আমের দামে লক্ষীছাড়া ‘ল²ণভোগ’ ক্রেতা কম, মজুরি বেশি

রাজশাহী

বাঘা প্রতিনিধি : বিগত বছরের তুলনায় এবার আমের বাজার নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, যাঁরা গরিব বা নিম্ন আয়ের মানুষ, তাঁরা বেশির ভাগই কম দামের ল²ণভোগ আম কেনেন। যাঁদের হাতে পয়সা আছে, তাঁরা বেশি দামের আম গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপলি এসব আম কেনেন। এই আম মিষ্টি বেশি, আঁশ কম। খেতে সুস্বাদু। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এসব আমের দাম চড়া। আর ল²ণভোগ আমের চাষ বেশি হলেও দাম ক্রমশ কমছে। এবার এই আমের ক্রেতাদের হাতে পয়সা নেই। তাই ‘যে আমই ভাঙি মজুরি তিন শ টাকার কম হলে হবে না। আর ভ্যানে আড়তে নিলে ৫শ টাকা।

দিঘা গ্রামের আমচাষি আবদুল বারি জানান, তাঁর নিজ বাগানের ল²ণভোগ আম বিক্রি করেছেন ৭০০ টাকা মণ দরে। মোট আম বিক্রি করেছেন ২২ মণ ২৯ কেজি । সবই ওই দামে দিতে হয়েছে। এর মধ্যে আবার কর্মচারীদের খরচ বাদ দিতে হচ্ছে। আক্ষেপ করে বলেন, যে শ্রমিক শুধু আম ভাঙছেন তাঁকে তিন শ টাকা দিতে হচ্ছে। আর আম ভেঙে যে নিজের ভ্যানে করে আড়তে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁকে ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে। তাঁর বাগানের আম ভ্যানে করে টানছিলেন সেলিম। তিনি বললেন, আমের দাম যা-ই হোক, তাঁর পারিশ্রমিক ৫০০ টাকা।

এদিকে,মৌসৃুম শেষ হলেও ল²ণভোগ জাতের প্রায় চার শ মণ আম বিক্রি করতে পারেননি বাগানমালিক রশিদ। ৫ দিন আগে খুলনার আড়তে পাঠাতে আম ভাঙতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আড়তদার ফোন করে মানা করেছেন। তার সাথে কথা বলে জানা গেল, নতুন জাতের আম আসার কারণে চাষিরা এখন ল²ণভোগ আমের বাগান বদলে ফেলছেন। এই বাগানের গাছের ফাঁকে ফাঁকে আ¤্রপলি জাতের গাছ লাগিয়ে দিচ্ছেন। দিঘা গ্রামের আবদুল মান্নান তাঁর তিন বিঘা জমির ল²ণভোগ আমের বাগানের ফাঁকে ফাঁকে নতুন করে আ¤্রপলি ও হিমসাগর আমের গাছ লাগিয়ে দিয়েছেন। আবদুল মান্নান বললেন, তাঁর মতো অনেকেই এখন গাছ বদলে ফেলছেন। গরিবের বাগানের মালিক হয়ে শুধু শুধু গরিব হয়ে থাকার কোনো মানে হয় না। তাঁর তিন বিঘা বাগান যদি হিমসাগরের হতো, তাহলে এখন চার গুণ বেশি দামে আম বিক্রি করতে পারতেন।

শনিবার (২০ জুন) বাঘা উপজেলার বাউসা মিয়াপাড়া গ্রামের একটি বাগানে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে । তাঁদের কথাবার্তায় জানা যায়, রাজশাহীর গোটা জেলায় যে পরিমাণ আম চাষ হয়, তার অর্ধেক হয় বাঘা উপজেলায়। বাঘার কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বললেন, উপজেলার প্রায় ৭০ শতাংশ আমবাগান ল²ণভোগের। কিন্তু বাজার দরে কপাল খোলেনি ল²ণভোগের ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,প্রচুর ফলন হওয়ায় একসময় ল²ণভোগ আমের বাগান করার হিড়িক পড়ে যায়। এই আম খেতে একটু কম মিষ্টি হয় কিন্তু রং খুব উজ্জ্বল, দেখতে খুব সুন্দর। এবার এই আমের রংও অতটা ভালো হয়নি। মিষ্টিও কম। একটু টকও লাগছে। এমনটিই বললেন বাঘা উপজেলার দিঘা বাজারের মেসার্স আকরাম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আকরাম হোসেন। তাঁর আড়তে ল²ণভোগ আম ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে কেনা হচ্ছে।

এদিকে আমের হাটের চিরাচরিত মৌ মৌ গন্ধ ও আমের রঙের বাহার এবার একটু কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আম পরিপুষ্ট হওয়ার জন্য লম্বা একটা শুষ্ক ও গরম আবহাওয়ার দরকার হয়। এবার আমের মৌসুমে বাড়তি বৃষ্টির কারণে কাঙ্খিত সেই হাওয়া মেলেনি। এই প্রভাব সব আমের ওপরই পড়েছে।

 

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *