বাগাতিপাড়া(নাটোর) প্রতিনিধি:
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কোন সুযোগ নেই বলে হুঁশিয়ার করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। একইসাথে যারা নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের অবিলম্বে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নৌকার পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন তারা। শনিবার দুপুরে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেকেন্দার রহমানের পক্ষে এক বিশেষ বর্ধিত সভায় এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বাগাতিপাড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে জেরা আওয়ামী লগি নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, সহ-সভাপতি সাবেক সাংসদ আবুল কালাম আজাদ, সহ-সভাপতি ও নাটোর পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোর্ত্তুজা আলী বাবলু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেরা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান, প্রচার সম্পাদক চিত্তরঞ্জন সাহা, দপ্তর সম্পাদক দিলীপ কুমার দাস, উপ-দপ্তর সম্পাদক আকরামুল ইসলাম, জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন বিপ্লব, জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম মাসুমসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
বিশেষ বর্ধিত সভা শুরুর আগে নৌকার প্রার্থীর সমর্থক নেতাকর্মীরা স্থানীয় সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুলের বিরুদ্ধে দলীয় প্রচারণায় স্বজনপ্রীতিসহ দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগ এনে মানববন্ধন করে। এসময় উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ নৌকার প্রার্থীর পক্ষে থাকার ঘোষণা দিলে নেতাকর্মীরা আশ্বাস্ত হন এবং মানববন্ধন স্থগিত করেন। পরে বর্ধিত সভায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ নৌকা প্রার্থীর বিপক্ষে সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুলের অবস্থান তুলে ধরে বক্তৃতাকালে জেলা নেতৃবৃন্দ তাদের থামিয়ে দেন। এ নিয়ে হট্টগোল শুরু হলে কিছুক্ষণের জন্য সভার কাজ স্থগিত হয়ে যায়।
উভয়ের সমঝোতার পর পুনরায় সভা শুরু হলে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃণমূলের প্রাক-ভোটাভুটিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার রহমান প্রথম হন এবং দলীয় চুড়ান্ত মনোনয়ন পান। তবুও ওই ভোটাভুটিতে তৃতীয় হওয়া সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুলের ছোট ভাই অহিদুল ইসলাম গকুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। নৌকার প্রার্থী সেকেন্দার রহমানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সাংসদ বকুল তার ভাইকে জেতাতে উঠেপড়ে লেগেছেন।
পাকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি রেজাউল ইসলাম বলেন, ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ নৌকাকে জয়যুক্ত করতে প্রস্তত। জেলার নেতারা সিদ্ধান্ত দিয়ে যাবেন বাগাতিপাড়ায় নৌকা থাকবে নাকি নৌকার বিরোধীতাকারীরা থাকবে।
জামনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আজকের সাংসদ বকুলও নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে দুইজন প্রার্থী থাকায় নৌকার ভরাডুবি হয়েছিল। এবার তার ভাই নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এমন ভূমিকায় নৌকার পরাজয়ের শঙ্কা তৈরী হয়েছে। সাংসদ চাইলেই নৌকার বিজয় নিশ্চিত হবে।
উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তৌফিকুর রহমান শ্রাবণ বলেন, ১০ই মার্চ ভোটের দিন ছাত্রলীগ মাঠে থাকবে। নৌকার বিজয় নিশ্চিত না করে ঘরে ফিরবে না কেউ।
উপজেলা কৃষকলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান দোলন বলেন, তৃণমূল আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছে সেকেন্দার রহমানকে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছে। দলীয় স্বার্থকে আগে দেখবো আমরা। নৌকাকে বিজয়ী না করলে আগামীতে ঘোর দূর্দিন অপেক্ষা করছে।
উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ ছিলো, আছে এবং থাকবে। আমরা সর্বশক্তি নিয়োগ করে নৌকাকে জেতাবো। নৌকার বিরোধীতা করলে দলের সাথে বেঈমানী করা হবে। কোন স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঠাঁই হবে না।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, বাগাতিপাড়ার ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ নৌকাকে জেতাবে। কোন শক্তি নৌকাকে পরাজিত করতে চাইলে তাদের প্রতিহত করা হবে। বাগাতিপাড়ায় শেখ হাসিনার মার্কাই শেষ কথা।
নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার রহমান বলেন, বাগাতিপাড়ার তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত, শেখ হাসিনার পছন্দকে চ্যালেঞ্জ করে সাংসদ বকুল তার ভাইকে নির্বাচনে রেখেছেন। সরাসরি নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সাংসদ দলের প্রতি অনাস্থা প্রদর্শন করছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী অহিদুল ইসলাম গকুল বলেন, তিনি নৌকা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নির্বাচন করছেন না। যারা আজকে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আছেন, দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে একই পদে বহাল রয়েছেন তারা। তাদের মানুষ ঘৃণা করে। তারা জনবিচ্ছিন্ন। তাই এলাকার সাধারণ ভোটারসহ দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীদের ইচ্ছা ও চাপে তিনি নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়েছেন। তার ভাইয়ের কোন ক্ষমতা তিনি ব্যবহার করছেন না। উপরন্ত তার ভাই তাকে প্রার্থীতা প্রত্যঅহার করার চাপ দিয়েছেন কয়েকবার। কিন্ত জনগণের চাপের মুখে তিনি প্রত্যাহ্যার করতে পারছেন না।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোর্ত্তুজা আলী বাবলু বলেন, নৌকার প্রতীকের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতেই দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
জেলা আওয়ামী সহ-সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আওয়ামী লীগ ওয়াদাবদ্ধ। তাঁর পছন্দের নৌকার প্রার্থী সেকেন্দার আলীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার অধিকার আমাদের নেই। আওয়ামী লীগ দলের সাথে বেঈমানী করতে জানে না। স্বতন্ত্র প্রার্থী অল্প সময়ে নিজেকে প্রত্যাহার করবেন বলে সকলে আমরা প্রত্যাশা করি।
এ ব্যাপারে সাংসদ শহিদুল ইসলাম বকুল জানান, তিনি নিজেও চান না তার পরিবারের কেউ উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করুক। জনগণের চাপে তার ভাইকে ভোট থেকে সরাতে ব্যর্থ হয়েছেন বলেও অকপটে স্বীকার করেন তিনি।