বিষাদের ২০ বিদায়, স্বাগতম ২১

চারণ সংবাদ জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী: সব বিদায়ের সঙ্গেই লুকিয়ে আছে আনন্দ-বেদনার কাব্য। ২০২০ বছর বিদায়ের ক্ষণেও সেই একই কথা বাজবে সবার অন্তরে। আজ রাত ১২টা পেরোলেই শুরু হবে নতুন খ্রিস্টীয় বছর ২০২১। আর ভোরবেলাতেই উদয় হবে নতুন বছরের নতুন সূর্য।

আজকের সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে আরেকটি খ্রিস্টীয় বছর ২০২০ বিদায় নিলো। বছরটি পৃথিবীকে দিয়েছে মহামারীর তাণ্ডব, মৃত্যুর মিছিল, কর্মহারা জীবন ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। এ পরিস্থিতির মধ্যেই রাত পেরিয়ে ভোরের সূর্য পৃথিবীর বুকে নিয়ে আসবে আরেকটি নতুন বছর। আর নতুন বছর নিয়ে মানুষ আশায় বুক বাঁধবে। করোনামুক্ত ঝলমলে একটি বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় নিয়ে পথচলা শুরু করবে।

আমাদের জীবনের সব কর্মকাণ্ড ইংরেজি সালের গণনায় হয়, তাই খ্রিস্টীয় বছর বিশেষ গুরুত্ববাহী। সেই বিবেচনায় বিদায়ী বছরটা কেমন গেল তার হিসাব কষবেন সবাই। ভালো-মন্দ, আনন্দ-বেদনার স্মৃতিগুলো আরও একবার রোমন্থন করবেন। একইভাবে জীবনের সব ধরনের নেতিবাচক বিষয়গুলোকে দূরে ঠেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় নতুন করে পথচলার প্রত্যয় ব্যক্ত করবেন।২০২০ সালটি ছিল গতানুগতিক। রাজনীতি ছিল অচঞ্চল।

দুর্নীতি দমন, মাদক নিয়ন্ত্রণ, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান, সড়ক দুর্ঘটনা কমানো, ঢাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন, দূষণ কমানো—কোনো ক্ষেত্রেই বলার মতো সাফল্যের উদাহরণ নেই।

তার ওপর করোনাকালে ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সম্পত্তি দখল ও গবাদিপশু চুরির মতো অপরাধ বেড়েছে। বেড়েছে নারী নির্যাতন, বিবাহবিচ্ছেদ।

এ বছর উল্যেখযোগ্য যে সব আলেমদের আমরা হারিয়েছি।
১। আল্লামা শাহ আহমাদ শফি রহিমাহুল্লাহ। ইন্তিকালঃ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ইং।

২। শায়খুল হাদিস আল্লামা আশরাফ আলী (রাহ.), কুমিল্লা। ইন্তেকাল: ৩১-১২-২০১৯ইং।

২। শায়খুল হাদিস আল্লামা হাফিজ তাফাজ্জুল হক শায়খে হবিগঞ্জী (রাহ.)। ইন্তেকাল: ০৫-০১-২০২০ইং।

৩। শায়খুল হাদিস আল্লামা আজহার আলী আনোয়ার শাহ কিশোরগন্জী (রাহ.)। ইন্তেকাল: ২৭-০১-২০২০ইং।

৪। শায়খুল হাদীস আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী রহিমাহুল্লাহ। ইন্তেকাল : ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ইং।

৫। শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুল হাই বংশিবপাশা (রাহ.)। ইন্তেকাল: ২৮-০৩-২০২০ ইম

৬। খলিফায়ে মাদানী সদরে জমিয়ত শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুল মুমিন শায়খে ইমামবাড়ী (রাহ.)। ইন্তেকাল: ০৮-০৪-২০২০ইং।

৭। পীরে কামেল আল্লামা সৈয়দ মুজিবুর রহমান পেশওয়ারী (রাহ.) । ইন্তেকাল: ১৪-০৪-২০২০ইং।

৮। বিশ্ব বিখ্যাত দাঈ, তাবলীগ জামাত ইউরোপের জিম্মাদার, বিমান ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মুকিত সাহেব (রাহ)। ইন্তেকাল: ১১-০৪-২০২০ইং।

৯। আল্লামা মুফতী আব্দুর রহীম বুখারী (রাহ), (পটিয়া মাদ্রাসার বুখারী সাহেব হুজুরের মেঝ ভাই)। ইন্তেকাল: ১৬-০৪-২০২০ ইং

১০। বিশ্বনদিত মুফাচ্ছিরে কোরআন শায়খুল হাদিস আল্লামা হাফিজ যুবায়ের আহমদ আনসারী (রাহ.)। ইন্তেকাল: ১৭-০৪-২০২০ইং।

আরও যেসব উল্যেখযোগ্য ঘটনা ছিলো ২০২০ সালে :
করোনার মধ্যে মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত করে। জুন থেকে শুরু হয় দীর্ঘস্থায়ী বন্যা। নারায়ণগঞ্জে মসজিদে আগুনে ৩৪ জন, মুন্সিগঞ্জে লঞ্চডুবিতে ৩২ জন, নেত্রকোনার হাওরে ট্রলারডুবিতে ১৭ জন, জয়পুরহাটে রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় ১২ জন—করোনার বাইরেও মৃত্যুর মিছিল ছিল বছরজুড়ে।

চাল, পেঁয়াজ, আলু ও সবজির দামের কশাঘাত সইতে হয়েছে প্রায় সারা বছর। বিদ্যুৎ ও পানির মূল্যবৃদ্ধি এবং ভুতুড়ে বিল মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়েছে।

দেশে গত ৯ মাসে করোনাভাইরাসে মারা গেছেন সাড়ে ৭ হাজারের বেশি মানুষ। আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখের বেশি। বিশ্বের ২১ দেশে করোনায় মারা যান আরও ২ হাজার ৩৩০ বাংলাদেশি।

৮ মার্চ প্রথম দেশে করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ আক্রান্ত তিন রোগী শনাক্ত হন। ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়।

১৮ মার্চ করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। পরদিন দেশের মানুষ প্রথম ‘লকডাউন’ দেখতে পায় মাদারীপুরের শিবচরে। ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় সাধারণ ছুটি, শেষ হয় ৩০ মে। গণপরিবহন চলাচল শুরু হয় ১ জুন। ৬৬ দিন পর সচল হয় ঢাকা।

তবে কোয়ারেন্টিন বা বিচ্ছিন্ন থাকা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা, জীবাণুনাশকের ব্যবহার, বাসায় থেকে কাজ (হোম অফিস)—এগুলো নতুন স্বাভাবিক জীবনের অংশ হয়ে যায়। জীবাণুনাশক ও সুরক্ষাসামগ্রী কিনতে বাড়তি ব্যয় করতে হয় মানুষকে।

করোনার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এমন কোনো জয়াগা নেই যেখানে করোনার প্রভাব পড়েনি। কর্মহীন হয়েছেন দেশের অনেক মানুষ। অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে বড় বড় শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। করোনায় বড় ক্ষতি হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থায়। পুরোটা বছরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। গুরুত্বপূর্ণ এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি। নিচের ক্লাসেও পরীক্ষা ছাড়াই অটো প্রমোশনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

করোনার শুরুর হওয়ার পরপরই বিপুলসংখ্যক প্রবাসী দেশে চলে আসেন। এদের বড় একটি অংশ সৌদি প্রবাসী। এরাই পরে সৌদি ফিরতে গিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে যান। এ কারণে রাজধানীতে তারা ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হলে ফ্লাইট চালু করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সবার ফেরা নিয়ে জটিলতা না কাটলে রাস্তায় নামেন তারা। সেই অনিশ্চয়তা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। করোনার এ সময়ে সরকার নানাভাবে প্রণোদনা দিয়ে, সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রেখে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি সচল রেখেছে। প্রণোদনা কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে।

বিশ্ব পরিমণ্ডলে ২০২০ সালের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল আমেরিকার নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে জো বাইডেনের নির্বাচিত হওয়া। করোনায় বিশ্বের স্থবির হয়ে যাওয়া, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের আক্রান্ত হওয়া ও মারা যাওয়া।

বিষাদ ভুলে নতুন বছরের এই নতুন সময়ে স্বদেশবাণী ডটকমের পক্ষ থেকে সকল পাঠক এবং শুভানুধ্যায়ীদের জানাই আন্তরিক সম্ভাষণ।

 

স্ব:বা/না

 

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *