রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নামে হিফজখানা, সমালোচনার ঝড়

রাজশাহী লীড শিক্ষা

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভিসির নামে একটি হিফজখানা (হাফেজিয়া মাদ্রাসা) চালু করা হয়েছে। ভিসি এম আবদুস সোবহানের নামের সঙ্গে ‘মিল রেখে’ ওই হিফজখানার নামকরণ করা হয়েছে ‘সোবহানিয়া আল-কুরআনুল কারীম হিফজখানা’। আগামী মাসে সেখানে ছাত্রদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাব্বত হোসেন মিলন ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন- ফাজলামি আর তেলবাজির সীমা থাকা দরকার।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাজিম মৃধা ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- শেষ সময়ে এসে হজ, দাড়ি-টুপি; অতঃপর জনগণের টাকায় নিজের নামে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান! ষোলোকলা পূর্ণ!

জানা গেছে, বর্তমান প্রশাসনের সময় প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কবরস্থান জামে মসজিদের পুনর্র্নিমাণ করা হয়। চলতি বছরের ৬ মে ওই মসজিদের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এম আবদুস সোবহান।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, রেজিস্ট্রার এমএ বারি, প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান প্রমুখ।

ওই মসজিদের দ্বিতীয়তলায় ‘সোবহানিয়া আল-কুরআনুল কারীম হিফজখানা’ উদ্বোধন করা হয়েছে। সেখানে একটি নামফলকও স্থাপন করা হয়।

হিফজখানার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবরস্থান জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মোসাদ্দেক হোসেন জানান, ওই হিফজখানায় ২০ জন ছাত্রকে ভর্তির পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের পড়াবেন দুজন শিক্ষক। ৬-৭ বছর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৫ বছর বয়সী ছাত্রদের ভর্তি করা হবে। ছাত্রদের ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার টাকা। চলতি বছরের নভেম্বরের শুরুতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হবে। আবাসিক এ প্রতিষ্ঠানে থাকা-খাওয়াসহ সামগ্রিক ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ২০০ টাকা।

ওই হিফজখানার নামকরণের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ আলী হোসেন জানান, তিনি ও রাবির কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম পরামর্শ করে এ নামের বিষয়ে ভিসি আবদুস সোবহানকে বলেছিলেন। পরে ভিসি সেই নাম রাখার বিষয়ে অনুমতি দিয়েছেন।

ভিসির নামের সঙ্গে মিল রেখে হিফজখানার নাম রাখলেন কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে হাফেজ আলী হোসেন জানান, ভিসি এম আবদুস সোবহানের সময় ওই হিফজখানা চালু হয়েছে, তাই তার নাম দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সোবহান মানে তো পবিত্র, স্যারের নামের সঙ্গে মিল আছে। আমরা দোয়াও করব, স্মরণ করব যে উনি করেছেন।’

নামকরণের আগে জানানো হয়েছিল উল্লেখ করে ওই ইমাম বলেছেন, ‘আপনার জন্য দোয়া করব, ভবিষ্যতে আমরা থাকব না, আপনার উদ্যোগে যখন এটা হল, তখন একটু দোয়ার জন্য আমরা বলব যে, উনার নামে দোয়া কর। সে জন্যই সোবহান স্যারের নামের সঙ্গে মিল রেখে এটা করা হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ আলী হোসেন আরও জানান, ‘সোবহানিয়া আল-কুরআনুল কারীম হিফজখানা’ নামকরণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির মৌখিক অনুমোদন রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে হিফজখানা চালু ও ভিসির নামের সঙ্গে মিল রেখে নামকরণের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন, জানতে চাইলে ভূতত্ত¡ ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সুলতানুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘সত্যি সত্যি যদি ভিসি এম আবদুস সোবহানের নামের সঙ্গে মিল রেখে হিফজখানার নামকরণ হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই এটা এক ধরনের অন্যায়। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদে কারও নাম দিতে গেলে বিভিন্ন কমিটির সিদ্ধান্ত লাগে, একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন দরকার হয়। এ কাজে এগুলো হয়েছে কিনা, সেটা এখনও আমি জানি না। তবে ভিসির নামে এটার নামকরণ করার কোনো কারণ নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান চালু হলে তার সিলেবাস কী হবে, পাঠ্যক্রম কী হবে-সে বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন লাগে। সেখানকার ফান্ড কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়েও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট অনুমোদন থাকতে হবে। তা না হলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কেন সেটার অনুমোদন দেবে বা অর্থ দেবে?

বিশ্ববিদ্যালয়ে হিফজখানা চালানোর বিষয়ে ইউজিসির কোনো নীতিমালা আছে কিনা, সেই প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এ রকম ফান্ডিং করার আমাদের সুযোগ নেই। আলাদাভাবে আমার মনে হয় না এমন কিছু করার সুযোগ আছে। কমিশনে এ বিষয়ে এখনও আলোচনা হয়নি।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এম আবদুস সোবহানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সূত্র: যুগান্তর

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *