বাগাতিপাড়া উপজেলা হাসপাতাল অনিয়মের আখড়া

রাজশাহী লীড

বাগতিপাড়া প্রতিনিধি: নাটোরের বাগাতিপাড়া হাসপাতাল অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্টাফদের সাথে বৈশম্যমূলক আচরণ, বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না করে অর্থআত্মসাত, ভূয়া ডিগ্রী ব্যবহার, স্টেশানে না থেকে বাহিরে প্র্যকটিস, সরকারি গাড়ি নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার, স্টেশানে আবাসিক ডাক্তার না থাকাসহ নানান অভিযোগ উঠেছে। এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রশাসন ও স্থানীয়রা।

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম দাবী করেন, আমি ঠিকঠাকভাবেই দায়িত্ব পালন করছি। কতর্ৃৃপক্ষের নির্দেশনানুযায়ী সকল কাজ সম্পাদন করা হয়। আর আমার এখানে বাসা নেওয়া আছে।

অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তার স্টেশানে থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা নিজে স্টেশানে না থেকে নাটোর জেলা শহরের মাদরাসা মোড়ের পটুয়াপাড়ায় তার নিজস্ব বাসায় ও চেম্বার করা হয়েছে। এমনকি প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক এর দেয়ালে ব্যক্তিগত চিকিৎসার প্রচারণার স্টিকার লাগানো দেখতে পাওয়া যায়। তিনি প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে আটটা এবং বিকাল তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত নিজস্ব চেম্বারে রোগী দেখেন বলে প্রচারণা করেছেন। তার ব্যবহৃত সরকারি গাড়ি তিনি জেলা শহরের বাসা ও ব্যাক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। তার পছন্দের ডাক্তারদের সুবিধামত ডিউটি দিলেও অন্যান্য স্টাফদের সাথে বৈশম্যমূলক আচরণ করেন বলে অভিযোগ করা হয়।

সম্প্রতি অমানবিক ও নারীর প্রতি বৈশম্যমূলক আচরণে প্রতিকার চেয়ে কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই হাসপাতালের একজন মহিলা ডাক্তার। ডা: আমিনুল ইসলাম শিশু রোগ ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ লিখেছেন যা তিনি লিখতে পারেন না বলেছেন নিজ দপ্তরের কর্তাব্যাক্তিগণ। বছরের বিভিন্ন সময়ে মেডিকেল অফিসার, নার্স, স্বাস্থ্য সহকারী ও কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার প্রোভাইডার সহ রিসোর্স পার্সনদের নিয়ে বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম করা হয়। তবে বেশীরভাগ প্রোগ্রামেই রিসোর্স পার্সনদের রাখা হয় না। আবার অংশগ্রহনকারীদের জন্য যে মূল্যের স্টেশনারিজ, আপ্যায়ন ও সম্মনী বরাদ্দ থাকে, তা না দিয়ে স্বল্প মূল্যের সামগ্রী সরবরাহ করা হয়।

সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনে বিরুপ প্রভাব ও মাদক সচেতনতাসহ বেশ কয়েকটি ট্রেনিং গ্রোগ্রামে প্রত্যক অংশগ্রহনকারীদের জন্য একটি করে চার শত পঞ্চাশ টাকা মূল্যের পেনড্রাইভ, চার শত পঞ্চাশ টাকা মূল্যের ব্যাগ, পঁচাত্তর টাকা মূল্যের কলম, এক শত বিশ টাকা মূল্যের প্যাড, এক শত পাঁচ টাকা মূল্যের মার্কার পেন্সিল ও ইরেজার এর মোট স্টেশনারিজ বাবদ বার শত টাকা বরাদ্ধ থাকলেও একটি রেখা খাতা, একটি পাঁচ টাকা মূল্যের কলম ও একটি প্লাস্টিক ফাইল তাতে করে মাত্র ত্রিশ টাকায় তা সম্পন্ন করা এবং দেড়শ টাকা আপ্যায়নে বরাদ্দ থাকলেও তা করানো হয় না বলে দাবী করা হয়েছে।

অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন বানু বলেন, ‘এটা দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ আবাসিক চিকিৎসক হাসপাতালে থাকেন না। তার দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।’

বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের বিভিন্ন অনিয়ম ও ভূয়া ডিগ্রীর বিষয়ে সিভিল সার্জন (নাটোর) ডা: আজিজুল ইসলাম বলেন, তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ শুনেছি। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। শিশু রোগ ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ লিখার বিষয়টি আমি নিজেও তাকে নিষেধ করেছি।

নাটোর জজকোর্টের আইনজীবি (বাগতিপাড়ার বারইপাড়া মহল্লার) হাসান সৈকত বলেন, তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আগেও শুনেছি। তিনি যা করছেন তা আইন বিরোধী। এভাবে চলতে থাকলে নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন হবে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্রুততম সময়ে অভিযোগগুলি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে এমনটা প্রত্যাশা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *