রাজশাহীতে চলছে গর্ভের সন্তান বেচাকেনা

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী রেল স্টেশনের গণসৌচাগারের পেছনের ফাঁকা জমিনের নির্জনতা ঘিরেই কিশোরীর কথিত সংসার। গর্ভে বেড়ে উঠছে শিশু। তবে ওই শিশুর বাবার নাম জানেনা সে। ভূমিষ্ঠ না হতেই এরই মধ্যে পেটের শিশুকে বিক্রি করে দিয়েছে ওই কিশোরী।

নগরীর এক নি:সন্তান দম্পতি ১০ হাজার টাকায় কিশোরীর পেটে থাকা সন্তানকে কিনে নিয়েছে। প্রতিদিন সন্তান সম্ভবা কিশোরীকে ওই দম্পতির পক্ষ থেকে তিন বেলা খাবার পৌছে দেয়া হয় স্টেশন এলাকায়। সন্তান ভূমিষ্ঠের পর কিশোরী পাবে নগদ ১০ হাজার টাকা। এখন সে ওই অপেক্ষায় নিশ্চিন্তেই আছে।

১৮ বছর না পেরুনো আরেক কিশোরীর পেশাও পূর্বের কিশোরীর মতো। সেও একইভাবে গত রমজানে তার শিশুকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। কামাল নামের এক মোটর গেরেজ (ভদ্রা এলাকার) কর্মী শিশুটিকে কিনে নেয়। এভাবেই রাজশাহীতে চলছে গর্ভের সন্তান বেচাকেনা। তবে দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে নিঙ্গ ভেদে। মেয়ে হলে কম আর ছেলে হলে বেশী দাম। সিমা নামের এক নারীর এ সব শিশু বেচাকেনার সমন্বয় করে। সে তার নিজের সন্তানকেও বিক্রি করেছে। শনিবার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

জানা গেছে, গত শুক্রবার সিমা ভদ্রা এলাকায় শ্যামলী নামের আরেক নারী তার ৫ মাসের এক শিশুকে বিক্রি করে মাত্র ১২ হাজার টাকায়। ওই শিশুকে কিনে নেয় ঢাকার এক গার্মেন্টস কর্মী। বিক্রির পর থেকে শিশুর সেই মা শ্যামলীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে শিশুকে কিনে বিপদে পড়েছে ওই নি:সন্তান দম্পতি। ক্রয়কৃত শিশু আদৌ শ্যামলীর, নাকি চুরি করা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

এদিকে রাজশাহীতে যারা সন্তান ধারণ করে গর্ভে বা জন্ম দিয়ে বিক্রি করছে তারা নগরে ভ্রাম্যমাণ পতিতা হিবেসে কাজ করে। রাজশাহীতে এই সিন্ডিকেটে বেশ কয়েকজন রয়েছে। যাদের মধ্যে কয়েকজনের বয়স ১৮ বছরের নিচে। আর বিক্রি হয়ে যাওয়া শিশুদের শেষ পরিণতি কী হচ্ছে তা কেউই খবর রাখছে না বা এর কোন হিসেবও কারো কাছে নেই।
শনিবার দুপুরে রাজশাহী স্টেশন এলাকায় সন্তানসম্ভবা কিশোরীর সাথে কথা হলে সে জানায়, তার বাড়ি বরিশাল। শিশুকালে তার এই শহরে পা পড়ে। নিজের বাবা-মা সম্পর্কে তার জানা নেই। তার মতো আরো অনেক কিশোরী ও নারী রাজশাহী স্টেশনের পশ্চিমে অবস্থিত প্রাইমারি স্কুলের পেছনে কথিত সংসার পেতে বসেছে। কে তার গর্ভের শিশুর বাবা তা সে জানে না। এই সন্তানের দায়িত্ব সে নিতে পারবে না। তাই গর্ভে থাকতেই তার সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছে।

এদিকে, চলতি বছরের গত মে মাসে সন্তান বিক্রি করেছিলো আরেক কিশোরী। শনিবার সকালে সেই কিশোরীর সাথে ভদ্রা রেল বস্তিতে কথা হলে সে জানায়, তার স্বামী ছিলো। তবে এখন সে একা। স্টেশন ঘিরে সেও সংসার পেতে বসেছে। খদ্দের প্রতি তার আয় ১০০ টাকা। সেই সাথে কোন নি:সন্তান দম্পতি যদি তাকে অনুরোধ করে তবে সে ওই দম্পতির জন্য ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে শিশু জোগার করে দেয়। এই কিশোরীর ভাষায়, কণ্যা শিশু হলে রেট কম, আর ছেলে শিশুর রেট বেশি। আবার গয়ের রং ও স্বাস্থ্য ভেদেও দাম কম-বেশী হয়।

অপরদিকে, জান্নাতি ওরফে সূর্য নামের এক গার্মেন্টস কর্মী গত শুক্রবার রাতে ভদ্রা রেল বস্তি থেকে সীমার মাধ্যমে শ্যামলীর কোলের ৫ থেকে ৭ মাসের শিশুকে কেনার পর আইনের সম্মুখিন হতে বাধ্য হয়েছে। বিষয়টি জানাজানির পর শনিবার দুপুরে তাকেসহ তার খালা রোকেয়া ও মধ্যস্থতাকারী কিশোরীকে তুলে নিয়ে যায় রেল পুলিশ। রাজশাহী রেলওয়ে থানার পুলিশ বিকেলে তাদের বিরুদ্ধে অপহারণ মামলা দিয়ে চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির করে। আদালত তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেয় এবং শিশুকে ছোটমনি নিবাসে প্রেরণ করে।

গ্রেপ্তারের আগে জান্নাতি ও তার স্বামীর সাথে কথা হলে তারা জানান, ১২ বছরের সংসারে তাদের কোন সন্তান নেই। তাই তারা ঠিক করেন অনাথ কোনো শিশুকে দত্তক নেয়ার। গত ১০ থেকে ১২ দিন আগে জান্নাত রাজশাহীতে ছোটবনগ্রাম এলাকায় তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসে। এর মাঝে শুক্রবার রাতে ভদ্রা রেল বস্তিতে বসবাসকারী তার খালা রোকেয়া তাকে জানান, একটা শিশু পাওয়া গেছে। জান্নাত দ্রুত ভদ্রায় পৌছায় এবং শিশুকে ১২ হাজার টাকায় কিনে নেয়।

রাজশাহী রেলওয়ে থানার ওসি মোহাম্মদ শাহ কামাল জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা যে শিশুকে কিনেছে তা আসলে কার কাছ থেকে তা তারা বলতে পারেনি। অর্থাৎ শিশুর প্রকৃত মা কে তারা জানাতে বা দেখাতে পারেনি। একারণে তাদের বিরুদ্ধে শিশু অপহরণ মামলা দেয়া হয়েছে। আদালত তাদের জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন, আর শিশুকে ছোটমনি নিবাসে প্রেরণ করেছেন।

 

 

স্ব:বা/না

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *