শাবনূরের জন্মদিনে ভক্তদের ব্যতিক্রমী ভালোবাসা

বিনোদন

স্বদেশবাণী ডেস্ক: দেশীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী নায়িকা শাবনূর। রঙিন পর্দায় অনিয়মিত এক দশক ধরে। তবুও প্রিয় নায়িকাকে ঘিরে ভক্তদের নিত্য নতুন কর্মের যেন শেষ নেই। আজ ১৭ ডিসেম্বর শাবনূর খ্যাত নূপুরের জন্মদিন। শাবনূরের এবারের জন্মদিনে বেশ কিছু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছে তার ভক্তকুল।

প্রতি বছর জন্মদিন দেশে পালন করলেও করোনার কারণে এ বছর সুদূর অস্ট্রেলীয়া থেকে দেশে আসা হয়নি শাবনূরের। তাই বলে কি দেশে তাঁর জন্মদিন পালিত হবে না! -এটা ভাবতেই পারে না তাঁর ভক্তরা।

তাঁর ৪১তম জন্মদিন উপলক্ষে ‘সুপারস্টার শাবনূর’ গ্রুপের সদস্যদের উদ্যোগে এতিম, অসহায় এবং গরীবদের মধ্যে খাবার এবং শীতবস্ত্র বিতরণের আয়োজন করা হয়। তাছাড়া গ্রুপে আয়োজন করা হয় জন্মদিন উপলক্ষে সদস্যদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন ইভেন্টভিত্তিক কনটেস্ট।

এই প্রসঙ্গে ‘সুপারস্টার শাবনূর’ গ্রুপের এডমিন শারমিন ইসলাম বলেন, “প্রথমবারের মতো প্রিয় মানুষের জন্য ভিন্ন ধরনের কিছু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। গ্রুপ থেকে জুবায়ের, নন্দী, রেশমা, রেহানা, তৃপ্তি, জাকিয়া, রাকিব, জিয়াউর, রানী, ঝুমু, আজমিরা, মাসুম, রাজ, রাসেলসহ বেশ কিছু সদস্য সার্পোট দিয়েছেন। ধন্যবাদ জানাই সবাইকে, যার কারণে কক্সবাজারেই আয়োজনটা সফলভাবে করতে সক্ষম হয়েছি। প্রিয় অভিনেত্রীর বিশেষ দিনে ভিন্ন ধরনের কিছু করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত।’

শাবনূর যেন সবসময় ভালো থাকে এটাই তাঁর ভক্তদের চাওয়া।

প্রসঙ্গত, শাবনূর বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের অন্যতম সফল অভিনেত্রী। তিনি ২০০৫ সালে মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত দুই নয়নের আলো ছবিতে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি ছয়বার বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি রেকর্ড সংখ্যক ১০ বার তারকা জরিপে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন।

শাবনূরের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে চাঁদনী রাতে (১৯৯৩) চলচ্চিত্র দিয়ে। এই চলচ্চিত্রটি ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হলেও পরে জনপ্রিয় চিত্রতারকা প্রয়াত সালমান শাহ-এর সঙ্গে জুটি বেধে তিনি সফলতা লাভ করেন। সালমান শাহের সাথে তার অভিনীত স্বপ্নের ঠিকানা (১৯৯৫) ও সত্যের মৃত্যু নাই (১৯৯৬) যথাক্রমে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শীর্ষ ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র।

১৯৯৯ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত তিনি টানা পাঁচবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন, তন্মধ্যে প্রথম তিন বছর কোনও নির্দিষ্ট চলচ্চিত্রের জন্য পুরস্কার প্রদান করা হয়নি এবং পরের দুই বছর যথাক্রমে শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ (২০০১) ও স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ (২০০২) চলচ্চিত্রের জন্য। তার পরের পাঁচটি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার আসে ফুলের মত বউ (২০০৪), মোল্লা বাড়ীর বউ (২০০৫), আমার প্রাণের স্বামী (২০০৭), ১ টাকার বউ (২০০৮), ও বলবো কথা বাসর ঘরে (২০০৯) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য।

শাবনূর ১৯৭৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর যশোর জেলার শার্শা উপজেলার নাভারণে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিকভাবে তার নাম রাখা হয় কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর। চলচ্চিত্রে আগমনের পরে পরিচালক এহতেশাম তার নাম রাখেন শাবনূর। শাবনূর শব্দের অর্থ রাতের আলো। শাবনূরের পিতার নাম শাহজাহান চৌধুরী। তিন ভাই বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় তিনি। তার ছোট বোন ঝুমুর এবং ভাই তমাল দুজনেই নিজ নিজ পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী।

শাবনূর সর্বশেষ ২০১২ সালের শেষের দিকে পাগল মানুষ ছায়াছবির কাজ শুরু করেন। কিন্তু ছবির পরিচালক এম এম সরকার শ্যুটিং স্পটেই মারা গেলে ছবিটির কাজ অসমাপ্ত থেকে যায়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে আবার নতুন করে ছবিটির জন্য চুক্তিবদ্ধ হন এবং পরিচালক বদিউল আলম খোকন ছবিটির কাজ শেষ করেন।

এর আগে ২০১৩ সালে মুক্তি পায় ফেরদৌস ও মৌসুমীর সঙ্গে অভিনীত মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত শাবনূরের কিছু আশা কিছু ভালোবাসা ছবিটি। ২০১৬ সালে চুক্তিবদ্ধ হন পি এ কাজলের মন যারে চায় ছবিতে। এতে তাকে একজন নারী নেত্রীর ভূমিকায় দেখা যায়। এছাড়া চুক্তিবদ্ধ হন মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের কতদিন দেখিনি তোমায় ছায়াছবিতে। এতে তার বিপরীতে কাজ করেন ফেরদৌস।

২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর ব্যবসায়ী অনিক মাহমুদ হৃদয়ের সঙ্গে ঘর বাঁধেন শাবনূর। তবে বনিবনা না হওয়ায় চলতি বছর ২৬ জানুয়ারি তাদের বিচ্ছেদ হয়। তাদের সংসারে আইজান নিহান নামের এক পুত্র সন্তান রয়েছে। বর্তমানে ছেলেকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বসবার করছেন শাবনূর।

শাবনূর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘ভালোবেসে বউ আনবো’, ‘বিক্ষোভ’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘মহামিলন’, ‘তোমাকে চাই’, ‘পৃথিবী তোমার আমার’, ‘বিয়ের ফুল’, ‘আমি তোমারি’, ‘ভালোবাসি তোমাকে’, ‘নারীর মন’, ‘এ বাঁধন যাবে না ছিঁড়ে’, ‘নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি’, ‘এ মন চায় যে’, ‘ফুল নেবো না অশ্রু নেব’, ‘দিল তো পাগল’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘শ্বশুর বাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ’, ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, ‘ভালোবাসা কারে কয়’, ‘সুন্দরী বধু’, ‘দুই বধূ এক স্বামী’, ‘নসিমন’, ‘ব্যাচেলর’, ‘ফুলের মত বউ’, ‘চার সতীনের ঘর’, ‘দুই নয়নের আলো’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘নিরন্তর, ‘আমার প্রাণের স্বামী’ ইত্যাদি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *