উপজেলা নির্বাচনে কেউ অংশ নিলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা: বিএনপি

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তে অটল বিএনপি। তবে কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দলের কেউ ভোটে অংশ নিলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে দলটি। ‘শোকজ’ বা ‘বহিষ্কারের’ চিন্তা-ভাবনা করছে দলের হাইকমান্ড। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যারা মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন তাদের নামের তালিকা পাঠাতে তৃণমূলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভোটার ভোট দিতে পারেননি। আগের রাতেই ভোট হয়ে গেছে। মানুষ ভোট দিতে না পারলে, সেই প্রহসনের নির্বাচন করে লাভ নেই। ফলে এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। তিনি বলেন, ব্যক্তিস্বাধীনতা সবার আছে। কেউ চাইলে নির্বাচন করতেই পারেন। কেউ যদি স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করেন তাহলে দল থেকে পদত্যাগ করে করতে পারেন। তখন তো দলের পরিচয় রাখার দরকার হয় না। পদত্যাগ করে নির্বাচন করলে তো বহিষ্কারের প্রশ্ন আসবে না।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে দলের কেউ অংশ নিতে পারবে না- এমন নির্দেশনা সব সাংগঠনিক জেলা শাখায় জানিয়ে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্র এরকম সিদ্ধান্ত নিলে নিয়ম অনুযায়ী দলের পদে থেকে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারে না। সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আসবে। সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নিলে দলে শৃঙ্খলা থাকবে না। তিনি জানান, ভাইস চেয়ারম্যানের দুটি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও একই ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই কিন্তু বিএনপি করেন সেক্ষেত্রে তারা নির্বাচন করতে চাইলে আপত্তি থাকবে না।

গত ২৪ জানুয়ারি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবেন না। জানা গেছে, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দোয়ারাবাজার ও বিশ্বম্ভরপুর, সিরাজগঞ্জের চৌহালী, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ, নাটোর সদর, রাজশাহীর বাঘা, বাগমারা ও পুঠিয়া, হবিগঞ্জের বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, চুনারুঘাট ও মাধবপুর, নেত্রকোনার পূর্বধলা এবং পঞ্চগড় সদর, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলায় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা।

সুনামগঞ্জের চারটি উপজেলায় বিএনপির ৭জন নেতা স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তারা হলেন- তাহিরপুর উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান, জেলা বিএনপির সহসভাপতি আনিসুল হক, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফারুক আহমদ ও আনসার উদ্দিন। এছাড়া দোয়ারাবাজার উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির বর্তমান সদস্য শাহজাহান এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ। নীলফামারীতে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির ওলামা দলের জেলা সভাপতি আ ন ম রুহুল ইসলাম, নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, রাজশাহীর বাঘায় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন, বাগমারায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি ডিএম জিয়াউর রহমান ও পুঠিয়ায় জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মোখলেসুর রহমান নির্বাচন করছেন।

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বমিটির সদস্য ও জেলার সহ-সভাপতি মঞ্জুর উদ্দিন, আজমিরীগঞ্জে উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক খালেদুর রশিদ, চুনারুঘাটে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ লিয়াকত হাসান, মাধবপুরে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ শাহজাহান এবং নেত্রকোনার পূর্বধলায় প্রার্থী হয়েছেন জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির সহসভাপতি সাইদুর রহমান। পঞ্চগড় সদরে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু দাউদ প্রধান, বোদায় পৌর যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক জাকির হোসেন, দেবীগঞ্জে বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল গণি বসুনিয়া এবং দেবীগঞ্জ উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাখখারুল আলম।

তবে তৃণমূল বলছেন, উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া না-নেয়া নিয়ে স্থানীয় বিএনপিতে ধোঁয়াশা রয়েছে। গতমাসে স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে আসে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া যাবে কি না, হলে বহিষ্কার করা হবে কি না- এ বিষয়ে তৃণমূলে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা যায়নি।

হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও বানিয়াচং উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মঞ্জুর উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আমাদের কাছে লিখিত নির্দেশনা নেই। গণমাধ্যমে জেনেছি, বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে যাবে না। আমি যতটুকু শুনেছি দল প্রার্থী হতে নিষেধও করেনি। আমি তো দলীয়ভাবে যাচ্ছি না। আমি স্বতন্ত্রভাবে বানিয়াচংয়ে উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে যাচ্ছি। এখন দল তো আমাকে কিছু জানায়নি। যদি দলের কোনো নির্দেশনা পাই তাহলে সিদ্ধান্ত নেব কি করব।

রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক একেএম মতিউর রহমান মন্টু  বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা রয়েছে দলের কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। মৌখিকভাবে সবাইকে জানানো হয়েছে। তারপরও কয়েকজন স্বতন্ত্রভাবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন শুনেছি। তবে যেহেতু আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রত্যাহারের শেষ দিন। আমরা ওই পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। তারপরও যদি দলের পদে থেকে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয় তাহলে তাদের পদসহ নাম কেন্দ্রে পাঠাব। কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবেন। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। কিন্তু দলীয় পদে থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী যারা হয়েছেন তাদের ব্যাপারে দু-একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *