ঈদের আগেই সরকারিকৃত কলেজের ননএমপিও শিক্ষকদের বেতন চালু হোক

শিক্ষা

ড.জাহাঙ্গীর আলম: করোনা ভাইরাসের ভয়াল ছোবলের কারণে ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় সকল দেশ এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। প্রতিদিন ইতালি, আমেরিকা, ফ্রান্স, স্পেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ লোক আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।

করোনার এই বৈশ্বিক মহামারির ভয়াল থাবায় সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নন-এমপিও শিক্ষকদের মতো সদ্য সরকারিকৃত ৩০২টি কলেজের নন-এমপিও শিক্ষকরাও বর্তমানে এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছেন। সেই ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি স্কুল-কলেজবিহীন উপজেলাভিত্তিক একটি করে স্কুল-কলেজ সরকারিকরণের ঐতিহাসিক ঘোষণার পর থেকেই সদ্য সরকারিকৃত এসকল কলেজের হতদরিদ্র ননএমপিও শিক্ষকেরা তাদের এতদিনের দুঃখ-দুর্দশা ও আর্থিক অনটন মোচনের যে স্বপ্ন দেখে আসছিলেন আজ সরকারিকরণ প্রক্রিয়ার সুদীর্ঘ পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হবার পরেও তাদের সে আশায় গুঁড়েবালি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে পদসৃজনে দেরি হওয়ায় ও কলেজ থেকে কোনোরূপ বেতন বা আর্থিক সুবিধা না পাওয়ায় বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে এসকল ননএমপিও শিক্ষকেরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

সরকারি আদেশ জারির পূর্বে সদ্য সরকারিকৃত কলেজসমূহের ননএমপিও শিক্ষকেরা প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ভাতার যে সামান্য অংশটি পেতেন (কোনো কোনো কলেজে যা মাত্র তিন/চার হাজার টাকা যা শুভঙ্করের ফাঁকির মতো শিক্ষকদের কলেজে যাওয়া আসার ভাড়া বাবদ-ই ব্যয় হয়ে যায়), কলেজগুলোর জিও জারির পর সেটিও এখন বেশিরভাগ কলেজে কোনোরূপ যৌক্তিক কারণ ছাড়াই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

করোনা মহামারির ফলে এতদিন বেতনবিহীন থাকলেও ননএমপিও শিক্ষকদের অনেকেই পেটের দায়ে টুকটাক টিউশনি করিয়ে,বা ব্যাচ পড়িয়ে বা অবসরে কোনো টুকিটাকি কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালাতেন। অনেক ননএমপিও শিক্ষক আবার কলেজ থেকে কোনো প্রকার আর্থিক সুযোগসুবিধা না পেয়ে পেটের দায়ে অটোরিক্সা চালিয়ে বা দিনমজুর খেটে, মহাজনদের কাছ থেকে চক্রবৃদ্ধিহার মুদে টাকা নিয়ে, আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ধার দেনা করে, কেউ বা আবার জমিজমা ভিটেমাটি ও সহায় সম্বল বিক্রি করে কোনো রকমে সংসার চালিয়ে আসছিলেন। করোনার ভয়াল ছোবলের কারণে দেশ লকডাউনের কবলে পড়ায় বর্তমানে সেই পথটুকুও তাদের সামনে আর খোলা নেই।

রুটিরুজির সকল পথ মহামারি করোনার কারণে হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং সরকারি কোনো প্রকার ত্রাণ সাহায্য বা প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় না আসায় ননএমপিও শিক্ষকেরা এখন পরিবার পরিজন নিয়ে পড়েছেন চরম দুর্বিপাকে। দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতির কারণে এমনিতেই তাদের যেখানে দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবনযাপনে নাভিশ্বাস উঠতো, সেখানে হঠাৎ করে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে বর্তমানে তাঁদের বেঁচে থাকার সকল পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

এমতাবস্থায় সদ্য সরকারিকৃত ৩০২টি কলেজের ননএমপিও শিক্ষকদের বর্তমান করোনা সংকটকালীন দুর্যোগময় পরিস্থিতির কারণে সৃষ্ট অপরিমেয় দুঃখ-দুর্দশার কথা বিবেচনা করে জিও জারির পর সরকারিকৃত যেসব কলেজের ননএমপিও শিক্ষকদের কলেজ প্রদত্ত বেতন ভাতা বিভিন্ন অজুহাতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, সেসব কলেজের ননএমপিও শিক্ষকদের পূর্বের নিয়মে স্কেল অনুযায়ী বেতন ভাতা চালু করার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা জারিকরণ ও করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এসকল নন-এমপিও শিক্ষকদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এনে সাহায্য দান নিশ্চিতকরণ এবং এ সম্পর্কে অতিদ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সদ্য সরকারিকৃত ৩০২টি কলেজের ননএমপিও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে মানবতার মা ও শিক্ষামাতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা ও জনদরদী শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি মহোদয়ের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ ও আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

লেখক: শিক্ষক ও সাংবাদিক

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *