বিশ্বে করোনায় মৃত্যু সাড়ে ৩ লাখ ছাড়াল

আন্তর্জাতিক লীড

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী দাপিয়ে বেড়ানো প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ সময় বুধবার (২৭ মে) সকাল সোয়া ৮টার দিকে আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওমিটারস এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার ৯৯৬। এর মধ্যে তিন লাখ ৫২ হাজার ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছে ২৪ লাখ ৩০ হাজার ৫৪৩ জন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮৩ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। চীনের বাইরে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও)।

ওয়ার্ল্ড ওমিটারস-এর তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ লাখ ২৫ হাজার ২৭৫। মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৫৭২ জনের।

আক্রান্তের হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ৯৪ হাজার ৫০৭। এর মধ্যে ২৪ হাজার ৫৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাশিয়া আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ৬২ হাজার ৩৪২। এর মধ্যে তিন হাজার ৮০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

উৎপত্তিস্থল চীনে মৃতের সংখ্যা চার হাজার ৬৩৪। যদিও দেশটির বিরুদ্ধে প্রকৃত পরিস্থিতি গোপন করার অভিযোগ রয়েছে। উহানের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেন, ‘বুদ্ধি-বিবেচনাসম্পন্ন যেকোনও মানুষ এই সংখ্যা (সরকারি পরিসংখ্যান) নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবেন।’

এ দিকে, করোনা মহামারির ফলে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে আফ্রিকাসহ বেশ কিছু স্বল্পোন্নত দেশ। বিভিন্ন দেশে লকডাউন ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ফলে ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় এ শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০০৭-০৮ সালের দিকে খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে যে ধরনের সহিংস পরিস্থিতি দেখা গিয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। বিশ্ব চাইলে আসন্ন এ সংকট ঠেকাতে পারে, তবে তা করার সময় ফুরিয়ে আসছে। খুব দ্রæতই সম্মিলিতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ফসলের ওপর পঙ্গপালের আক্রমণের কারণে এমনিতেই তীব্র সমস্যার মধ্যে আছে আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশ। ৭০ বছরের মধ্যে এতোটা খারাপ পরিস্থিতিতে আর পড়তে হয়নি তাদের। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগেই এসব দেশের অন্তত ২ কোটি মানুষ প্রচÐ রকমের খাদ্য অনিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির মধ্যে ছিল। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা (এফএও) এর জরুরি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক পরিচালক ডমিনিক বারজিওন বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তাজনিত দিক থেকে কিছু জায়গা দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। অভাবের মাত্রাটা এমনিতেই অনেক বেশি। এ সময়ে আরেকটি আঘাত তারা সহ্য করতে পারবে না। এ নিয়ে আমরা খুব উদ্বেগে আছি।’

২০০৭-০৮ সালের দিকে বিশ্বব্যাপী যখন আর্থিক মন্দা দেখা দিয়েছিল, তখন খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল বিভিন্ন দেশ। আর এতে করে উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশে সহিংসতা ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। এবার তা না করতে বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন ডমিনিক। তিনি বলেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক সংহতি ও মানবিকতারই প্রশ্ন নয় শুধু, এটি বিশ্বের নিরাপত্তারও প্রশ্ন। বিশ্বের কিছু অংশের পরিস্থিতি যেন খাদ্য নিয়ে সহিংসতার মতো অবস্থা তৈরি না করে তা নিশ্চিত করতে হবে।’

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *