অভিন্ন রেজিস্ট্রেশনে সব বোর্ড পরীক্ষা

শিক্ষা

সব ধরনের পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য একজন শিক্ষার্থীর একটিমাত্র রেজিস্ট্রেশন নম্বর থাকবে। প্রাথমিক সমাপনী (পিইসি) থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত সব বোর্ড পরীক্ষায় থাকবে এই একই নম্বর। আগামী ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকেই এই নিয়ম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ জন্য তৈরি করা হচ্ছে বিশেষ সফটওয়্যার। এতে প্রতিটি রেজিস্ট্রেশন নম্বরের বিপরীতে সংশ্নিষ্ট শিক্ষার্থীর বিস্তারিত একাডেমিক তথ্য সংরক্ষণ করা হবে।

শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, অভিন্ন রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি চালু করা গেলে স্কুল-কলেজে অনিয়ম কমবে। সরকারি বৃত্তি পেতে অথবা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়িয়ে দেখানোর প্রবণতা কমে যাবে। আবার দুর্নীতি-অনিয়ম করে আসনের বেশি ভর্তি করিয়ে সরকারি কাগজপত্রে শিক্ষার্থী কম দেখানোর সুযোগও কমে যাবে। শিক্ষা বোর্ডগুলোর রেজিস্ট্রেশন রিপ্লেস জালিয়াতিও চিরতরে বন্ধ হবে। পাশাপাশি জানা যাবে, বিভিন্ন স্তরে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর প্রকৃত সংখ্যা।

২০১৯ শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই এ পদ্ধতি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জানুয়ারিতে ভর্তি শেষ হওয়ার পর পঞ্চম, অষ্টম, নবম ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের এই অভিন্ন রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা হবে। সরকারি হিসেবে ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে মোট শিক্ষার্থী হবে চার কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার। নতুন এ পদ্ধতি কার্যকর করতে এরই মধ্যে একটি সফটওয়্যার তৈরির কাজে হাত দিয়েছে এ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো’কে (ব্যানবেইস) এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে ভিন্ন ভিন্ন রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এতে একজন শিক্ষার্থীর প্রতিটি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন এবং রোল নম্বরও ভিন্ন হয়। এতে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত তথ্য বের করা জটিল হয়ে পড়ে। নতুন পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থীর প্রাথমিক সমাপনীর রেজিস্ট্রশন নম্বর তার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। একই রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিয়ে সব পরীক্ষায় অংশ নেবে ছাত্রছাত্রীরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার উপযুক্ত একটি সফটওয়্যার তৈরির কাজে হাত দিয়েছে ব্যানবেইস।

এ বিষয়ে ব্যানবেইসের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. ফসিউল্লাহ সমকালকে বলেন, ‘আগামী ২০১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে সব পরীক্ষা একটিমাত্র রেজিস্ট্রেশন নম্বরের মাধ্যমে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত বৃত্তির টাকা, তাদের জন্য সরকার প্রদত্ত স্বাস্থ্যসেবা, জাতীয় পর্যায়ের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ- এর সবই হবে এই একটি মাত্র রেজিস্ট্রেশন নম্বরের মাধ্যমে।’ তিনি বলেন, ‘একজন ছাত্র ও ছাত্রীকে ‘ডিজিটালি’ চেনা হবে তার রেজিস্ট্রেশন নম্বরের মাধ্যমে। এ জন্য ব্যানবেইসে একটি ডাটাবেস গড়ে তোলার কাজ চলছে। এর ফলে কোন শিক্ষার্থী স্কুল থেকে চলে গেল, কে ঝরে গেল, কে মাদ্রাসায় ভর্তি হলো, কে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তি হলো, কে পরীক্ষা ড্রপ করল, সবই রেজিস্ট্রেশন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে জানা যাবে। শিক্ষার্থীর একাডেমিক পারফরম্যান্সের সব তথ্য এ রেজিস্ট্রেশন নম্বরের বিপরীতেই পাওয়া যাবে।’

ব্যানবেইস সূত্র জানায়, কেবল ছাত্রছাত্রীদের জন্য নয়, শিক্ষকদের জন্যও একটি পৃথক তথ্যভাণ্ডার (ডাটাবেস) গড়ে তোলা হচ্ছে। এ জন্য পৃথক আরেকটি সফটওয়্যার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিটি দপ্তরের সঙ্গে এই তথ্যভাণ্ডারের ‘ইন্টিগ্রিটি কানেকটিভিটি’ থাকবে। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের দাপ্তরিক প্রয়োজনে এই তথ্যভাণ্ডারের তথ্য ব্যবহার করতে পারবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার সমকালকে বলেন, অটোমেশন পদ্ধতিতে সব শিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে একটি ‘ইন্টিগ্রিটি কানেটিভিটি’ গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে কোনো শিক্ষকের সনদ জাল কি-না, ডিআইএ তা সহজেই যাচাই করতে পারবেন। এ ছাড়া সংশ্নিষ্ট শিক্ষকের নিয়োগ সংশ্নিষ্ট তথ্যাদি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ, এমপিওভুক্তিজনিত বিভিন্ন তথ্য ইত্যাদি সব একসঙ্গে এক জায়গায় পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, আগে এসব যাচাই করতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের মধ্যে চিঠি চালাচালি করতে হতো। নতুন এ প্রক্রিয়ায় যে কোনো তদন্ত ও যাচাইয়ের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা কমবে।

সরকারের নতুন এ উদ্যোগ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ সমকালকে বলেন- কিশোর, তরুণ-তরুণী সবার সব একাডেমিক তথ্য একটিমাত্র রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রেস করে এক জায়গায় পাওয়া যাবে- এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে পরামর্শ হলো, এ প্রক্রিয়ার কারিগরি ত্রুটির দিকে যেন গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য রাখা হয় এবং ডাটাবেইসে সঠিক তথ্য সন্নিবেশ করতে যেন আন্তরিকতা দেখানো হয়।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *