স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে ৩২ লাখ টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই ছিনতাই নাটক করেছেন মোবাইল ফোন বিক্রেতা কোম্পানির তিন প্রতিনিধি। ঘটনার সাত ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ তাদের পাকড়াও করেছে। উদ্ধার করেছে ছিনতাই হওয়া ৩২ লাখ টাকা।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নগরীর শাহমখদুম থানার দক্ষিণ নওদাপাড় এলাকার তাইজুল ইসলাম ডলার (২৪), নগরীর কর্ণহার থানার সায়েরপুকুর এলাকার মেহেদী হাসান ফাইসাল (২৬) এবং জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার পলাশী এলাকার জাফর ইকবাল (২৮)। এদের মধ্যে জাফর ইকবাল মোবাইল ফোন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ভিভো’র সিটি ম্যানেজার। এছাড়া মেহেদী হাসান ফাইসাল ছিলেন ভিভো শো-রুমের বিক্রয় প্রতিনিধি। বন্ধুদের নিয়ে মোটা অংকের টাকা আত্মসাতের ছক কষেছিলেন তারা।
এই ঘটনায় শুক্রবার নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন শো-রুম মালিক অঞ্জন কুমার রায় (৫২)।
শুক্রবার দুপুরে ওই মামলায় গ্রেফতার তিন জনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ।
মামলায় এই তিনজন ছাড়াও আসামি করা হয়েছে আরো দুজনকে। এরা হলেন- নগরীর দামকুড়া থানার হরিপুর এলাকার আরিফুল ইসলাম ডলার (২৪) ও তার বন্ধু কাশিয়াডাঙ্গা থানার বালিয়া সেনপুকুর এলাকার অহিদুল ইসলাম (২২)।
অহিদুল ইসলামের বাড়ি থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে কথিত ছিনতাই হওয়া ৩২ লাখ টাকা। ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন আরিফুল ইসলাম ডলার ও অহিদুল ইসলাম। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
আদালতে নেয়ার আগে গ্রেফতার ওই তিন জনকে শুক্রবার বোয়ালিয়া মডেল থানা চত্বরে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। এ সময় নগর পুলিশের উপ-কমিশনার সাজিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আরিফুল ইসলাম
ও তাইজুল ইসলাম মোটরসাইকেল নিয়ে কথিত ছিনতাইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। তারা দুজনেই রেইনকোর্ট, মুখে মাস্ক এবং মাথায় হেলমেট পরেছিলেন। মেহেদীর সঙ্গে তাদের আগে থেকেই পরিকল্পনা ঠিক ছিল।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, মোটরসাইকেলের পেছনে বসে তাইজুল টান দিয়ে টাকার ব্যাগ নেন। সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর আরিফুলকে টাকা দিয়ে পাঠিয়ে তাইজুল আবার মোটরসাইকেল নিয়ে ভিভোর শো-রুমের সামনে আসেন। সেখান থেকেই মোটরসাইকেলসহ পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়।
এরপর পাকড়াও করা হয় মেহেদী হাসান ও সোহেলকেও। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে তাইজুল ছিনতাই নাটকের পর্দা ফাঁস করেন। তবে এ ঘটনায় সেলিমের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি। পরে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়।
ব্যাংকে টাকা নেয়ার সময় সেলিমের কাছে থাকা ব্যাগে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৮০০ টাকা ছিলো। এই টাকাগুলো কথিত ছিনতাইয়ের সময় নিয়ে যাওয়া হয়নি। শুধু মেহেদীর কাছে থাকা ৩৩ লাখ টাকাসহ ব্যাগটি ছিনতাই হয়।
তিনি আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মেহেদীও জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোটরসাইকেলের চালক আরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বন্ধু অহিদুল ইসলামের বাড়ি থেকে ৩২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। তবে এক লাখ টাকা নিয়ে অহিদুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন।
পুলিশ বলছে, ঘটনার সময়ের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় ছিনতাইয়ের শিকার হয়েও প্রতিরোধের চেষ্টা করেননি ছিনতাইয়ের শিকার ওই দুজন। তাছাড়া যারা টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তারাও কোনো ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার না করেই মোটরসাইকেলে বসে টাকার ব্যাগ কাঁধ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। বিষয়টি পুলিশের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে শুরু থেকেই। এরপর কেঁচো খুঁড়তেই বেরিয়ে এলো সাপ।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত উপকমিশনার আবদুর রশিদ, নগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস, বোয়ালিয়া থানার সহকারী কমিশনার ফারজিনা ইয়াসমিন, থানার ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মন প্রমুখ।
স্ব.বা/বা