকুর খনন হতে থাকলে চরম ভাবে কৃষি জমির উপর প্রভাব পড়বে। এতে কৃষি জমির সংকট মারাক্তক আকার ধারনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ইতিমধ্যে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করে জেল জরিমানাও করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি এ প্রতিবেদককে জানান, প্রানঘাতি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসন যখন ব্যস্ত, ঠিক তখন প্রশাসনের ব্যস্ততাকে পুজি করে এক শ্রেণীর প্রভাবশালীরা রাত দিন চালাচ্ছেন অবৈধ পুকুর খনন। বিভিন্ন মাঠে আম বাগান, ধানের জমি, গমের জমিসহ উর্বর জমি নষ্ট করে অধিক মুনাফার আশায় করছেন পুকুর খনন। সাময়িক ভাবে পুকুর খননের সুফল পেলেও দীর্ঘয়োদী ক্ষীতর মুখে পড়বে গোটা চারঘাট উপজেলা। তাই দ্রুত এসব অবৈধ পুকুর খননকারীদের চিহিৃত করে তালিকা তৈরীর মাধ্যমে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। নইলে চারঘাট এক সময় পুকুরের জন্য বিখ্যাত বলে পরিচিত পাবে।

বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সামিরা বলেন, অবৈধ পুকুর খননে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরন করা হচ্ছে। পুকুর খনন একিবারেই অবৈধ। তবে এসব অবৈধ ভাবে পুকুর খনন বন্ধে ইতিমধ্যে মাইকিং, মোড়ে মোড়ে লিফলেট টাঙ্গানোসহ সচেতনতা মুলক বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহন করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে আর্থিক দন্ড প্রদান করা হয়েছে। তার পরেও পুকুর খননে সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সামিরা।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *