স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর রাজপথে নারী সার্জেন্ট দেখে এখন অনেকেই চমকে ওঠেন। বর্তমানে চারজন নারী সার্জেন্ট দায়িত্ব পালন করছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তারাও এখন রাজপথে পুরুষের পাশাপাশি যানবাহন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করছেন। দেশে প্রথম সার্জেন্ট পদে নিয়োগ পাওয়া নারী ট্রাফিক সার্জেন্টদের মধ্যে রয়েছেন তারা।
অদম্য প্রতিভার সাহসী এই চার নারী ট্রাফিক সার্জেন্ট এখন রাজশাহীর রাজপথে হাত উঁচু করে গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছেন। সাধারণত এতদিন এমন দৃশ্যে পুরুষ সার্জেন্টদের দেখে দেখে চোখ সয়ে গেছে সবার।
তাই হঠাৎ করে সেখানে নারী সার্জেন্টদের কাজ করতে দেখে চমকে উঠছেন অনেকেই। দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে রাজপথের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করছেন নারী সার্জেন্টরাও।
পুরুষের মতই বীর দর্পে বাইক চালিয়ে একজন নারী সার্জেন্ট ব্যস্ততম সড়ক ঘুরছেন। সড়কের পাশে বড় বড় গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র দেখছেন, সমস্যা দেখলেই মামলা ঠুকে দিচ্ছেন। অথচ কিছুদিন আগেও সড়কে এমন দৃশ্য ছিল অনেকটা কল্পনার মতই, যা এখন রূপ নিয়েছে বাস্তবে।
শহীদ কামারুজ্জামান চত্ত্বর রাজশাহী মহানগরীর সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক। দিনভর যানবাহনের জটলা লেগেই থাকে সেখানে। চৌরাস্তার এই পয়েন্টের চারপাশে দু’জন ট্রাফিক সার্জেন্ট ও চারজন ট্রাফিক পুলিশ দিয়েও যানবাহন সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। সেখানেই বেশিরভাগ সময় দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় নারী ট্রাফিক সার্জেন্টদের। এছাড়া অপর ব্যস্ততম সড়ক সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট এবং রাজশাহী কলেজ মোড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার যানজট ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন তারা।
পুলিশ সদর দফতর থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ সালে পুলিশ বাহিনীতে নারী পুলিশের নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু হয়। সর্বশেষ সার্জেন্ট পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন ১ হাজার ৮৩৭ জন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী ছিলেন ৪৬ জন।
সব প্রক্রিয়া শেষে নিয়োগ পান ২৮ জন। রাজশাহীর সারদায় থাকা বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাদের। এরপর প্রশিক্ষণ শেষে রাজশাহীতে চারজন ও রংপুর বিভাগে দুইজন, হাইওয়ে পুলিশে দু’জন এবং খুলনা মেট্রোপলিটনে দু’জন নারী দায়িত্ব পালন করছেন। বাকি ২২ জনই নিয়োগ পেয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশে। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক পাস। সঙ্গে রয়েছে মোটরসাইকেল চালনায় দক্ষতা ও কম্পিউটারে অভিজ্ঞতা।
ট্রাফিক সার্জেন্ট সুমিতা আকতার শিউলী বলেন, পুলিশের পোশাকের প্রতি বরাবরই তার আকর্ষণ ছিল। এই পোশাক পড়ে মানুষকে সেবা করা সম্ভব। খুব দ্রুত সময়ে নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়া যায়। তাই এই পেশায় এসেছেন।
পথের ওপর দাঁড়িয়ে থেকে দায়িত্ব পালন করতে কেমন লাগে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি হেসে বলেন, ভালোলাগা থেকেই এই পেশা বেছে নিয়েছেন। তাই প্রতিকূলতা থাকলেও বা একটু কষ্ট হলেও প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করছেন। সড়কে যানবাহনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে ভালোই লাগে তার।
ট্রাফিক সার্জেন্ট ইয়াসমিন সুলতানা জানান, এমন চ্যালেঞ্জিং পেশায় আসার জন্য সেই ছোট্টবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল। আর পড়াশোনা শেষ করার পর সেই সুযোগও চলে আসে। তাই তিনি পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন৷ প্রশিক্ষণ শেষে কর্মক্ষেত্রে নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের চেষ্টা করছেন। এখানে আরও তিন সহকর্মীকে পেয়েছেন। এখন তাদের দেখে অন্য নারীরাও অনুপ্রাণিত হয়ে এই পেশায় আসবেন বলে প্রত্যাশা করেন ইয়াসমিন।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এসবি) ইফতে খায়ের আলম জানান, রাজশাহী ট্রাফিক বিভাগে চারজন নারী এই প্রথম সার্জেন্ট পদে নিয়োগ পেয়েছেন। এরা হলেন- ট্রাফিক সর্জেন্ট সুমিতা আকতার শিউলী, ইয়াসমিন সুলতানা, সাবিহা আকতার ও আফসানা ফেরদৌসি রহমান। বছরের শুরুতেই তারা এখানে যোগ দেন। অত্যন্ত দক্ষতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
ইফতে খায়ের আলম বলেন, কাজের মধ্যে দিয়েই তারা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে নারীরাও পুরুষদের সমগুণ সম্পন্ন। এমন ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় তাদের দেখে এখন অনেক নারীই অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। এছাড়া নারীর ক্ষমতায়নে এটি আরও একটি দৃষ্টান্ত বলেও উল্লেখ করেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) হাসিবুল বেনজির বলেন, রোদ-বৃষ্টিসহ যে কোনো বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে তারা রাজপথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
সড়কে পুরুষের পাশাপাশি নারী অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য তাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ। যে কোনো পরিস্থিতিতে অবিচল থেকে তারা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন৷ যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তাদের দেখে এখন অনেক নারীই এই পেশায় আসবেন বলেও উল্লেখ করেন ট্রাফিক উপ-কমিশনার হাসিবুল বেনজির।